ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মহাপরাক্রান্ত এরদোগান কোথায় দুর্বল

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ৮ আগস্ট ২০১৮

মহাপরাক্রান্ত এরদোগান কোথায় দুর্বল

তুরস্কে গত ২৪ জুনের নির্বাচনে রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। বিরোধীদলীয় প্রার্থী মোহারেষ ইনস হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন যে তুরস্ক এখন এক ব্যক্তির শাসনের দিকে যাবে। আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমের শিরোনামগুলোতেও এমন আশঙ্কা প্রতিধ্বনিত হয়েছিল। বাস্তবে তেমনটাই কি হবে? হয়ত তাই। তবে অতি দ্রুত নয়। এরদোগান ১৫ বছর ধরে তুরস্কের রাজনীতিতে প্রাধান্য বিস্তার করে আছেন। ২০০৩ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর ২০১৪ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। এই পদে নতুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা যোগ করার জন্য তিনি গণভোট আয়োজন করেন এবং তাতে রায় তার পক্ষে যায়। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে এরদোগান এক ব্যর্থ অভ্যুত্থান থেকে রক্ষা পান। তখন থেকে আজও পর্যন্ত বলবত জরুরী অবস্থার সুযোগ নিয়ে তিনি সামরিক বাহিনী, পুলিশ বাহিনী ও বিচার বিভাগে তার সত্যিকারের ও কাল্পনিক শত্রুদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চালাতে থাকেন। তার সরকার প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার লোককে গ্রেফতার করে, স্বাধীন সংবাদপত্র, টিভি ও বেতারকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়। আটকে দেয় হাজার হাজার ওয়েবসাইট। নিষিদ্ধ করে শত শত নাগরিক সমাজ সংগঠন। ২০১৭ সালের এপ্রিলে এরদোগান সামান্য ব্যবধানে গণভোটে জয়ী হন। এতে কারচুপির বৈধ অভিযোগ উঠেছিল। তবে নতুন ক্ষমতা ভোগ করার জন্য তার আরেক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল এবং সেই বিজয়টা তিনি অর্জন করেন এ বছরের ২৪ জুনের নির্বাচনে। এরদোগান এখন নতুন নতুন ফরমান জারি করতে পারেন যা আইনের সমতুল্য বলে গণ্য হবে এবং অনুগত বিচারপতিদের দিয়ে আদালত ভরে ফেলতে পারেন। বলাবাহুল্য প্রধানমন্ত্রী পদটির এখন আর অস্তিত্ব নেই। এখানে একটা জটিলতা আছে। এরদোগানের জাস্টিস এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি) এবারের পার্লামেন্ট নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। সরকার গঠনের জন্য দলটিকে তাই ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টি (এমএইচপি)-এর সঙ্গে জোট বাঁধতে হয়েছে। এমএইচপির দাবি তুরস্কের ভেতরে ও বাইরে কুর্দীদের দমনে সরকারকে আরও অর্থ ব্যয় করতে হবে। দ্বিতীয়ত বৈদেশিক ক্ষেত্রে আরও কঠোর নীতি অনুসরণ করতে হবে, যাতে তুরস্ক সিরিয়ায় আরও সক্রিয় ভূমিকা এবং ইউরোপে ন্যাটো মিত্র ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি কম বন্ধুসুলভ নীতি গ্রহণ করতে পারে। এটাই হচ্ছে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট, তুরস্কের অর্থনীতি এবং এর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্রনীতির জন্য একটা খারাপ খবর। এরদোগান ও তার দল একেপিকে সরকার গঠনের জন্য এই প্রথম একটা শরিক দলকে গ্রহণ করতে হলো। তবে এবারই প্রথম একেপি কোন নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হলো তা নয়। এরদোগান ২০১৫ সালের জুন মাসে পার্লামেন্টের যে নির্বাচন দিয়েছিলেন তকে একেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। কুর্দীদের পার্টিকে শরিক দল হিসেবে নিয়ে সরকার গঠন করতে হয়েছিল। এর পাঁচ মাস পর এরদোগান আবার আগাম নির্বাচন দেন। সেই নির্বাচনে একেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা ফিরে পায়। কিন্তু এখন আগাম নির্বাচন বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। তুরস্কের অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল নয় এবং ক্রমান্বয়ে এর অবনতি ঘটছে। মুদ্রাস্ফীতি বেশি এবং এর বর্তমান মুদ্রামানের অস্থিরতা আছে। একেপিও ৪২.৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। অর্থাৎ গত নির্বাচন থেকে তার ভোট কমেছে ৭ পয়েন্ট। আগামী পাঁচ বছর এরদোগানকে তার বাজেট পাস করার, আইন পাস করার এবং নিজের জারিকৃত ডিক্রির ওপর পার্লামেন্টের ভেটো পরিহারের জন্য এমএইচপির নেতা কট্টর জাতীয়তাবাদী ডেভলেট বাহসেলির সমর্থনের প্রয়োজন হবে। বাহসেলি নিজের অবস্থানের শক্তি ভাল মতোই বোঝেন, জানেন। তিনি তুরস্কের কুর্দী বিচ্ছিন্নতাবাদী ও তাদের সিভিলিয়ান মিত্রদের প্রতি আপোসহীন ভূমিকা নেয়ার জন্য চাপ দেবেন। আর তেমন ভূমিকা নেয়া হলে কুর্দী অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে এবং সিরিয়া ও ইরাকে সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করতে পারে ও তার পরিণতিতে তুরস্কের নগরীতেও পাল্টা আক্রমণ হতে পারে। তিনি এমনও দাবি করতে পারেন যে এরদোগানকে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা বাড়িয়ে তুলতে হবে। কিন্তু তুরস্কে অর্থনীতি যেখানে অস্থিরতাপূর্ণ সেখানে এমন কঠোর ভূমিকা নিতে গেলে রাজনৈতিক মাশুল বেড়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় বাহসেলি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের রাষ্ট্রীয় ব্যয় হ্রাস ও সংস্কারের উদ্যোগকে কঠিন করে তুলতে পারেন। এরদোগান আজ এমন ক্ষমতার অধিকারী যে আধুনিক তুরস্কের জনক কামাল আতাতুর্কের পর আর কোন তুর্কী নেতার এত ক্ষমতা ছিল না। বেশিরভাগ মিডিয়া ইতোমধ্যেই তার দলের নিয়ন্ত্রণে। নির্বাচনে এরদোগান টিভির যে পরিমাণ এয়ারটাইম পেয়েছিলেন মোহারেম ইনস তার দশ ভাগের এক ভাগও পাননি। তার পরও প্রেসিডেন্ট মাত্র সাড়ে ৫২ শতাংশ ভোট পেতে সক্ষম হয়েছেন। সমাজ যেখানে এত তীব্ররূপে বিভক্ত সেখানে মাথার উপরে একটা কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা গড়ে তোলা সহজ হবে না। মিত্রদের ওপর নির্ভরশীলতার রাজনৈতিক মাশুল দিতে হবে। রাজপথে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ হবে এবং এর জবাবে সরকার কি পদক্ষেপ নেয় তার ওপর নির্ভর করবে তুরস্কের স্থিতিশীলতা। নতুন ক্ষমতাই যে প্রেসিডেন্টকে সামনের বাধা-প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত করতে পারবে তা নয়। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×