ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তান সরকারের পরবর্তী চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৭:২২, ৮ আগস্ট ২০১৮

পাকিস্তান সরকারের  পরবর্তী চ্যালেঞ্জ

গত ২৫ জুলাই পাকিস্তানের সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে ১১৫টি আসন জিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়েছে ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। তবে দেশটির পার্লামেন্টের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ১৩৭টি আসন না পাওয়ায় পিটিআই’কে জোট সরকার গঠন করতে হচ্ছে। জোট গঠনের জন্য পিটিআই নেতারা এরই মধ্যে এমকিউএম-পি, জিডিএ, পিএমএল-কিউ, পিএপি এবং স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। ওদিকে, পিটিআই’র প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (৬৪ আসন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (৪৩ আসন) পার্লামেন্টে ‘সমন্বিত ঐক্যমত্যের মাধ্যমে’ ইমরান সরকারকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলার ঘোষণা দিয়েছে। আগামী ১১ অগাস্ট পাকিস্তানের প্রধাানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন বলে জানিয়েছেন সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান। রেডিও পাকিস্তান সোমবার ইমরানের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে। রাজধানী ইসলামাবাদে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশ থেকে নবনির্বাচিত আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ইমরান একথা বলেন। খুব শিগগিরই প্রদেশটির মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করবেন বলেও জানান তিনি। কে ক্ষমতায় আসছেন, সেটি বড় বিষয় নয়; বড় কথা হলো নতুন সরকারকে কঠিন ও তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নতুন সরকারকে সামনে যেসব জটিল সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে তা হলো- চরমপন্থা ॥ সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের পর সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটিতে জোরালো নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন, পাকিস্তান চরমপন্থার মূল কারণ অনুসন্ধান করতে ব্যর্থ হচ্ছে, এবং এ কারণে জঙ্গী গ্রুপগুলো এখনও দেশটির বিভিন্ন স্থলে হামলা চালাতে পারছে। সম্প্রতি একটি রাজনৈতিক প্রচার অনুষ্ঠানে বোমা হামলা করা হলে অন্তত ১৭৫ জন নিহত হয় এবং গত ১৩ জুলাই বেলুচিস্তানে দ্বিতীয় বৃহত্তম হামলা চালায় জঙ্গীরা। এতে অন্তত ১৪৯ জন নিহত ও বহু লোক আহত হয়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, কয়েক বছরের বিরতির পর জঙ্গীরা নতুন করে দল গোছাতে ও নিজেদের শক্তি সঞ্চয় করার চেষ্টা শুরু করেছে। অর্থনীতি ॥ আগামী সরকারকে প্রায় সময়ই লেনদেনের ভারসাম্য সঙ্কট আতঙ্কে থাকতে হবে। এজন্য আইএমএফ থেকে পরবর্তী ৫ বছরের জন্য দ্বিতীয়বারের মতো বেলআউট চাইতে হতে পারে দেশটিকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় ফুরিয়ে আসছে এবং রুপির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। বাণিজ্য ঘারতি পূরণের জন্য চলতি সপ্তাহে ৫ শতাংশ ভর্তুকি দেয় হয়। বেজিংয়ের সঙ্গে বহু বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ চুক্তির পর পাকিস্তান চীনের তৈরি উপকরণ ক্রয় বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে শঙ্কার জায়গা হলো, এজন্য চীনকে অর্থ পরিশোধ নিয়ে- কিভাবে এই অর্থগুলো পরিশোধ করতে পারবে পাকিস্তান। তেলের উচ্চ মূল্য ইতোমধ্যে অর্থনীতির ওপর আঘাত হেনেছে। এদিকে দেশটির পোশাকশিল্প চীনের সস্তাদরের পণ্যের কাছে যেমন মার খেতে বসেছে, তেমনি রেমিটেন্স শ্লথ গতির হয়ে পড়েছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে একটি শান্তি সূচক সংস্থা সতর্ক করে দিয়ে জানিয়েছে যে, এ নির্বাচনে বিজয়ীরা অর্থনীতি পুনর্গঠনে ততটা সময় পাবেন না। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ॥ বিশ্বব্যাংক ও সরকারের হিসাব অনুযায়ী, রক্ষণশীল পাকিস্তান এশিয়ার উচ্চ জন্ম হারের একটি দেশ। দেশটিতে পরিবার পরিকল্পনা সীমিত পরিসরে মেনে চলা হয়। এখানে গড়ে একজন নারী তিনটি শিশুর জন্ম দেয়। গত বছরের একটি হিসাব অনুযায়ী, ১৯৬০ সালের পর থেকে দেশটিতে অন্তত ৫ গুণ জনসখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে মুসলিম এ দেশটিতে ২০৭ মিলিয়ন লোক বাস করে। পাকিস্তানে জন্ম নিরোধ নিয়ে জনসমুখে আলোচনা করা নিষিদ্ধ। বিশ্লেষকরা জনান, জন্ম হার বৃদ্ধি না কমলে, জনসংখ্যার চাহিদা পূরণে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষ করে খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিতে পারে। পানি সঙ্কট ॥ কর্তৃপক্ষ শীঘ্রই যদি ব্যাপকভাবে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে পরিবেশগত বিপর্যয়ের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। সরকারী হিসাবে দেখা যায়, আগামী ২৫ সালের মধ্যে দেশটি বড় ধরনের পানি সঙ্কটের মুখে পড়তে যাচ্ছে। সে সময় জনপ্রতি ৫শ’ কিউবিক মিটারেরও কম পানি পেতে পারেন একজন নাগরিক। দক্ষিণ আফ্রিকা বা কানাডার এক হাজারেরও বেশি পানি সঞ্চয় বেসিনের তুলনায় পাকিস্তানে মাত্র প্রধান তিনটি বেসিনে পানি সংরক্ষণ করা হয়। যদিও দেশটির ভেতর দিয়ে হিমালয় থেকে নেমে চলা নদী ও বন্যার পানি প্রবাহিত হয়। এছাড়া অতিরিক্ত পানি শীঘ্রই ফুরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ রূপ সঙ্কটে রাজনীতিবিদদের অবকাঠামোগত উন্নয়নে হাত দিতে হবে। পাশাপাশি পানি রক্ষণাবেক্ষণ সমন্ধে খুব কমই জ্ঞান আছে এখানের সাধারণ মানুষের। বেসামরিক-সামরিক সম্পর্ক ॥ ৭১ বছরের ইতিহাসে প্রায় অর্ধেক সময়ই পাকিস্তান সেনা শাসনে অতিবাহিত করেছে, এবং বেসামরিক ও সামরিক নেতৃত্বের ভারসম্যহীন সম্পর্ক দেশটির গণতন্ত্র ও উন্নয়নের অন্তরায় হয়ে দেখা দিয়েছে। ২০১৩ সালে দেশটির প্রথম গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা আশার সঞ্চার জুগিয়েছিল। তবে জেনারেল ও প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের সরকারের তিক্ত ঘটনার পর বিশেষজ্ঞরা অভ্যুত্থানের শঙ্কা করেন। আর এর কিছুদিন পর ২০১৭ সালে নওয়াজ শরীফ ক্ষমতাচ্যুত ও চলতি মাসের শুরুর দিকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি ও তার দল সেনাবাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।
×