ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ সড়কের প্রত্যাশায়

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৯ আগস্ট ২০১৮

নিরাপদ সড়কের প্রত্যাশায়

বাংলাদেশের সামগ্রিক ট্রাফিক ও এর ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে লিখতে গেলে ছোটখাটো এক পুস্তিকা হবে। তবু দু-চারটি ব্যাপারে এখানে লিখছি তা হলোÑ (ক) ট্রাফিক আইন আছে, প্রয়োগ অতি নগণ্য (খ) শুনেছি বিশেষ ক্ষেত্র ফিটনেসের জন্য গাড়ি না গেলেও চলে পরিবর্তে টাকা গেলেই চলে (গ) ট্রাফিক পুলিশ ও বিভাগের শিথিলতা বা সম্ভবত অজ্ঞতা (ঘ) সরকারী, পুলিশ বিভাগ ও ইউনিভার্সিটির গাড়িগুলোর আইন না মানা ও সবার আগে যাবার প্রবণতা (ঙ) গ্রাম থেকে আগত লাখ লাখ রিক্সাওয়ালা ইচ্ছামাফিক রিক্সা চালানো (চ) লাখ লাখ বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালকের আইন না মেনে অনর্গল তীব্র হর্ন বাজিয়ে উল্টা-পাল্টা, আথালি-পাথালি মোটরবাইক চালানো (ছ) গাড়ির লাইসেন্সবিহীন, রুট পারমিট ছাড়া, টুকাই মার্কা ও দাড়ি মোছ না গজানো ড্রাইডিং লাইসেন্সবিহীন চালক দ্বারা লেগুনা যে কোন রাস্তা বা লেন-বাইলেন দিয়ে বেপরোয়াভাবে চালানো ইত্যাদি। ঢাকা শহর তথা বাংলাদেশের সর্বত্র সিংহ ভাগ ড্রাইভার ট্রাফিক আইন মানে না- এটা হয় ইচ্ছাকৃত না হয় অজ্ঞতা। ঢাকা শহরে বা অন্যান্য শহরেও রাস্তায় ৪-৫টা বাস বা লেগুনা পাশাপাশি রাস্তা ব্লক-করে যাত্রী উঠাবার জন্য পুলিশের সামনেই দাঁড়িয়ে পেছন থেকে আগত ট্রাফিককে বাধাগ্রস্ত করে রাখে। অথচ কাছে থাকা পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করে। আমি মোহাম্মদপুর থাকি বলে এলাকার দুটো উদাহরণ দিচ্ছি (১) সারকুলার রোর্ডের জাপান-গার্ডেনে অবস্থিত টোকিও স্কয়ার মার্কেটের সামনে রাস্তায় (২) সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের সামনে মিরপুরে যাবার রাস্তায় ওভারব্রিজের দক্ষিণ পাশে (৩) মিরপুর ২নং ব্লকের ওভারব্রিজের সামনে। আমি মোহাম্মদপুর তাজমহল রোডের বাসিন্দা এখানকার কিছু বাস্তব ঘটনার কথা বলতে চাই। তাজমহল মেইন রোড দিয়ে পশ্চিমের ৩০-৪০টা পাবলিক আবাসিক এলাকার যাবতীয় গাড়ি ও হাজারো রিক্সা চলাচল করে। অধিকন্তু প্রায় তিন বাড়ি পর পর বাই-লেন থাকা রাস্তা থেকে অনর্গল গাড়ি ও হাজার রিক্সা ঢুকতে থাকে। গাড়িগুলো আধা মাথা মেইন রাস্তায় ঢুকিয়ে ও রিক্সাগুলো প্রথম চাকাটি দু’গাড়ি মাঝে ঢুকায়ে মেইন রোড চালিত গাড়ি বা রিক্সাগুলোকে ব্লক করে দেয়। এটা ট্রাফিক রুলের পরিপন্থী, আবার রাস্তায় ২-৪ জায়গায় অস্থায়ী ডিভাইডার দেয়া আছে। এই ডিভাইডারগুলোর ডানপাশ দিয়ে অহরহ মোটরসাইকেল ও রিক্সা ঢুকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। দুঃখের বিষয় হলোÑ এগুলো দেখার কেউ নেই। আমি জানি ঢাকার অন্যান্য এরূপ স্থানের অবস্থাও অনুরূপ। বড় বড় রাস্তাগুলোতে সিগনাল লাইট জ্বলতে থাকলেও পুলিশ হাত উঠিয়ে ট্রাফিক কন্ট্রোল করে। এসব জায়গায় ৫-১৫ মিনিট পরপর গাড়ি পার হতে দেয়া হয় ফলে ১-২ মাইল পর্যন্ত লম্বা লাইন হয়ে যায়। ফলস্বরূপ আগে কে যাবে একটা প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। যেহেতু ট্রাফিক সিগনাল লাইট অনবরত : লাল-সবুজ বাতি জ্বলতে থাকে। মজার ব্যাপার হলো প্রায়ই যখন লাল সিগনাল দেখায় তখন হাতে আটকে দেয়া গাড়িগুলোকে যেতে দেয়া হয়! মিরপুর রোড ২-৩ বছর আগে পিক আওয়ারে রিক্সা, ঠেলা গাড়ি ইত্যাদি যেতে দেয়া হতো না। বর্তমানে সে ব্যবস্থা কেন উঠে গেল- তা কারও জানা নেই। আমি ১৯৫৪ সাল থেকে ঢাকায় বসবাস করে আসছি। সে সময় লাইসেন্সবিহীন রিক্সা বা রিক্সা চালক রাস্তায় রিক্সা চালাতে পারত না। কেননা রিক্সা ড্রাইভারের হাতে পিতলে লেখা লাইসেন্স বাঁধার বাধ্যবাধকতা ছিল। এখন সে সব ব্যবস্থা উঠিয়ে দিয়ে লাখ লাখ অজ্ঞ গ্রামে থাকা ক্ষেত খামারে কাজ করা লোকদের ঢাকা বা অন্যান্য শহরে আনা হয়েছে। তাতে কৃষি জমিতে কাজ করার কোন লোক বা মজুর পাওয়া যাচ্ছে না। প্রথমে দেয়া ৬টি কারণ শুধরাতে পারলে ট্রাফিক ব্যবস্থার কিছুটা হলেও উন্নতি হতে পারে এবং দুর্ঘটনা এড়াতে পারা যাবে। মোহাম্মদপুর, ঢাকা থেকে
×