ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে না যেতে উস্কানি

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ৮ আগস্ট ২০১৮

রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে না যেতে উস্কানি

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে একটি বিশেষ মহল। প্রবল বর্ষণ, ভূমিধস, ঘনবসতি ও বন্যার হাত থেকে সুরক্ষিত করতে সরকার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে ওই চরকে বসবাস উপযোগী করে তোলা হয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত করতে সরকার ইতোমধ্যে বহু টাকা ব্যয় করেছে। কিন্তু স্বার্থের ব্যাঘাত ঘটছে দেখে একটি মহল ভাসানচরে না যেতে রোহিঙ্গাদের উস্কানি দিয়ে চলেছে। আশ্রয় শিবিরে দায়িত্ব পালনকারী সংস্থা ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্রে জানা যায়, প্রবল বর্ষণ, ভূমিধস ও বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন, বনবিভাগ ও আরআরআরসি ৩৫ হাজার রোহিঙ্গাকে গত মাসে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের নিয়মিত ত্রাণ সামগ্রী প্রদান, বাসস্থান, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবায় বিরামহীন পরিশ্রম করে যাচ্ছে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসন দায়িত্ব পালন করতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের জায়গা দিতে সরকার বরাদ্দ করেছে অন্তত ৬ হাজার একর বনভূমি। ইতোমধ্যে ওসব সবুজ বন ধবংস হয়ে গেছে। তবে আশ্রয় শিবিরগুলো মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন হওয়ায় রোহিঙ্গারা ওপারে গিয়ে ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্য নিয়ে আসছে এদেশে। ক্যাম্প এলাকায় দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মাদকসেবী যুবকদের সংখ্যা। মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি ক্যাম্প স্থাপনকে সচেতন মহল মোটেও নিরাপদ মনে করছেন না। সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা স্বদেশে গিয়ে সশস্ত্র গ্রুপের কাছ থেকে অস্ত্র এনে ক্যাম্পে ঢুকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। এদিকে উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কাঁটা তারের ঘেরা নেই। চারদিকে রয়েছে বহু মেঠোপথ। ওসব পথ ব্যবহার করে রোহিঙ্গা জঙ্গীরা ক্যাম্পে অবস্থানরত কিছুসংখ্যক সন্ত্রাসী রোহিঙ্গার সঙ্গে যোগাযোগ করে ভবিষ্যতে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনাও সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয়দের সঙ্গে নানান বিষয়ে রোহিঙ্গাদের মনোমালিন্য সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিনিয়ত। রাতের বেলায় গ্রামে ঢুকে রোহিঙ্গারা গৃহস্থ পরিবারের গোয়ালঘর খালি করে ফেলেছে। কোরবানি উপলক্ষে যতœ করে মোটা তাজা করা গরুগুলো চুরি করে নিয়ে গেছে রোহিঙ্গারা। উখিয়ার পালংখালী, থাইংখালী ও বালুখালী এলাকার অনেকে বসতঘরে না ঘুমিয়ে সারারাত গোয়ালঘর পাহারা দিচ্ছে। রোহিঙ্গারা রাতে স্থানীয়দের গরু চুরি করে ক্যাম্প অভ্যন্তরে নিয়ে ভাগবাটোয়ারা করে খাচ্ছে। তারা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের জন্য তুলে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয়দের ঘেরাবেড়া। কালবিলম্ব না করে ভাসানচর-ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর করার দাবি উঠেছে স্থানীয়দের তরফ থেকে। সূত্র জানিয়েছে, দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে ইতোপূর্বে একাধিকবার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়েছে একটি রাজনৈতিক দল। ইতোপূর্বেও কক্সবাজার শহর এবং টেকনাফ সড়কে নাশকতা চালাতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করেছে বিশেষ মহলটি। যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী মুক্তি আন্দোলনের ব্যানারে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল রোহিঙ্গাদের। ওই সময় শহরের হাশেমিয়া মাদ্রাসা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সশস্ত্র ক্যাডারদের সঙ্গে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গা যুবকরা। উখিয়া টেকনাফ এলাকায় অরক্ষিত ক্যাম্পগুলোতে এভাবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে রাখা মোটেও নিরাপদ মনে করছেন না অভিজ্ঞ মহল। সীমান্তের একাধিক সূত্র থেকে জানানো হয়েছে, সোমবার রাখাইন রাজ্যের মংডু জেলা আদালত ১৫০ রোহিঙ্গা জঙ্গীকে সন্ত্রাস আইনে অভিযুক্ত করে বিচার কার্যক্রম শুরু করেছে দেশটির সরকার। অভিযুক্ত রোহিঙ্গাদের গত বছরের ২৫ আগস্ট শুরু হওয়া সেনাবাহিনীর শুদ্ধি অভিযানে গ্রেফতার করা হয়। অভিজ্ঞজনরা বলেন, এ বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে যে উখিয়া টেকনাফে সুশৃঙ্খলভাবে আশ্রয় শিবির তৈরি করে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে, এটা অবশ্যই সরকারের প্রশংসনীয় এবং অনেক বড় বিষয়। যা দেশ বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। তারা বলেন, উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার মধ্য থেকে অন্তত ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা জরুরী। কেননা রোহিঙ্গারা অরক্ষিত ক্যাম্পে অবস্থান করে আরাকান বিদ্রোহী রোহিঙ্গা জঙ্গী গ্রুপের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছে। স্বদেশে গিয়ে মাদক নিয়ে ফিরে আসছে ক্যাম্পে। সূত্র জানিয়েছে, ভাসানচরে স্থানান্তর করা হলে তারা আর ওই সুযোগ পাবে না। ওই দ্বীপ থেকে বের হয়ে নাশকতায়ও অংশ নিতে সাহস করবে না। আশ্রিত সন্ত্রাসী গোচরের রোহিঙ্গা যুবকদের সঙ্গে তখন রোহিঙ্গা জঙ্গী গ্রুপের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। উখিয়া টেকনাফে তথা পর্যটন শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা প্রশাসনের জন্য সহজ হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন তারা। স্বদেশে প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ওই দ্বীপে নিরাপত্তা বেষ্টনীতে রাখা সম্ভব হবে জানিয়ে তারা আরও বলেন, সাহায্য সংস্থাগুলোর জন্যও এক জায়গায় ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো সহজ হবে। এদিকে স্বার্থান্বেষীরা এবং বিশেষ মহল রোহিঙ্গাদের ধোঁকা দিচ্ছে যে ভাসানচরটি ডুবে যায় জোয়ারের পানিতে। সেখানে গেলে মারা যাবে রোহিঙ্গারা। তবে ভাসানচরকে যে সরকার বহু টাকা ব্যয় করে বসবাস উপযোগী করে তুলেছে, সেটা তারা স¤পূর্ণ গোপন রেখে সেখানে না যেতে উস্কানি ছড়ানো হচ্ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। গুজব ছড়ানো হচ্ছে ভাসানচরে অসংখ্য বিষাক্ত সাপের বসবাস। চতুর্দিকে সাগর। জলোচ্ছ্বাস হলে ওই দ্বীপ ডুবে যাবে। উখিয়া টেকনাফের মতো স্বাধীনভাবে সেখানে চলাচল করা যাবে না। বন্দি জীবন কাটাতে হবে সেখানে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের বাড়তি আয়-রোজগারও বন্ধ হয়ে যাবে। যদি কোন সংস্থা রোহিঙ্গাদের গোপনে সাহায্য করতে চাইলেও ভাসানচরে যেতে পারবে না ইত্যাদি। এসব উস্কানি শুনে উখিয়া টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা ভাসানচরে স্থানান্তর না হওয়ার জন্য সংগঠিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে নজরদারি বৃদ্ধি করে উস্কানিদাতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং রোহিঙ্গাদের দ্রুত ভাসানচরে স্থানান্তর করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
×