ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ’ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র ॥ রুহানি

ইরানের বিরুদ্ধে নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ৮ আগস্ট ২০১৮

ইরানের বিরুদ্ধে নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

যুক্তরাষ্ট্র মঙ্গলবার ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর ও একতরফা নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেছে। এর মধ্যদিয়ে ওয়াশিংটন তেহরানের বিরুদ্ধে নতুন করে কঠোরতা আরোপ শুরু করল। এর আগে বহুপাক্ষিক পরমাণু চুক্তির আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিল। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি একে ‘মনস্তাত্বিক যুদ্ধ’ আখ্যায়িত করেছেন। ইরানীদের মধ্যে বিভক্তির বীজ বপন করার জন্য এটি করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। এএফপি ও বিবিসি। চলতি বছর মে মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। চুক্তিটি ইরান ও ছয়টি পশ্চিমা দেশের মধ্যে হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে দুই দফা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। প্রথম দফা সোমবার মধ্যরাত থেকে এবং দ্বিতীয় দফা মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হয়েছে। প্রথম দফা নিষেধাজ্ঞায় ইরানের মার্কিন ডলার ক্রয় এবং কার ও কার্পেটসহ প্রধান শিল্প পণ্য রফতানির বিষয়গুলো রয়েছে। দ্বিতীয় দফায় আছে ইরানের স্বর্ণ ও অন্যান্য ধাতু খাতগুলো। ওই খাতগুলোও এখন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে তেহরান নতুন চুক্তির জন্য রাজি হবে এবং অস্থিতিশীলতা তৈরির কর্মকা- থেকে বিরত থাকবে। তিনি বলেন, যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিষেধাজ্ঞা অমান্য করবে তাদের বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। মার্কিন এই পদক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ২০১৫ সালে সম্পাদিত অন্য পক্ষ যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্স। নবেম্বরে ইরানের বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের বন্দর, জ্বালানি, নৌ পরিবহন ও নির্মাণ খাত, ইরানের জ্বালানি ও তেল বিষয়ক লেনদেন এবং ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বিদেশী আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লেনদেনও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসতে পারে। এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ‘অনেক কোম্পানি ইতোমধ্যেই ইরানের বাজার ত্যাগ করছে জেনে আমি আনন্দিত। অনেক দেশই ইঙ্গিত দিয়েছে তারা ইরানের অপরিশোধিত তেল আমদানি কমিয়ে দেবে।’ নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ইরান ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি পর্যালোচনার মার্কিন দাবি প্রত্যাখান করেছে। মে মাসে ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর ইউরোপীয় দেশগুলো ক্ষুব্ধ হয়েছিল। ওই দেশগুলো মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে ইরানের সঙ্গে তাদের লেনদেন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। দেশগুলোর পক্ষে এখন মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়ানো কঠিন হবে। কারণ সেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ওই নিষেধাজ্ঞা মানবে না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের দুটি গুরুত্বপূর্ণ খাত তেল ও কার্পেটকে টার্গেট করেছেন ট্রাম্প। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন বলে ট্রাম্প কয়েক মাস ধরেই হুমকি দিয়ে আসছিলেন। গত কয়েক মাসে ইরানের অর্থনীতির ওপর এর যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে। গত কয়েকদিনে ইরানের মুদ্রা রিয়ালের মূল্য ২০ শতাংশ পড়ে গেছে। অনেকে মনে করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সরকার যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়নি, যে কারণে তার সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। তেহরানের ফটোগ্রাফার ৩১ বছর বয়সী ইয়াসামান বলছেন, নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আগে গত ৩-৪ মাস ধরেই জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। তিনি মনে করেন, ক্ষমতায় যারা আছেন তাদের উচিত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসা। কাজটি তারা তিক্ত মনে করলেও সেটি করা উচিত। নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কিছুক্ষণ আগেও ট্রাম্প বলেছিলেন যে, ইরানের নেতৃবৃন্দের সামনে এখন কয়েকটি বিকল্প আছে। কিন্তু তার প্রতিপক্ষ রুহানি নতুন করে কোন চুক্তি নিয়ে আলোচনার সম্ভবনা নাকচ করে দিয়েছেন। মাশহাদ ও ইস্ফাহানসহ কয়েকটি শহরে বিক্ষুব্ধ লোকজনকে রাস্তায় নামতে দেখা গেছে।
×