ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দালাল চক্রের কাছে জিম্মি বিদ্যুত গ্রাহকরা

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ৮ আগস্ট ২০১৮

দালাল চক্রের কাছে জিম্মি বিদ্যুত গ্রাহকরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ৭ আগস্ট ॥ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) চেয়ারম্যান নাগরপুর উপজেলার ধুবড়িয়াতে এসে ঘোষণা দিয়েছিলেন ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে নাগরপুর উপজেলাকে শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় নিয়ে আসবেন। এর ফলে নাগরপুর উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের আওতায় পুরোদমে পল্লী বিদ্যুতের নতুন সংযোগের কাজ চলছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের এ সফল উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলছে এক শ্রেণীর দালাল ও পল্লী বিদ্যুতের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মধ্যস্বত্বভোগী দালাল চক্র ও পল্লী বিদ্যুতের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে নতুন বিদ্যুত সংযোগ প্রত্যাশী নাগরপুর উপজেলার গ্রাহকরা। এ চক্রের যাঁতাকলে পড়ে সাধারণ মানুষকে গুনতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। দালাল চক্র প্রতিটি গ্রাম থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেলেও প্রশাসন নির্বিকার। কোন কোন গ্রামে টাকা নিয়ে বিদ্যুত সংযোগ দিতে দেরি হলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায় কিন্তু দালাল চক্র এতটাই শক্তিশালী যে তারা বিদ্যুত সংযোগ না পাওয়ার হুমকি দিয়ে মিটমাট করে ফেলে। বিষয়টি নিয়ে দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা অস্বীকার করে। তবে নাম প্রকাশে অনিইচ্ছুক একজন গ্রাহক জানান, ঠিকাদারদের টাকা না দিলে তারা ঠিকমতো কাজ করে না। এছাড়া পল্লী বিদ্যুত অফিসের ইঞ্জিনিয়ার থেকে লাইনম্যান পর্যন্ত টাকা না দিলে বিদ্যুত সংযোগ পেতে দেরি হয়। ভুক্তভোগী যেসব পরিবার টাকা দিতে না পারায় বিদ্যুত সংযোগ পায়নি তারা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, যদি অনতিবিলম্বে এই দালালদের দমন করা না হয় তাহলে সরকারের সুনাম ক্ষুণœ হবে। এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুত সমিতির নাগরপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম জয় প্রকাশ নন্দী কাউকে টাকা দিয়ে প্রতারিত না হওয়ার অনুরোধ জানান এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। বগুড়ায় ভুতুড়ে বিল স্টাফ রিপোর্টার বগুড়া অফিস থেকে জানান, এক ‘অদ্ভুত’ বিলের ফাঁদে পড়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বগুড়ায় বিদ্যুত গ্রাহকরা। গ্রাহকদের বিদ্যুত মিটার পরিবর্তনে বাধ্য করতে বিদ্যুত বিভাগের নর্দান ইলেক্ট্র্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (নেসকো) আওতাধীন বগুড়ার বিদ্যুত বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগগুলো থেকে এই ভুতুড়ে বিল করে গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, মিটারে ব্যবহৃত ইউনিট যেটাই হোক খেয়ালি এই বিল করে ডিজিটাল মিটার স্থাপনের জন্য আবার অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। ইচ্ছা আকাশের ঘুড়ি ওড়ানোর মতো এই খেয়ালি বিল করার নিয়ম না থাকলেও এই বিলের নাম দেয়া হয়েছে ‘এস্টিমেটেড’ ইউনিট বিল। এ ব্যাপারে বগুড়ার বিদ্যুত বিক্রয় ও বিতরণের ৩টি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা মিটার পরিবর্তনের জন্য কিছু এস্টিমেটেড ইউনিট বিল করার কথা স্বীকার করেন। তবে বাইরের লোক দিয়ে মিটার রিডিং ও বিল বিতরণের বিষয়টি অস্বীকার করেন বগুড়া বিদ্যুত বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের (৩) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুল আলম চৌধুরী। আর নেসকো বগুড়ার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুর রশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এস্টিমেটেড ইউনিট বিল বিদ্যুত বিভাগের কোন আইনে উল্লেখ রয়েছে কিনা জানতে চাইলে, তিনি বলেন, ‘সবকিছু আইনে উল্লেখ থাকে না।’ এটা করা হয়েছে গ্রাহকদের সেবার মান বাড়িয়ে আরও কাছে আনার জন্য। বাগেরহাটে হয়রানির প্রতিবাদ স্টাফ রিপোর্টার বাগেরহাট থেকে জানান, শরণখোলায় বিদ্যুত গ্রাহকদের কাছ থেকে বিভিন্ন অজুহাতে লাখ লাখ টাকা আদায়, অতিরিক্ত বিল করা, বিল পরিশোধে বিড়ম্বনা ও গ্রাহক হয়রানি করে চলেছে পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতি। দীর্ঘদিন ধরে চলছে এমন অব্যবস্থাপনা। এতে সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুণœ হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে গ্রাহকরা এসব অনিয়মের অভিযোগ করলেও কোন প্রতিকার হয়নি। অবশেষে খোদ সরকারী দল ও একটি নাগরিক সংগঠন পল্লী বিদ্যুত সমিতির এসব দুর্নীতি, অনিয়মের বন্ধের প্রতিবাদে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। ওই সংগঠন দুটি মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে শরণখোলা প্রেসক্লাবে পৃথকভাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে। পৃথক সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির বাবুল ও সচেতন নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মোঃ শহীদুল ইসলাম তাদের লিখিত অভিযোগে জানান, পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতি উপজেলার ১৫ হাজার গ্রাহকের সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে প্রতারণ করে আসছে। তারা নির্ধারিত বিলের সঙ্গে অতিরিক্ত বিলের পাশাপাশি, সার্ভিস চার্জ, ডিমান্ড চার্জ, মিটার ভাড়া, মনগড়া বিদ্যুত বিল তৈরি ও সর্বোপরি বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার নামে স্থানীয় দালাল চক্রের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে রায়েন্দা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত উদ্দিন বাদশা, ইউপি সদস্য জালাল আহমেদ রুমিসহ আওয়ামী লীগ ও নাগরিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) প্রকৌশলী শংকর কুমার কর বলেন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের আওতায় ওই প্রকল্পের কর্মকর্তা, বাংলাদেশের প্রায় সব ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং আরইবির ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুত বিল নেয়া হচ্ছে। তিনি অস্বীকার করে বলেন কারও কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×