ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আকিজের সিগারেট ব্যবসা কিনে নিল জাপান টোব্যাকো

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৯ আগস্ট ২০১৮

আকিজের সিগারেট ব্যবসা কিনে নিল জাপান টোব্যাকো

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বর্তমানে বাংলাদেশে ধূমপানকারীর সংখ্যা এক কোটি ৮০ লাখ। সেই সঙ্গে এর সংখ্যা বাড়ছেই। অন্যদিকে জাপানের বৃহত্তম এবং বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সিগারেট নির্মাতা জাপান টোব্যাকো ঘোষণা করেছে ১৫০ কোটি ডলার (১২,৪০০ কোটি টাকা) দিয়ে তারা বাংলাদেশের আকিজ গ্রুপের সিগারেট তৈরির সব ব্যবসা কিনে নিচ্ছে। এ বিষয়ে গত ৬ আগস্ট দুই কোম্পানির মধ্যে এই চুক্তিও সই হয়ে গেছে। জাপানী এই সিগারেট কোম্পানির এই বিনিয়োগ হবে এ যাবতকালের মধ্যে বাংলাদেশের বেসরকারী খাতে একক বৃহত্তম বিদেশী বিনিয়োগ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, জাপানের টোব্যাকো জায়ান্ট কেন এত টাকা বাংলাদেশের বাজারে ঢালছে? ঢাকার গবেষণা সংস্থা হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টারের (এইচ ডিআরসি) অর্থনীতিবিদ আসমার ওসমান বলেন, বাংলাদেশে ধূমপায়ীর যে সংখ্যা, সিগারেটের যে বিশাল বাজার এবং ধূমপান নিরুৎসাহে সরকারের যে অনীহা তাতে এই খাতে বিদেশী বিনিয়োগের আগ্রহে অবাক হওয়ার কোন কারণ নেই। এইচডিআরসি ২০১৫ সালে বাংলাদেশের ‘তামাক শিল্প এবং কর’ নিয়ে একটি গবেষণা করার সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সরকারী বিভিন্ন পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে একটি সমীক্ষা করেছিল। সেই সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ২৮ শতাংশেরও বেশি এবং সর্বনি¤œ ২১ শতাংশ পুরুষ ধূমপান করে। পাশাপাশি, ২০০৭ সালের এক পরিসংখ্যান বলছে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী কিশোরদের কমপক্ষে দুই শতাংশ ধূমপান করে। ওসমান আরও বলেন, ‘আপনি বলতে পারেন দেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমবেশি এক কোটি ৮০ লাখ, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ৪২ শতাংশই ধূমপায়ী।’ সেই হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশে সিগারেটের বাজার কমপক্ষে ২০,০০০ কোটি টাকার এবং তা ক্রমাগত বাড়ছে। ‘ধূমপান বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মানুষের আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রচুর নিম্ন আয়ের মানুষ বিড়ি ছেড়ে সিগারেট ধরছে।’ জাপান টোব্যাকো নিজেরাই এক বিবৃতিতে বলছে, বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম সিগারেটের বাজার এবং এই বাজার প্রতি বছর দুই শতাংশ করে বাড়ছে। ‘সুতরাং সিগারেট খাতে মুনাফার এমন সুযোগ এবং সম্ভাবনা পৃথিবীর খুব কম দেশেই রয়েছে বলছেন অর্থনীতিবিদ আসমান ওসমান। বিশ্বের বহু দেশে বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে যখন স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে ধূমপায়ীর সংখ্যা ক্রমাগত কমছে, সেখানে বাংলাদেশে তা বাড়ছে কেন? এ প্রশ্নে ওসমান বলেন, ধূমপান নিরুৎসাহিত করার বিষয়ে সরকারগুলোর নিরুৎসাহ প্রধান কারণ। আপনি যদি ভিয়েতনাম বা ফিলিপাইনের মতো দেশের সঙ্গে তুলনা করেন তাহলেও বাংলাদেশে সিগারেটের দাম অনেক কম। রাজস্ব আয় কমার আশঙ্কায় সিগারেট খাতে কর-কাঠামোতে বড় কোন পরিবর্তন আনতে সরকার একেবারেই আগ্রহী নয়। খোদ জাপানেই ধূমপানের ওপর বিধিনিষেধ দিন দিন বাড়ছে। ফলে জাপান টোব্যাকো নজর দিচ্ছে বাইরের দেশে। সিগারেট থেকে বাংলাদেশে সরকারের রাজস্ব আয় কমবেশি ১৫,০০০ কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের একক বৃহত্তম খাত এটি। দামী ব্রান্ডের সিগারেটে করের হার বাড়লেও, অল্প দামের সিগারেটের ওপর কর তেমন বাড়ানো হয় না। আর সে কারণে সিগারেট এমনকী কম আয়ের লোকজনেরও ক্রয়ক্ষমতার ভেতরেই রয়ে গেছে। এ ছাড়াও ওসমান বলেন, পুরো প্যাকেটের বদলে একটি-দুটি করে খুচরা সিগারেট কেনার সুযোগ বাংলাদেশে রয়েছে যেটি চাহিদা বাড়ার পেছনে আরেকটি বড় কারণ। পৃথিবীর খুব কম দেশে প্যাকেট ভেঙ্গে সিগারেট বিক্রির এই সুবিধা রয়েছে।
×