ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জলবিদ্যুত উৎপাদনে নেপালের সঙ্গে এমওইউ সই হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৮ আগস্ট ২০১৮

জলবিদ্যুত উৎপাদনে নেপালের সঙ্গে এমওইউ সই হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ জলবিদ্যুত উৎপাদনে নেপালের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (্এমওইউ) সই হতে যাচ্ছে। এজন্য বিদ্যুত জ¦ালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল নেপাল যাচ্ছে। আগামী সপ্তাহে এমওইউটি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র বলছে, প্রথমে দ্বিপাক্ষিকভাবে নেপাল এবং বাংলাদেশ বিদ্যুত খাতে সহায়তা সম্প্রসারণের জন্য এমওইউটি সই হবে। পরবর্তীতে প্রতিবেশী দেশ ভারতকে উভয় দেশ মিলে অনুরোধ করা হবে। বিদ্যুত বিভাগের যুগ্মসচিব ফয়জুল আমীন এ সম্পর্কে বলেন, নেপালে জলবিদ্যুত উৎপাদন, নেপাল থেকে জলবিদ্যুত আমদানি, সোলার হোম সিস্টেমের অভিজ্ঞতা নেপালের সঙ্গে বিনিময় এবং বাংলাদেশের বিদ্যুত খাতের সাফল্যের আলোকে নেপালের বিদ্যুত ব্যবস্থার উন্নয়ন করার বিষয়গুলো এই সমঝোতায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ভারত তার ভূখ- ব্যবহার এর প্রতিবেশী দেশে বিদ্যুত আদান প্রদানের ক্ষেত্রে প্রকল্পে দেশটির (ভারত) অংশীদারিত্ব থাকার কথা উল্লেখ করে নীতিমালা করেছে। এক্ষেত্রে ভারতের সহায়তা ছাড়া নেপাল থেকে বিদ্যুত আমদানি সম্ভব নয়। এই জটিলতা নিরসনে কি করা হবে জানতে চাইলে বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, নেপাল এবং বাংলাদেশ মিলে ভারতকে অনুরোধ করা হবে। এই অনুরোধে ভারতের ভূখ- ব্যবহারের অনুমতি চাওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে ভারতের সংশ্লিষ্ট কোম্পানি শুধুমাত্র বিদ্যুত পরিবহনের জন্য হুইলিং চার্জ (সঞ্চালনের অর্থ) পেতে পারে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নেপালের জ্বালানিমন্ত্রী জনার্দন শর্মা ঢাকা সফরে আসেন। ওই বৈঠকে নেপাল-বাংলাদেশ জলবিদ্যুত উৎপাদনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। এরপর দুই দেশের বিদ্যুত জ্বালানি বিভাগ এমওইউটি চূড়ান্ত করার কাজ শুরু করে। দেশের বাইরে নেপাল এবং ভুটানে জলবিদ্যুত উৎপাদনে সরকার এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। বিদ্যুত বিভাগের এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন। জলবিদ্যুত নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন হওয়ায় এক্ষেত্রে ঋণ প্রাপ্তিও সহজ। সরকার এক বিলিয়ন ডলার নিজেদের মূলধন হিসেবে বিনিয়োগ করলে অন্তত সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, নেপালের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করা হবে। কেন্দ্রে নেপাল এবং বাংলাদেশ সরকারের মালিকানা থাকবে। বাংলাদেশে যে প্রক্রিয়ায় কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে একই পদ্ধতি নেপালের ক্ষেত্রেও অনুসরণ করা হবে। বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, আমরা নেপালে জলবিদ্যুত খাতে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছি। সরকার নিজস্ব বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলো থেকেও বিদ্যুত আমদানির চেষ্টা করছে। ভারত থেকে বিদ্যুত আসছে। নেপালে জলবিদ্যুত উৎপাদনের বিশাল সুযোগ রয়েছে। এমওইউ সই হওয়ার পর ভারতের মতো নেপালের সঙ্গে যৌথ স্টিয়ারিং কমিটি ও ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে। ফলে দেশটির বিদ্যুত খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে দ্রুত কার্যকর সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে। নেপালে জিএমআর নামে ভারতীয় একটি কোম্পানি জলবিদ্যুত উৎপাদন করছে। তারা বাংলাদেশে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বিক্রির প্রস্তাবও দিয়েছে সরকারকে। এছাড়া ভারতের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি এনভিভিএন নেপাল থেকে ৫০০ হতে ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বাংলাদেশে বিক্রি করতে আগ্রহী। এজন্য বাংলাদেশ সরকার অথবা বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এর সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদী বিদ্যুত বিক্রয় চুক্তি সইয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। নেপালে ৩০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুত উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকলেও দেশটি বর্তমানে সামান্য পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদন করছে। এখানেও ভারতের বিভিন্ন কোম্পানি কয়েকটি জলবিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন নেপাল এবং ভুটানের উদ্যোগের সঙ্গে মিয়ানমারকে যুক্ত করতে পারলে আরও বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে। দেশটিতে আরও ৪০ হাজার মেগাওয়াটের জলবিদ্যুত উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে। অবশ্য মিয়ানমার এরই মধ্যে বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করছে। যারা এসব বিষয়ে আগে থেকে পারদর্শী। আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে এখনও বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে কোন আলোচনা করেনি। তবে চীনা কোম্পানিগুলো মিয়ানমারের সঙ্গে ইতোমধ্যে কয়েকটি চুক্তি করেছে।
×