ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মৃত্যুদানব!

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ৯ আগস্ট ২০১৮

মৃত্যুদানব!

রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি সড়ক-মহাসড়ক অবৈধ চালক আর ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের কব্জায়। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন আর অবৈধ চালক উভয়েই মৃত্যুদানবে পরিণত হয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের অবৈধ চালকের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে যেন মৃত্যুর লাইসেন্স। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটালে স্বল্প শাস্তি ব্যবস্থা বলবৎ থাকায় যাত্রীর জীবন নিয়ে হলি খেলায় মেতে উঠেছে অবৈধ চালকের অবৈধ প্রতিযোগিতা। অবৈধ চালকের অদক্ষ যান চালনার কারণে প্রতিনিয়ত সড়ক-মহাসড়কে ঝরে পড়ছে তাজাপ্রাণ। কর্মস্থল থেকে নিরাপদে গৃহে ফিরে যাবার বদলে যাত্রীরা নিজেদের প্রাণ হারানোর শঙ্কায় বিহ্বল। ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনে চলাচলরত যাত্রীরা না পায় জীবনের নিরাপত্তা আর না পায় নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা। বেসরকারী এক হিসাব মতে সারাদেশে চালকের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। এর মধ্যে বিআরটিএর লাইসেন্সপ্রাপ্ত মাত্র ২০ লাখের চেয়ে নিচে। আর অন্যান্য ৫০ লাখ অদক্ষ ও অবৈধ চালক লাইসেন্সবিহীনভাবে মৃত্যুর মিছিলে সহযোগিতা করছে। কোনভাবেই সড়ক-মহাসড়কে থামানো যাচ্ছে না দুর্ঘটনা। বলতে গেলে দেশের সকল মানুষই অবৈধ চালক ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের কারণে আজ অনিরাপদ। কলেজ শিক্ষার্থী দিয়া ও করিমের মৃত্যুই প্রমাণ করে যে শুধুমাত্র যানবাহনে চলাচলকারী মানুষই অবৈধ ও ত্রুটিপূর্ণ যান থেকে অনিরাপদ নয়। বরং রাস্তার পাশে দাঁড়ানো লোকজনও আজ অনিরাপদ। দিয়া ও করিমের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিন যোগ হচ্ছে সাধারণ মানুষ। দিয়া ও করিমের মৃত্যু দেখিয়ে দিয়েছে দেশের সড়ক পরিবহনের বাস্তব চিত্র। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসেবে বাংলাদেশে যানবাহন চলছে ৪০ লাখের বেশি। ৪০ লক্ষাধিক যানবাহন রাস্তায় চলাচল করতে প্রতিটি গাড়ির জন্য একের অধিক চালক প্রয়োজন। সেই হিসেবে ৪০ লাখ যানবাহনের জন্য ৮০ লাখ চালক প্রয়োজন। কিন্তু বৈধ চালক রয়েছে মাত্র ২০ লাখের নিচে। তাহলে সহজভাবে বলা যায় আর ৩০ লাখ যানবাহন কারা চালায়? সহজে উত্তর আসে- সড়কে গাড়ি চালাচ্ছে হেলপাররা। যারা কোন প্রকার দক্ষতা অর্জন ও লাইসেন্স না পেয়েই গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে বসে আসে। আর এই হেলপারদের বেশির ভাগের বয়সই প্রায় ১৫ থেকে ১৮ মধ্যে। কিন্তু আইনানুযায়ী একজন ব্যক্তিকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর। এসব অনিয়ম দেখার যথাযথ কর্তৃপক্ষ রয়েছে। কিন্তু কেন যেন সবাই নির্বিকার। দিয়া ও করিমের অপমৃত্যুতে শিক্ষার্থীরাই যেন সেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিল। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই গাড়ি ও চালকের লাইসেন্স দেখেছে এবং অবৈধ যান ও চালককে নিয়ে এসেছে আইনের আওতায়। অবশ্যই ভাল একটি লক্ষণ। যা যথাযথ কর্তৃপক্ষ পারেনি তা শিক্ষার্থীরাই দেখিয়ে দিয়েছে। চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ১ ডিসেম্বর ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নামক আন্দোলনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার মধ্য দিয়ে মানুষের সড়কপথে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতকরণে কাজ করে যাচ্ছেন। ফলে অনেকের মধ্যে সচেতনতা গড়ে উঠেছে। তবে আরও সচেতনতা গড়ে ওঠা জরুরী ছিল। নিরাপদ সড়ক বিনির্মাণে অবৈধ চালক ও ত্রুটিপূর্ণ যান প্রত্যাহারের বিকল্প নেই। কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই ড্রাইভিং লাইসেন্স দেবার পূর্বে প্রার্থীকে যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিতে হবে। শুধুমাত্র টাকার বদৌলতে যেন অবৈধ চালক ও ত্রুটিপূর্ণ যানগুলো ছাড়া না পেয়ে যায়। অন্যদিকে সরকারের যথাযথ সাহায্য-সহযোগিতা অবৈধ চালক ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন নিরসনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বনানী, ঢাকা থেকে
×