ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

‘বঙ্গবন্ধু : কারাগারের রোজনামচা ও অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ নিয়ে সেমিনার

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৯ আগস্ট ২০১৮

‘বঙ্গবন্ধু : কারাগারের রোজনামচা ও অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ নিয়ে সেমিনার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘বঙ্গবন্ধু: কারাগারের রোজনামচা ও অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থ সম্পর্কে সেমিনার হয় জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বুধবার বিকেলে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৩তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে জাদুঘর আয়োজিত সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সামাদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি শিল্পী হাশেম খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আনিসুজ্জামান বলেন, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ যখন প্রকাশ হয় তার পর অনেক প্রবাসী বাঙালী, যাদের অনেকে বইটি চোখেও দেখেনি, বলেছেন-এ বই নিজেরাই লিখছেন, নিজেরাই প্রশংসা করছেন। অর্থাৎ তাদের ধারণা বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে কেউ এই বই লিখেছেন। তারা যদি সত্যিই এই বই পড়তেন, তাহলে এমন মন্তব্য করতে পারতেন না। বঙ্গবন্ধুর লেখা বই দুইটিতে বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠস্বর অবিকল শোনা যায়। তিনি যেভাবে সাধু-চলিত মিশেলে, আঞ্চলিক শব্দের ব্যবহার করতেন; বইতে ঠিক সেভাবেই লেখা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু অল্প বয়সে গ্রামের এক মারামারিতে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। তাকে গ্রেফতার করার জন্য পুলিশ পাঠানোর কথা জানা গেল। পরিচিত দু’একজন তাকে লুকিয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বললেন- ‘আমি পালাবো না’। এই তার প্রথম হাজতবাস। যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রী ছিলেন তিনি। মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে যখন কেন্দ্রের শাসন শুরু হলো, আবার তাকে গ্রেফতার করার জন্য বাড়িতে পুলিশ আসল। তিনি তখন বাড়িতে ছিলেন না। ফেরার পর যখন তিনি এ ঘটনা জানলেন, তখন তিনি তৎকালীন ডিস্ট্রিক ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াহিয়া খান চৌধুরীকে নিজে ফোন করে বললেন, ‘আমাকে গ্রেফতার করতে আপনি পুলিশ পাঠাতে পারেন’। এ দুইটি ঘটনা থেকে বোঝা যায়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ৩২ নম্বর ছেড়ে তিনি কেন যাননি। তার স্বভাবের মধ্যেই ছিল, আসন্ন বিপদ জেনেও পালিয়ে যাবেন না। তিনি আরও বলেন, এই দুইটি বইয়ের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সব বিষয় সম্বন্ধে ধারণা পাওয়া যায়। তার ভাললাগা, মন্দলাগা, দেশের প্রতি মমতা, রাজনৈতিক চিন্তা, সামাজিক সম্পর্কের বৈচিত্র্য সম্পর্কে জানা যায়। বই দুইটির মধ্য দিয়ে আমরা বঙ্গবন্ধুর জীবনের নতুন দিক আবিষ্কার করি ও শ্রদ্ধায় নত হয়। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাদুঘরের মহাপরিচালক মোঃ আবদুল ইলিয়াস ও যুগ্ম সচিব মোঃ শওকত নবী। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করে ড. সামাদ বলেন, আজ যে দুটি বই সম্পর্কে আলোচনা হচ্ছে এর আগেও এ নিয়ে প্রবন্ধ রচিত হয়েছে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে ২০১২ সালে। বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে শুরু করে ১৯৫০ সালের জানুয়ারির যুক্তফ্রন্টের নেতা হিসেবে শেরই বাংলা একে ফজলুল হকের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু যে অনাস্থা প্রকাশ করেছিলেন তা দিয়ে শেষ হয়েছে। ‘কারাগারের রোজ নামচা’ গ্রন্থটি ১৯৬৬ সালের ২ জুন থেকে শুরু হয়ে ৬৮ সাল পর্যন্ত ঘটনা। এর মধ্যে ৬ দফা ও আগরতলা মামলাও রয়েছে। এটাকে একটা মানবিক দলিল ও বলা যায়। সাধারণ ও গরিব মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর যে ভালবাসা ও প্রেম ছিল, সেই বিষয়গুলো বইটিতে খুবই গুরুত্ব পেয়েছে। দুটি বই আসলে জেলের মধ্যের লেখা। এতে অনেক মজার কথাও রয়েছে। অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, রাজনীতি থেকে শুরু করে শিল্প, সাহিত্য, কৌতুক নানা বিষয় বঙ্গবন্ধুর এ বইয়ে রয়েছে। ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থটি আমাদের জাতির ইতিহাস। এ ইতিহাস যিনি লিখলেন তিনিই এর কেন্দ্রে রয়েছেন। আর তিনি হলেন আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ ইতিহাস জানলে আত্মার কাছে পৌঁছানো যায়। যারা দেশকে ভালবাসেন, বাংলার মানুষকে ভালবাসেন তারা বইটি পড়লে নিজে গৌরবান্বিত হবেন। বঙ্গবন্ধুর বই দুইটি লেখার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শামসুজ্জামান খান বলেন, বঙ্গবন্ধু লিখতেন না, উনি শুধু রাজনীতি করতেন। তার স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা মুজিব তার হাতে লেখার খাতা তুলে দেন। সেই খাতাগুলোতে তিনি যা লিখেছেন সেগুলো ইতোমধ্যেই বই আকারে প্রকাশ পেয়েছে। সামনে আরও তিনটি বই প্রকাশ হতে পারে বলেও তিনি জানান। তেজগাঁও কলেজে ‘অন্তরালে ইতিহাস’ নাটক ॥ পাবনার অষ্টমনীষা গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ ইমরান চৌধুরী ও তার পতœী রাবেয়া চৌধুরী শ্রমের বিনিময়ে রাবেয়া ফাউন্ডেশন ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর মাধ্যমে স্থানীয় লোকের সেবা করে যাচ্ছিলেন তারা। কর্মজীবনের উপান্তে এসে অনুভব করেন, এই হাসপাতালের দায়িত্বে পালা বদলের সময় এসেছে। সেজন্য স্বামী-স্ত্রী দুজনে এক বিশেষ সাক্ষাতকার গ্রহণের মাধ্যমে তাদের সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে তাদের কন্যা নাঈমা আক্তারকে নির্বাচন করেন। কিন্তু ঘটনা দৃষ্টে দেখা যায় এই নাঈমা আক্তার ইমরান চৌধুরী কিংবা রাবেয়া চৌধুরীর সন্তান নন। তিনি একজন যুদ্ধশিশু। এমনই এক কাহিনী নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘অন্তরালে ইতিহাস’ নাটকটি। নাটকের গল্পে অতীত দৃশ্যপটের মাধ্যমে বাঙালীর মহান মুক্তিযুদ্ধ ও অন্তরালের ইতিহাস ভেসে আসে। তেজগাঁও কলেজ থিয়েটার প্রযোজিত এ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয় কলেজ অডিটরিমামে বুধবার সকালে। ‘বজ্রকণ্ঠের শ্রেষ্ঠ নায়ক’ এ্যালবাম ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবকে নিয়ে মিশ্র এ্যালবাম ‘বজ্রকণ্ঠের শ্রেষ্ঠ নায়ক’ প্রকাশ করেছে জি-সিরিজের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান অগ্নিবীণা। এ্যালবামের সব গান লিখেছেন আসমা টগর।
×