ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ অবৈধ চালক, ত্রুটিপূর্ণ যান

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৯ আগস্ট ২০১৮

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ অবৈধ চালক, ত্রুটিপূর্ণ যান

দেশে গণপরিবহনে নানা প্রতিবেদনে উঠে আসছে কম সংখ্যক চালকেরই ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে। অব্যাহত গতিতে প্রতিদিন সারাদেশে আনাড়ী অশিক্ষিত চালকের কারণে মৃত্যু হচ্ছে অসংখ্য মূল্যবান জীবনের। দেশের কোথাও না কোথাও প্রতিদিন মূল্যবান জীবন নষ্ট হচ্ছে, অথবা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। জাতীয় ও স্থানীয় প্রচার মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, ড্রাইভার হেল্পার পরিবহন মালিকদের নিয়ে নানা প্রবন্ধ নিবন্ধ লেখালেখি অব্যাহত আছে। সমাজের বিভিন্ন পেশাজীবী রাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও এ সেক্টর নিয়ে নানা বক্তব্য উঠে আসে। উচ্ছৃঙ্খল, অব্যবস্থাপনায় ভরপুর এ সেক্টর সেবার নামে যাত্রীদের হয়রানি ও ভোগান্তির জন্য দায়ী। মালিক শ্রমিক ও একশ্রেণীর বাহিনী এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। তাদের আচার ব্যবহারের মধ্যে কোন ধরনের শালীনতা ভদ্রতা রুচি দেখা যায় না। সেবার নামে অর্থ হাতিয়ে নেয়াই তাদের মূল উদ্দেশ্য। যুগ যুগ ধরে বেশিরভাগ গণপরিবহনের ইঞ্জিন ও বডি ব্যবহার করে থাকে। এসব পরিবহনের কোন নির্দিষ্ট মেয়াদ অনুসরণ করে না। বছরে বছরে বড়ির কালার পাল্টিয়ে নতুন নতুন আকর্ষণীয় নাম ব্যবহার করে রাস্তায় নামিয়ে দেয়। অনেক গাড়ির ফিটনেস, লাইসেন্স নেই। ট্রাফিক পুলিশের টোকেন দিয়ে এসব গণপরিবহন রাস্তায় চলে। বেশিরভাগ পরিবহনের বিআরটিএর বৈধ কাগজপত্র নেই। তাহলে এতগুলো অনিয়মের মধ্যে কী করে এসব পরিবহন রাস্তায় চলে সেটাই জনগণের প্রশ্ন। কারণ ড্রাইভার হেল্পার মালিক সমিতির কর্মচারী। মালিক সমিতির সঙ্গে প্রশাসনের একটি অংশের সঙ্গে যোগাযোগ। প্রশাসনের সাপোর্টে এসব গাড়ি রাস্তায় নির্বিঘেœ চলাচল করে। কোন বৈধ কাগজপত্র না থাকলেও পুলিশ প্রশাসন বিশেষ করে ট্রাফিক পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। কারণ তারা নিয়মিতভাবে পুলিশ প্রশাসনকে বড় অঙ্কের অর্থ প্রদান করে থাকে। এ সুবাদে পরিবহন সেক্টরের মালিক শ্রমিক সবাই রাস্তার জন্য স্বাধীন। অর্থ দিয়ে তাদের সমস্ত অবৈধতাকে বৈধ করে রাস্তার স¤্রাট হিসেবে চলে। সম্প্রতি কলেজ শিক্ষার্থী দিয়া ও করিমের মতো কোন অপমৃত্যু হলে সমাজ একটু নড়েচড়ে বসে। আন্দোলনের মুখে প্রশাসনও তখন নানা ধরনের মুখরোচক বক্তব্য নিয়ে আন্দোলনকারীদের শান্ত করতে কৌশলী হয়। এভাবে যুগ যুগ ধরে রোড এক্সিডেন্ট অথবা অপমৃত্যু হলেও বাস্তবে এর কোন সুরাহা জনগণ দেখছে না। কারণ পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে দেশের বড় বড় রাঘব বোয়ালরা জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট দফতরসমূহ অপারগ বলে মনে হয়। গণপরিবহন সেক্টর ছাড়া আমজনতার চলা কঠিন। এ সুবাদে পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যারা তারা যেভাবে খুশি সেভাবেই চলছে। ইচ্ছেমতো ভাড়া বৃদ্ধি, মন চাইলে গাড়ি চালাবো না হয় বন্ধ রাখব। তাদের ইচ্ছে ও খুশিতে পরিবহন সেক্টর চলে আসছে।অপমৃত্যু ও দুর্ঘটনার জন্য যে পরিমাণ শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের বিধান বর্তমান বিদ্যমান আছে এ আইনকে এ সেক্টরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়। দেশের জনগণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তাদের হাতে জিম্মি। এ জিম্মি দশা থেকে অবশ্যই দেশের জনগণকে মুক্তি দিতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া পরিবহন রাস্তায় চালানো বন্ধ করতে হবে। অবৈধ ড্রাইভার ত্রুটিপূর্ণ পরিবহন নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। ট্রাফিক পুলিশ ও বিআরটিকে পরিবহন সেক্টরের শৃঙ্খলা রক্ষার তাদের ওপর অর্পিত রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের প্রত্যাশা রাখে জনগণ। সিটিগেট, চট্টগ্রাম থেকে
×