ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গুজব ছড়ানোর দায়ে তিন শিবিরকর্মী ও দুই ছাপাখানা মালিক গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৯ আগস্ট ২০১৮

গুজব ছড়ানোর দায়ে তিন শিবিরকর্মী ও দুই ছাপাখানা মালিক গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে এবং বিভ্রান্তিমূলক বই ছাপিয়ে তা প্রচার করে নিরাপদ সড়ক দাবির আন্দোলনকারীদের নাশকতা চালাতে উস্কে দেয়ার অভিযোগে টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের তিন ছাত্রসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। অপর দুইজন ছাপাখানার মালিক। তারা উগ্র ও বিভ্রান্তিমূলক বইপুস্তক ছাপিয়ে তা প্রচার করে নিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। অন্যদিকে একই আন্দোলনের সূত্রধরে গ্রেফতারকৃত আলোকচিত্রী ও দৃক ফটো গ্যালারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল আলমকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে আবার ডিবি হেফাজতে নেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার র‌্যাব-২ আন্দোলনের সময় গুজব ছড়ানোর দায়ে ধানম-ি থেকে আকতারুজ্জামান টনি (২২), আসাদুল্লাহ আল গালিব (২২) ও মুনইম সরকারকে (২৩) গ্রেফতার করে। র‌্যাব সদর দফতরের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, গ্রেফতারকৃতরা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিবির কর্মী। আন্দোলনের সময় তারা তাদের ব্যবহৃত ব্যক্তিগত মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ফেসবুকের আইডি থেকে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত ও দীর্ঘায়িত করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর জন্য বিভিন্ন রকম স্ট্যাটাস দিয়েছিল। দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর পরই তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সহিত সংহতি প্রকাশ করে ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট ছবি, গুজব, বানোয়াট ভিডিও ছেড়ে দেয়। তারা তিনজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকে। অন্যদিকে র‌্যাব-১০ মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুর থেকে উগ্র ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য সংবলিত বিপুল পুস্তকসহ প্রকাশক ও ছাপাখানার দুই মালিককে গ্রেফতার করেছে। র‌্যাব জানায়, রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার উদ্দেশ্যে এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দিতে সিলেটের একটি ছাপাখানায় গোপনে একটি ছাপিয়ে তা ঢাকায় প্রচার করার জন্য প্রস্তুতি চলছিল। বইয়ের পা-ুলিপি ও ছাপাকৃত বইসহ আবদুর রহমান নূর রাজন ওরফে রাজন বেপারী (৩২) ও মেহেদী আরজান ইভানকে (৩৭) গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা কারাগারে বন্দী একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মিথ্যা তথ্য সংবলিত জবানবন্দী, মামলার এজাহারের অভিযোগ ও অভিযোগপত্র ছাপানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বইতে সুশীল সমাজের কতিপয় ব্যক্তির মন্তব্য সন্নিবেশ করে তা গোপনে প্রকাশ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, তারা মূলত অনলাইন এ্যাকটিভিস্ট ও সাইবার এনালিস্ট। তাদের কাছ থেকে জব্দ হওয়া মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় ফেসবুক ও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে উস্কানির বিভিন্ন পোস্ট পাওয়া গেছে। তারা বইটি বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে ছাপিয়ে আদালত সম্পর্কে মানুষকে বিভ্রান্তিমূলক ধারণা দিতে চেয়েছিল। যাতে আদালতের বিরুদ্ধে গণরোষ সৃষ্টি হয়। এসব বই সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়ে মানুষের মধ্যে সরকার ও আদালতবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করে দেশে অরাজক ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। একই নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে ধারাবাহিকতায় গত ৫ আগস্ট রাতে ধানম-ি থেকে ডিবি পুলিশ শহিদুল আলমকে আটক করে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের করা রমনা থানার মামলায় তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বুধবার আদালতের নির্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তা স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও চিকিৎসা করা হয়। দুপুর দুইটার দিকে আবারও তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে আদালত। একই দিন মামলার শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারিত আছে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে গুজবের জেরে গত ৪ আগস্ট ঢাকা এ্যাটাক চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নিরাপদ সড়ক দাবির আন্দোলনকারীদের নাশকতামূলক কর্মকা-ে উস্কে দেয়ার দায়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল বিভাগের ১৫তম ব্যাচের ছাত্র ছাত্রশিবির কর্মী দাইয়ান প্রধানকে বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে চকবাজার থানা পুলিশ গ্রেফতার করে। চকবাজার থানার ওসি শামীমুর রশিদ তালুকদার জনকণ্ঠকে এমন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, দাইয়ান ঝিগাতলায় চার ছাত্রকে হত্যার পর লাশ গোসল করাতে এবং চার ছাত্রীকে ধর্ষণ করার দৃশ্য দেখেছে বলে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়েছিল। এমন গুজবের জেরেই আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানম-ি কার্যালয় ও ঝিগাতলায় ব্যাপক দাঙ্গাহাঙ্গামার ঘটনা ঘটে।
×