ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এমআরপির যুগও শেষ হচ্ছে, আসছে ই-পাসপোর্ট

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৯ আগস্ট ২০১৮

এমআরপির যুগও শেষ হচ্ছে, আসছে ই-পাসপোর্ট

ফিরোজ মান্না ॥ মেশিন রিডেবল পাসপোর্টেরও (এমআরপি) দিন শেষ হচ্ছে। এবার ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্টের (ই-পাসপোর্ট) যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। বিশ্বের ১১৯তম দেশ হিসেবে ই-পাসপোর্টের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশের নাম। পাসপোর্ট অধিদফতর জার্মানির ‘ভেরিডোস জিএমবিএইচ’ কোম্পানির সঙ্গে ৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকার একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এ বছর থেকেই মানুষের হাতে ই-পাসপোর্ট পৌঁছে দেয়া হবে। ই-পাসপোর্ট ‘এ্যাসেম্বলিং’ করার জন্য রাজধানীর উত্তরায় একটি জায়গা নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে যে পাসপোর্ট রয়েছেÑ ই-পাসপোর্টও দেখতে একই রকম। তবে পার্থক্য হচ্ছে নিরাপত্তার। ভেতরে স্থাপিত ‘চিপসে’ থাকবে সব ধরনের তথ্য। যা কোন জালিয়াত চক্র জাল করতে পারবে না। আর এই বহু প্রতীক্ষিত পাসপোর্ট এ বছরের ডিসেম্বরেই মানুষের হাতে পৌঁছাবে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্ট বই। যা ই-পাসপোর্ট নামে পরিচিত। পাসপোর্ট অধিদফতর জানিয়েছে, এই প্রকল্পের আওতায় ইমিগ্রেশন চেকপোস্টগুলোকে স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হবে। এছাড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্টগুলোতে ৫০ ই-গেট স্থাপন করা হবে। ভেরিফিকেশনে ব্যক্তির সব তথ্য সঠিক পাওয়া গেলে ই-গেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে। এই পদ্ধতিতে দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা কার্যকর সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে জার্মান কোম্পানি ভেরিডোস জিএমবিএইচের সঙ্গে চুক্তি মূল্য ৩ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা। কাস্টমস ডিউটি, ভ্যাট, এআইটি এক হাজার ২৪ কোটি। আর প্রকল্প ব্যয় ২০৭ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। সম্প্রতি ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা শীর্ষক প্রকল্পের এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান ও জার্মানির ভেরিডোস জিএমবিএইচ কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কুন্স। এই চুক্তির আওতায় জার্মান কোম্পানি ভেরিডোস তিন কোটি ই-পাসপোর্ট বুকলেট সরবরাহ করবে বাংলাদেশকে। এ লক্ষ্যে উত্তরায় একটি এ্যাসেম্বলিং কারখানা স্থাপন করবে কোম্পানিটি। প্রকল্পটি জি টু জি ভিত্তিতে টার্ন-কি পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করবে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর। বাংলাদেশে ২০০৯ সাল পর্যন্ত হাতে লেখা পাসপোর্ট প্রচলিত। ২০১০ সালে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর থেকে বাংলাদেশে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) দেয়া শুরু হয়। এমআরপিতে বেশ ক’টি নিরাপত্তা সংবলিত তথ্য থাকলেও জালিয়াতির সুযোগ রয়ে গেছে। ফলে জালিয়াত চক্র এমআরপিও জাল করে আসছে। অভিবাসন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও নিরাপদ করতে ই-পাসপোর্ট প্রবর্তন ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার কন্ট্রোল ব্যবস্থাপনা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। পাসপোর্ট অধিদফতর জানিয়েছে, পর্যায়ক্রমে এটি বিদ্যমান মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) জায়গায় প্রতিস্থাপিত হবে। জার্মান সরকারের সঙ্গে জিটুজি চুক্তির আওতায় ই-পাসপোর্ট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ই-পাসপোর্ট ব্যবস্থায় উত্তরণ ঘটলে বাংলাদেশীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঝামেলাবিহীন ভ্রমণ করতে পারবেন। ই-পাসপোর্ট এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে বিদ্যমান বইয়ের সঙ্গে একটি ডিজিটাল পাতা (ডাটা পেজ) জুড়ে দেয়া হবে। ওই ডিজিটাল পাতায় উন্নতমানের মেশিন রিডেবল চিপ বসানো থাকবে। এতে সংরক্ষিত থাকবে পাসপোর্টধারীর সব তথ্য। ডাটা পেজে থাকবে পাসপোর্টধারীর তিন ধরনের ছবি, ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশও। ভ্রমণকালে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ কম্পিউটারের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে পাসপোর্টধারীর সব তথ্য-উপাত্ত জানতে পারবেন। তাছাড়া সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো বিভিন্ন বিমানবন্দরে ভিসা চেকিংয়ের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না। ঝামেলাহীন ই-গেট ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করা যাবে। এছাড়া ই-পাসপোর্টে থাকছে ৪২ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ বছরের গোড়ার দিকে ই-পাসপোর্ট প্রবর্তনের জন্য জার্মান কোম্পানি ভেরিডোস জিএমবিএইচের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়। এরপর দীর্ঘ ৮ মাস ধরে প্রকল্পের নানা দিক নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণের পর চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদ হবে ১০ বছর। জার্মান কোম্পানি ভেরিডোস প্রথম পর্যায়ে ৩ কোটি ই-পাসপোর্ট বুকলেট সরবরাহ করবে। উল্লেখ্য, রাজধানীর উত্তরায় অল্পদিনের মধ্যে একটি ই-পাসপোর্ট বুকলেট তৈরির কারখানা স্থাপন করা হবে।
×