ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৮ আগস্ট ২০১৮

বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র

ক্ষমতায় যাওয়ার মোহে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি-জামায়াত চক্র। এজন্য ধারাবাহিকভাবে তারা বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে। জনসমর্থন হারানোয় তারা এখন নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন করার চাইতে দেশে উদ্ভূত নানা ইস্যুকেন্দ্রিক ক্ষুদ্র আন্দোলনের ওপর ভর করছে। তাদের দেউলিয়াপনা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, ছাত্রদের আন্দোলনকে তারা অপব্যবহার করার নীল নক্সা পর্যন্ত তৈরি করেছে। সম্প্রতি কোটা আন্দোলনের সময় তারা নাশকতা ঘটায়। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ভেতর সুকৌশলে ছাত্রদল ও শিবিরের ক্যাডার ঢুকিয়ে দিয়ে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করে। পাকিস্তান আমলেও যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেনি তারা সেটাই ঘটিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে রোমহর্ষক কায়দায় হামলা চালিয়ে লুটতরাজ করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল হত্যাকা- ঘটানোর মধ্য দিয়ে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করা। সরকারের ত্বরিত যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে সেটি সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে একটি সুন্দর আন্দোলনের ওপর সওয়ার হয়েছিল। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে রক্তপাতের মধ্য দিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশের সকল পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের সরকারের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলে আন্দোলনকে ধ্বংসাত্মক মাত্রা দিতে চেয়েছিল। তাদের অভিপ্রায় ছিল সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ভেতর ছদ্মবেশে মিশে গিয়ে নৈরাজ্যকর কর্মকা- ঘটানো। কিছু অপকর্ম তারা ঘটাতে সফলও হয়েছে। এজন্য তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারও করেছে তারা। ফটোশপে হামলা-ভাংচুরের ছবি এডিট করে, অশ্লীল ও আপত্তিকর ভাষায় ব্যানার-ফেস্টুন-স্লোগান ইত্যাদি লিখে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার উদ্দেশ্যে বহুবিধ পোস্ট ও ভিডিও দেয়া হয়েছে ফেসবুক-ইউটিউবেÑ যা ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে গেছে মুহূর্তেই। এতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বভাবতই বিভ্রান্তি এবং উত্তেজনা ছড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোই ছিল তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। কুমিল্লায় অবস্থানরত এক শিবির নেতাকে বিএনপির এক শীর্ষ নেতার মোবাইল ফোনে ঢাকায় গিয়ে লোকজন জড়ো করে আন্দোলনে যোগদানের আহ্বান রীতিমতো উস্কানির নামান্তর। সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা দেশবাসী ভুলবে কী করে! কী ভীষণ অস্থির নৈরাজ্যকর বিপজ্জনক দিন গেছে জাতির জীবনে! দলীয় কর্মীদের কাছে ‘দেশনেত্রী’ অভিধা পাওয়া খালেদা জিয়ার হুকুমে হরতাল-অবরোধের নামে দেশের সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারার নাশকতা চলে টানা তিন মাস। গোটা দেশ হয়ে ওঠে সন্ত্রাসের জনপদ। একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসররা শুধু মানুষ পুড়িয়েই ক্ষান্ত হয়নি, তাদের সহিংসতা ও নাশকতায় দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধনও ঘটে বিপুল পরিমাণে। বিএনপি বা দেশের যে কোন রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন থাকতেই পারে। কিন্তু সে জন্য সবার আগে সংবিধান মেনে জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। জনতার রায় পেলেই শুধু সরকার গঠন সম্ভব। এ ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। অবৈধ পথের পথিকদের রাতের অন্ধকার কিংবা অজ্ঞাত গর্ত থেকে বেরিয়ে এসে দিনের আলোয় জনগণের কল্যাণে রাজনীতিতে শামিল হতে হবে। এভাবে ধীরে ধীরে মানুষের আস্থা অর্জন করা হয়ত সম্ভব। ক্ষমতায় যাওয়ার সেটাই সংবিধানসম্মত পথ। পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্ট এবং তারপর বারবার জাতির পতাকা খামচে ধরেছে সেই পুরনো শকুনÑ স্বাধীনতাবিরোধী চক্র। একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে তারা একাট্টা। শকুন-নখরে খামচে ধরা লাল-সবুজ পতাকা তারা ছিন্নভিন্ন করতে চায়। কিন্তু একাত্তরের আলোয় স্নাত একজন মুক্তিযোদ্ধাও বেঁচে থাকতে সেই দুরাশা কি পূরণ হবে হায়েনাদের? সে জন্যই প্রতিবাদ-প্রতিরোধে জ্বলে উঠতে হবে বীর বাঙালীকে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসিক্ত সকল মানুষকে।
×