ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেবা কার্যক্রম স্থবির

চিকিৎসক সঙ্কটে চৌগাছা হাসপাতাল

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ৮ আগস্ট ২০১৮

চিকিৎসক সঙ্কটে চৌগাছা হাসপাতাল

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার সঙ্কটে চিকিৎসাসেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে। হাসপাতালে গাইনি বিশেষজ্ঞ সঙ্কটে গর্ভবতী মায়েদের সেবা (এএনসি কর্নারে) দিচ্ছেন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসাররা (এসএসিএমও)। চিকিৎসাসেবায় অনভিজ্ঞ এসকল এসএসিএমও দিয়ে চিকিৎসা দেয়ায় জটিল গর্ভবতী রোগীদের যে কোন ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রোগীর স্বজনরা। অন্যদিকে হাসপাতালের আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিনটি ১০ জুলাই চালুর কয়েক দিনের মধ্যে আবারও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে গর্ভবতী রোগীরা পড়েছেন নানা জটিলতায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ সেলিনা বেগম বলছেন, গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সঙ্কটের কারণেই এ ব্যবস্থা নিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, বারবার চিকিৎসক চেয়েও না পেয়ে সম্প্রতি সিজারিয়ান রোগীদের জন্য সিভিল সার্জনকে বলে একজন গাইনি ডাক্তারকে নিয়ে আসা হয়েছে কয়েক দিনের জন্য। তিনি হাসপাতালে গাইনি চিকিৎসকসহ ডাক্তার দেয়ার জন্য উর্ধতন মহলের কাছে এক প্রকার আকুতি জানিয়েছেন। আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিনের বিষয়ে ডাক্তার সেলিনা বলেন, এ বিষয়টি ডাঃ নাহিদ সিরাজ ভাল বলতে পারবেন। তিনিই মেশিনটি চালাতেন। ডাঃ নাহিদ সিরাজ বলেন, মেশিনটি ২০১১ সালে দেয়া। দীর্ঘদিন ব্যবহার না করার কারণে মেশিনটি বারবার বিকল হয়ে পড়ছে। হাসপাতালের এই আলট্রাসনোগ্রাফি মেশিনটি ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে দেয়া হলেও রেডিওলজিস্ট নেই অজুহাতে সেটির সেবাদান বন্ধ রাখেন তৎকালীন আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসা কর্মকর্তারা। ২০১৫ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ইমদাদুল হক রাজু সেটি চালু করার ছয় মাস পরেই নষ্ট হয়ে যায়। সম্প্রতি সেটি মেরামতের পর ১০ জুলাই চালু করা হয়েছিল। ডাঃ নাহিদ সিরাজ বলেন, চালুর পর ছয়/সাতদিন সেটি দিয়ে রোগীদের সেবা দেয়া হয়। গাইনি বিশেষজ্ঞসহ চিকিৎসক সঙ্কটের কারণে ২০০৪ সাল থেকে প্রসূতি ও মাতৃস্বাস্থ্য সেবায় পরপর ১০ বার দেশের সেরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরস্কার পাওয়া হাসপাতালটির চিকিৎসা কার্যক্রম এক প্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে রোগীর চাপের কারণে হাসপাতালটিতে পোস্টিং পেয়েও চিকিৎসকরা আসতে চান না বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। হাসপাতালের প্রসূতি সেবা সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে হাসপাতালে গর্ভবতী ডেলিভারি রোগী ভর্তি ছিলেন ৩৬৯ জন। এদের মধ্যে ৭৬ জনের সিজারিয়ান ডেলিভারি এবং ১৪৫ জনের স্বাভাবিক ডেলিভারি হয়েছে। জটিল গর্ভবতী ভর্তি ছিলেন ৭৭ জন। গর্ভ পরবর্তী জটিলতা সংক্রান্ত রোগী ছিলেন ২৮ জন। জুলাই মাসে প্রসব পরবর্তী জটিলতা সংক্রান্ত ১৯৬ নারী এবং ২২৪ শিশু হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রসব পরবর্তী মোট চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন ৮৬১ রোগী। এছাড়া গর্ভবতী মায়েদের সেবায় এএনসি কর্নার থেকে এক হাজার ৬১৫ জন চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। একদিকে চিকিৎসক সঙ্কট অন্যদিকে ডাক্তাররা সঠিক সময়ে আউটডোরে চিকিৎসা না দেয়ায় হাসপাতালটির সেবা কার্যক্রম এক প্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে। রোগীদের অভিযোগ সকাল আটটা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত রোগী দেখার কথা থাকলেও চিকিৎসকরা ১০টার আগে কেউই আউটডোরে রোগী দেখেন না। আবার ১০টার পরে চেম্বারে বসলেও একটার পরে আর রোগী না দেখে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টিটিভদের সঙ্গে সময় কাটান। তবে ব্যতিক্রম রয়েছেন ডাঃ রফিকুজ্জামান, ডাঃ সুরাইয়া পারভীন, ডাঃ নাহিদ সিরাজ ও ডাঃ সুব্রত কুমার বাগচী। তারা অনেক সময়ে অফিস টাইমের পরও রোগীদের সেবা দেন বলে কয়েক রোগী জানিয়েছেন।
×