শংকর কুমার দে ॥ গুলশান হলি আর্টিজান জঙ্গী হামলা মামলায় পলাতক দুই আসামি শরীফুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) জারি ও দুই বছর ধরে কারাবন্দী নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজাউল করিমকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত। পলাতক দুই আসামি শরীফুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপনকে গ্রেফতার করা গেল কি না- তা জানিয়ে পুলিশকে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ১৬ আগস্ট। গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার চার্জশীট গ্রহণ করে বুধবার এই আদেশ দেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ মুজিবুর রহমান। গত ২৩ জুলাই তাদের মধ্যে জীবিত আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। বুধবার আদালতে শুনানির সময়ে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আটক ৬ আসামির মধ্যে ৫ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও আদালত সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগপত্রে (চার্জশীটে) বলা হয়, নব্য জেএমবির জঙ্গীরা ছয় মাস ধরে পরিকল্পনা করে ওই হামলা চালিয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল দেশকে অস্থিতিশীল করা, বাংলাদেশকে একটি জঙ্গী রাষ্ট্র বানানো। গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলায় জড়িত ২১ জনকে চিহ্নিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ওই অভিযোগপত্র জমা দেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলায় হয়। চার্জশীটভুক্ত জীবিত ৮ আসামির মধ্যে যে ৬ জন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। অপর দুই আসামি খালেদ ও রিপন এখনও পলাতক। এই দুই জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। চার্জশীটভুক্ত অপর যে ৬ আসামি গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন তারা হলেন- জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী, রাকিবুল হাসান রিগান, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশ, সোহেল মাহফুজ, মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান এবং হাদিসুর রহমান সাগর। চিহ্নিত বাকি ১৩ জন বিভিন্ন অভিযানে নিহত হওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
বুধবার আদালতে শুনানির সময়ে গ্রেফতার ৬ আসামির মধ্যে জাহাঙ্গীর ছাড়া সবাইকে আদালতে হাজির করা হয়। জাহাঙ্গীরকে কেন আনা হয়নি সে বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা জানতে চান বিচারক। তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির ছাড়াও রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের পিপি মোঃ গোলাম সারোয়ার খান জাকির এবং ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি শাহ আলম তালুকদার। গুলশান হামলার দিন সপরিবারে হলি আর্টিজান বেকারিতে ছিলেন ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী হাসনাত করিম। তাদের উদ্ধারের পর সন্দেহ সৃষ্টি হলে হাসনাত করিমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তদন্তে ওই হামলার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি জানিয়ে অভিযোগপত্রে তাকে অব্যাহতি দেয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। সেই আবেদন মঞ্জুর করে বুধবার হাসনাত করিমকে এ মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেন বিচারক। হাসনাত করিমকে বুধবারই যেন মুক্তি দেয়া হয়Ñসেই নির্দেশনা দিতে বিচারকের কাছে আর্জি জানান তার আইনজীবী সানোয়ার হোসেন সমাদ্দার। বিচারক বলেন, কারা কর্তৃপক্ষকে ওই নির্দেশনা দেবেন তিনি।
