ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জাপানে বিদেশী শ্রমিক নেয়া বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ৮ আগস্ট ২০১৮

জাপানে বিদেশী শ্রমিক নেয়া বাড়ছে

জাপানে বিদেশী শ্রমিক নেয়া ধীরে ধীরে বাড়ছে। জাপান হলো বিশ্বের সবচেয়ে সমগোত্রীয় জাতি। যেখানে মাত্র ২ শতাংশ অধিবাসী বিদেশী সেখানে বিদেশীর সংখ্যা ফ্রান্সে ১৬ শতাংশ ও দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪ শতাংশ। জাপানের আরও বিদেশী শ্রমিক গ্রহণ করা উচিত কিনা এই প্রশ্নে পরিচালিত এক জনমত জরিপে দেখা যায় ৪২ শতাংশ জাপানীর এতে সম্মতি আছে এবং ৪২ শতাংশের অমত আছে। ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সের প্রায় ৬০ শতাংশ নরনারী বিদেশী শ্রমিক নেয়ার পক্ষে। জাপানীরা যাই ভাবুক নাই ভাবুক, বিদেশী শ্রমিকরা আজ সে দেশের জীবনের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত শহর-নগরে তো বটেই। এদের সংখ্যা ১৩ লাখ। অর্থাৎ মোট শ্রমশক্তি প্রায় ২ শতাংশ। এটা একটা রেকর্ড। জাপানের যে সব ভিসায় বিদেশীদের সে দেশে বসবাসের সুযোগ দেয়া আছে তা তত্ত্বগতভাবে অতি দক্ষ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও বাস্তবক্ষেত্রে কম দক্ষ বিদেশীদেরও ছাত্র বা প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে গ্রহণ করা হচ্ছে। এদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বিদেশী শ্রমিকদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ চৈনিক। ভিয়েতনামী ও নেপালীদের সংখ্যাও দ্রুত বেড়ে চলেছে। আরও বিদেশী জাপানে আসার পথে আছে। গত জুন মাসে জাপান সরকার ঘোষণা করে যে ২০২৫ সাল নাগাদ নতুন ৫ লাখ শ্রমিক নেয়ার জন্য নির্ধারিত দক্ষ ভিসা চালু করা হবে। এদের কৃষি, নির্মাণ শিল্প, হোটেল, নার্সিং ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পে নিয়োগ করা হবে। সংখ্যার চেয়ে বড় গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো সরকার কম দক্ষ শ্রমিকদের পেছনের দরজা দিয়ে না নিয়ে প্রকাশ্যে গ্রহণ করতে আগ্রহী। এটা বার্লিন ওয়ালের পতনের মতো ব্যাপার না হলেও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। সমাজগত ও সরকার পর্যায়ে মনোভাবের এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে ব্যবসায়ী মহলের চাপ। গত ২০ বছরে জাপানে ৩০ বছরের কম বয়সী শ্রমিক বা কর্মীর সংখ্যা এক-চতুর্থাংশ হ্রাস পেয়েছে। তা ছাড়া বর্ষীয়ান লোকদের কারণে এমন সব চাকরি সৃষ্টি হচ্ছে যা খুব অল্পসংখ্যক জাপানীই এর জন্য প্রদত্ত পারিশ্রমিকে করতে রাজি নয়। যেমন পরিচর্যাকারী। চাকরির সংখ্যা ৬০ শতাংশ বেশি। কৃষি, নির্মাণ শিল্প, নার্সিং পেশায় জাপানীরা বিদেশীদের ওপর উত্তরোত্তর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। পর্যটনের বদৌলতে বিদেশীদের সঙ্গে অধিক সংস্পর্শ লাভের সুবাদে জাপানীরা আশ্বস্ত হতে পেরেছে যে তাদের নিয়ে চলা যেতে পারে। যত বিদেশী আসবে অপরাধ তত বাড়বে এমন আশঙ্কা ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে। তবে বিদেশী শ্রমিকদের আকৃষ্ট করতে পারা জাপানের জন্য অত সহজ নয়। ভাষা এক মস্ত বাধা। অতি দক্ষ বিদেশী শ্রমিকদের জাপানী ভাষা বলার প্রয়োজন পড়ে না। তবে বৃহৎ ই-কমার্স কোম্পানি রাবুটেনের মতো মুষ্টিমেয় কিছু কোম্পানিই কেবল ইংরেজী ভাষার ভিত্তিতে কাজ করে। কম দক্ষ শ্রমিকদের অবশ্যই জাপানী ভাষা পরীক্ষায় কাজ করতে হয় এবং তাদের পরিবার পরিজনকে নিয়ে আসার সুযোগ নেই। ব্যবসা ক্ষেত্রে অনুসৃত ধারাগুলোও আরেক অন্তরায়। ছাত্র বা ট্রেনি ভিসায় আগত বিদেশীদের নানাভাবে শোষিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যেসব প্রতিষ্ঠানে মেধার চেয়ে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতি হয় এবং সেখানে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করাটাই একটা রেওয়াজ যেসব প্রতিষ্ঠান বিদেশী শ্রমিকদের আকৃষ্ট করতে যথেষ্ট বেগ পাবে। বিদেশীদের জাপানী সমাজের অঙ্গীভূত করতে জাপানকে অনেক কিছুই করতে হবে। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে তেমন উদ্যোগী নয় বলেই অনেকের ধারণা। তানাকা নামে এক গবেষক বলেন যে সরকার আসলে চায় না বিদেশীরা থেকে যাক। তাই বিদেশীদের মধ্যে যারা আগে থেকেই আছে তাদের অনেকের ভিসা ঘন ঘন নবায়ন করতে হয়। এটাও বিদেশী শ্রমিক আকর্ষণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×