ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৯ আগস্ট ২০১৮

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদিত হয়েছে। অতঃপর সঙ্গত কারণেই আশা করা যায় যে, সংসদের আগামী অধিবেশনে এটি উত্থাপিত হবে এবং সর্বসম্মতভাবে পাস হয়ে পরিণত হবে আইনে। অনুমোদিত খসড়া সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮তে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তি তথা চালকের সর্বোচ্চ পাঁচ বছর সশ্রম কারাদ-সহ অর্থদ- অথবা উভয়দ-ের বিধান রাখা হয়েছে। আইনে পরিবহন মালিককেও দায়বদ্ধতার আওতায় আনা হয়েছে। তা ছাড়া দুর্ঘটনাকবলিত যানবাহন ও চালক-হেলপারের ওপর হামলা করা যাবে না বলেও বিধান রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি চালকের শিক্ষাগত যোগ্যতা রাখা হয়েছে ৮ম শ্রেণী পাস, যা এতদিন ছিল না। আইনে কতিপয় ধারায় সংঘটিত অপরাধ অজামিনযোগ্য রাখা হয়েছে। তদুপরি হত্যার উদ্দেশ্যে গাড়ি চালানো হয়েছে বলে যদি প্রতীয়মান হয় সেক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী দ-বিধির ৩০২ ধারায় মামলা করা যাবে বলেও বলা হয়েছে, যাতে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান রয়েছে। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, প্রস্তাবিত আইনে পরিবহন খাতের ‘দানব’ সামলানোর পদক্ষেপ নেয়া যাবে। সড়কের নিরাপত্তা তথা দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রাখা প্রয়োজন। পুলিশ কর্তৃক দুর্ঘটনার তদন্ত যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয় তা নিশ্চিত করা জরুরী। যানবাহন মালিক ও চালকদের সতর্ক থাকা অত্যাবশ্যক। দেশের নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে যাত্রী কল্যাণে নিয়োজিত বিভিন্ন সংগঠনের নেতাসহ সুশীল সমাজের দাবি ছিল সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। তাই জরিমানাসহ ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রাখা বাঞ্ছনীয়। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ সংগঠনের তথ্যমতে দেশে প্রতি হাজার যানবাহনে নিহতের সংখ্যা বছরে ১৬৯ জন। অথচ অত্যধিক যানবাহনের দেশ জাপানে এই মৃত্যুর হার মাত্র দু’জন। শুধু ট্রাফিক আইনকানুন কঠোরভাবে মানার কারণেই জাপানে দুর্ঘটনার হার অবিশ্বাস্যভাবে কম। এর বিপরীতে বাংলাদেশে বিরাজ করছে এক নৈরাজ্যজনক অবস্থা। এখানে সারাদেশে তো বলাই বাহুল্য, এমনকি রাজধানীতেও প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে চলে ট্রাফিক আইন ভাঙ্গার প্রতিযোগিতা। সড়ক দুর্ঘটনার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১৩তম। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ৭ম। কোন কোন আন্তর্জাতিক সংস্থার মতে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। সে অবস্থায় এ রকম একটি আইনÑ চালকরা আর বেপরোয়া হবে না এবং বাড়বে না সড়ক দুর্ঘটনা। প্রস্তাবিত আইনটি জনমতের প্রতিফলন বলা যায়। সত্য বটে, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য কেবল ড্রাইভারই দায়ী নয়, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, ভুল সিগন্যাল, অসতর্ক যাত্রী-পথচারী, সড়কের পাশে হাটাবাজার ইত্যাদিও কম দায়ী নয়। প্রশিক্ষিত-সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন চালকেরও অভাব প্রকট। বিআরটিএসহ ট্রাফিক বিভাগের অব্যবস্থা, ঘুষ-দুর্নীতিও এর জন্য দায়ী অনেকাংশে। সভ্য ও উন্নত হতে হলে এ সব বাধা আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে পর্যায়ক্রমে। তবু সড়ক দুর্ঘটনার জন্য চালককেই প্রাথমিকভাবে দায়ী বলে চিহ্নিত করা হয়। আর সতর্ক ও সাবধান হলে সড়ক দুর্ঘটনার হার এমনিতেই কমে আসবে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, দেশে বর্তমানে যানবাহনের তুলনায় দক্ষ চালকের অভাব প্রকট। ৮ম শ্রেণী পাস ড্রাইভার এবং ৫ম শ্রেণী পাস হেলপার পাওয়া তো আরও দুঃসাধ্য। রাজধানীতে অনেক কিশোর বয়সী চালকের সন্ধান মেলে। তাদের পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে নৈশ বিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষার পাশাপাশি তৈরি করতে হবে পেশাদার দক্ষ চালক। তাদের নিজেদেরও মানবিকবোধসম্পন্ন হতে হবে। তাহলেই তৈরি হবে দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন চালক। কমবে সড়ক দুর্ঘটনা।
×