ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্ঘটনাকবলিত ফেরি উদ্ধার, বাঁচল ৩শ’ মানুষের প্রাণ

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৯ আগস্ট ২০১৮

দুর্ঘটনাকবলিত ফেরি উদ্ধার, বাঁচল ৩শ’ মানুষের প্রাণ

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ দুর্ঘটনাকবলিত একটি ফেরি উদ্ধার করে ৩০০ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে জরুরী সেবা ‘৯৯৯’। মঙ্গলবার সকাল দশটা ৫ মিনিটে দুর্ঘটনাকবলিত ফেরির এক যাত্রী এই জরুরী সেবায় ফোন করেন। এ সময় নয়টি ট্রাক ও ছয়টি বাসও নিরাপদে ফেরিসহ তীরে আসতে সক্ষম হয়। রানীক্ষেত নামে ফেরিটি মুন্সীগঞ্জের মাওয়া থেকে যাত্রা শুরু করেছিল। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সহকারী মহাপরিদর্শক সোহেল রানা এ বিষয়ে বলেন, ফোন রিসিভ করে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য তৎক্ষণাৎ কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ এবং ফায়ার সার্ভিসকে বিষয়টি জানান। কোস্টগার্ডসহ সব বাহিনী দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। ফেরি থেকে প্রায় ৩০০ যাত্রী উদ্ধার করে। তিনি আরও বলেন, শ্রীনগর ফায়ার স্টেশনের একটি দল ট্রলার ও পাম্প মেশিন সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় ডুবে যাওয়া ফেরি থেকে পানি নিষ্কাশন শুরু করে। পরবর্তীতে ফেরিটিকে তীরে আনা হয়। শুধু এ ঘটনাই নয় বরং প্রতিনিয়ত ঘটা ছোট-বড় দুর্ঘটনায় বিপদের বন্ধু হয়ে পাশে রয়েছে জরুরী সেবা ‘৯৯৯’। দেশের মানুষের আস্থার প্রধান আস্থা এখন এই নম্বরটি। এই তো দেড় মাস আগে ইস্কাটন গার্ডেন এলাকা থেকে গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগে তিনজনকে আটক করে রমনা থানার পুলিশ। ইস্কাটনের এক বাসিন্দা ৯৯৯-এ ফোন করে গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা পুলিশকে জানালে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনজনকে আটক করে। ১২ বছরের শাওন নামে গৃহকর্মীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে নেয়া হয়। উদ্ধারের পর দেখা যায়, শাওনের হাত-পাসহ সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন। তার শারীরিক অবস্থাও ভাল নয়। পরে গৃহকর্তা ইকবাল, তার স্ত্রী তামান্না ও শ্যালক তানজিলকে আটক করে পুলিশ।’ এমন অসংখ্য ঘটনায় তাৎক্ষণিক সেবা প্রদান করে আসছে এই জরুরী। সেইসঙ্গে সচেতন জনগণও বিপদে এই সেবা পেতে দেরি করছেন না। দেশব্যাপী এখন ছড়িয়ে পড়েছে ‘৯৯৯’ এর কার্যকারিতা। দিনকে দিন এর ব্যবহার বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ পুলিশের ফেসবুক পেজে দেয়া পুলিশের টেলিকম ও ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তথ্যানুযায়ী, এই জরুরী সেবাটি চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩৭ লাখ ফোন কল এসেছে। যার মধ্যে ২৪ লাখ অপ্রয়োজনীয় বা ভুয়া কল, ১৮ লাখ কলে কলার কোন কথা বলেননি অর্থাৎ কৌতূহলবশত ফোন করেছে। এছাড়া, ৬ লাখ কলার কল করে আজে বাজে কথাবার্তা বলেছে। এ বিষয়ে জরুরী সেবা সেন্টারের সুপারভাইজার পুলিশ ইন্সপেক্টর জালিস মাহমুদ জনকণ্ঠকে বলেন, অনেকেই কল করছে কিন্তু কল রিসিভ হচ্ছে তখন কিছু বলছে না। আর এসব কলকে আমি বলছি অবাঞ্ছিত কল। এই কলটি করে তারা আসলে কোন সাহায্যের বিষয়ে বা প্রয়োজনীয় কোন বিষয়ে কথা বলে না। এমন কলার নাম্বারটি ব্যস্ত রাখে এবং তাতে প্রকৃত অর্থে যার সাহায্য দরকার সে বঞ্চিত হয়। কিন্তু যে ১৩ লাখ কলার সাহায্য পাননি তার কারণ কি? এই কর্মকর্তা বলছেন, সাত লাখ কল এসেছে নানা ধরনের প্রশ্ন নিয়ে যারা মূলত মোবাইল অপারেটরদের সম্পর্কে তথ্য চেয়েছেন যা আমাদের জানা নেই। আমাদের কাছে সবাই সেবা পেয়েছে। সবার কল আমরা ধরেছি। বর্তমানে এই কল সেন্টারে ৭০ পুলিশ সদস্য কাজ করেন। তবে এটি বাড়িয়ে শীঘ্রই ১০০ জনে উন্নীত করা হবে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর থেকে দেশব্যাপী এমন কলের মোটে ৩৭ হাজারের ক্ষেত্রে তারা সেবা দিয়েছেন। অর্থাৎ ১৩ লাখের মতো বিশালসংখ্যক কলার কোন সাহায্য পাননি। আর বিপদগ্রস্ত বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছাতে তাদের সময় লেগেছে ৩০ মিনিট। সময়টি জরুরী বিভাগের রেসপন্স টাইম হিসেবে অনেক বেশি। আর ততক্ষণে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে। ঘটনাস্থলের দূরত্ব, ট্রাফিক জ্যাম এবং গাড়ি ও জনবল সঙ্কটই এর মূল কারণ বলছেন দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। তারা এই সময় ১০ মিনিটে নামিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। জরুরী সেবা প্রদানকারী সংস্থার ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে গড়ে ৩০ মিনিট সময় লাগে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিটিসিএল থেকে ৩৩ সংযোগ নিয়ে এই সার্ভিস সিস্টেম চালানো হচ্ছে। তবে এক শ’টি চালানোর মতো সক্ষমতা আছে। কিন্তু সক্ষমতা থাকলেও জনবলের তো প্রয়োজন। দিন দিন এই সেবার পরিধি বাড়ছে। জনগণের প্রত্যাশা মতো সেবা দিতে হলে যেসব সমস্যা আছে সেগুলোর দ্রুত সমাধান করতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে জালিস মাহমুদ বলেন, আমরা পুলিশের গাড়িগুলোয় জিপিআরএস বসানো হবে। কোন গাড়িটি ঘটনাস্থলের সবচেয়ে কাছে আছে সেটিকে খুঁজে তাকে সরাসরি ঘটনাস্থলে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে চাই। তবে সেজন্যে কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে জনগণকে। ডিসেম্বরে তা চালু করার চেষ্টা চলছে। আর যারা ঘন ঘন ব্ল্যাংক কল বা কল করছেন তাদের শাস্তি ও জরিমানার কথাও চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
×