ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবেশ স্থিতিশীল রাখতে না পারলে উপাচার্যকে জবাবদিহি করতে হবে

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৯ আগস্ট ২০১৮

পরিবেশ স্থিতিশীল রাখতে না পারলে উপাচার্যকে জবাবদিহি করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপের পর নিরাপদ সড়ক দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরলেও কিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনে ক্ষুব্ধ শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে বুধবার এক বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্যদের বলেছেন, পরিবেশ স্থিতিশীল রাখতে না পারলে উপাচার্যদের জবাবদিহি করতে হবে। উপাচার্যরা কেউ কেউ পরিবেশ শান্তিপূর্ণ করার স্বার্থে আটককৃতদের সাধারণ ক্ষমায় মুক্তির সুপারিশ করলেও সকল উপাচার্যই বলেছেন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভেতরে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে গেছে। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনার। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে দেশের সকল বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠক করেন শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মুঞ্জরি কমিশন (ইউজিসি) এই বৈঠকের আয়োজন করে। এর আগে গত ৫ আগস্ট ঢাকা মহানগরীর সরকারী-বেসরকারী স্কুল-কলেজের প্রধানদের নিয়ে সভা করে কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। গত ২৯ জুলাই বাসচাপায় দুই ছাত্র নিহত হওয়ার পরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে স্কুল-কলেজের ছাত্ররা। ৫ আগস্ট আন্দোলন থেমে গেলেও হঠাৎ করে ৬ আগস্ট আন্দোলনে নামে কিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। এমন অবস্থায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠকে বসেন শিক্ষামন্ত্রী। ইউজিসি চেয়ারম্যান আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় বৈঠক। দেশের ১০৩ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এবং কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের অনুপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালগুলোর উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রাররা উপস্থিত ছিলেন। আরও বক্তব্য রাখেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন এবং সেক্রেটারি জেনারেল ও নর্থ সাউথের ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য বেনজির আহমদ, টাইম ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শরীফ আফজাল, সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির ভিসি আল আমিন মোল্লা, খাজা ইউনুস ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. হোসেন রেজা, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. আমিরুল হক প্রমুখ। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, হঠাৎ করে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কেন নামল? ৬ তারিখের ঘটনা আমাদের কারও কাম্য ছিল না। হয়ত কেউ ভুল বুঝিয়ে, গুজব ছড়িয়ে নিয়ে গেছে। শিক্ষার্থীকে সঠিক পথে পরিচালনার দায়িত্ব ভিসিদের। না পারলে জবাবদিহি করতে হবে। আমরা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি আপনাদের পাশে আছি। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের নিয়ে সভা করে সচেতন করার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসির পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, শিক্ষক ও ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের ভূমিকা নিতে হবে। তাদেরকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে হবে। অভিভাবকদেরকেও এ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে আরও সচেতন হতে হবে। যে কোন ধরনের নেতিবাচক কর্মকা-ে শিক্ষার্থীরা যাতে সম্পৃক্ত হতে না পারে, সে ব্যাপারে শিক্ষকদের ভূমিকা রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, যখন স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা তাদের ন্যায্য দাবি পূরণ হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে গেছে, তখন কিছু বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে। স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপরে সচেতন ছিলেন না। এসব শিক্ষার্থীদের বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। মন্ত্রী উপাচার্যসহ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের ৯টি দাবিই মেনে নিয়েছেন। কিছু দাবি ইতোমধ্যে পূরণ হয়েছে। কিছু বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে আধুনিক যুগের উপযোগী দক্ষতা দিতে চাই। তাদেরকে ভাল শিক্ষা দিয়ে ভাল মানুষ তৈরি করতে চাই। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকারীদের উদ্যোক্তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে ব্যবসার কোন সুযোগ নেই। দেশের কল্যাণে জাতি গঠনে তারা কাজ করছেন। আপনারা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছেন। সরকার এজন্যই এতগুলো বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু সবারই জবাবদিহিতা রয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ছাত্রদের বুঝিয়ে ভাল পথে রাখবার দায়িত্ব শিক্ষকদের। শিক্ষার্থীদের সঠিক পথে রাখবার দায়িত্ব তারা পালন করবেন। কারও উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যবহৃত না হওয়ার জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান। উপাচার্যরা কেউ কেউ পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। তবে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমরা কাউকে মুক্তি দেয়ার অধিকার রাখি না। ছাত্ররা যদি প্রকৃত অর্থেই অপরাধ করেন, আইন লঙ্ঘন করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে কেউ যদি নিরাপরাধ হয়, তা প্রমাণিত হলে সে মুক্তি পাবে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি ॥ এদিকে পরিস্থিতি সামলাতে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ, ছুটি, সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণার মতো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে দেশের কয়েকটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়। গত ৬ আগস্ট বেশ কয়েকটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও আটকের অভিযোগ এনে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন ঘোষণা করছে ব্র্যাক ও শান্ত মারিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদিকে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দুটির কর্তৃপক্ষও পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছেন। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ জন শিক্ষার্থীর মুক্তির দাবিতে ক্লাস পরীক্ষায় অংশ না নেয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটে নোটিস দিয়ে পরীক্ষা স্থগিত করার বিষয়টি জানিয়ে দেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার লে. কর্নেল মোঃ ফয়জুল ইসলাম স্বাক্ষরিত নোটিসে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের গ্রীষ্মকালীন সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা স্থগিত করা হলো। কোরবানির ঈদের পর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। শীঘ্রই নতুন সময়সূচী জানিয়ে দেয়া হবে।
×