ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনের আগে কমছে না সঞ্চয়পত্রের সুদহার ॥ মুহিত

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৮ আগস্ট ২০১৮

নির্বাচনের আগে কমছে না সঞ্চয়পত্রের সুদহার ॥ মুহিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমছে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, সঞ্চয়পত্রের সুদহার সমন্বয় করতে একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি আগামী দুই মাসের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট দেবে। তবে রিপোর্ট যাই আসুক নির্বাচনের আগে সঞ্চপত্রের সুদহার কমানো হবে না। তিনি বলেন, আগামী জানুয়ারি থেকে জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের সকল কার্যক্রম অটোমেশন (অনলাইন) হয়ে যাবে। সীমার অতিরিক্ত সঞ্চয়পত্রের কেনা ঠেকাতে এ অটোমেশনে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সঙ্গে লিংক থাকবে। মঙ্গলবার বিকেলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সঞ্চয়পত্রের সুদহার সমন্বয় করতে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠকে করেন অর্থমন্ত্রী। ওই বৈঠকে মহা-হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) মোঃ মুসলিম চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র সচিব মোঃ ইউনুসুর রহমান, অর্থ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের মহাপরিচালক বেগম শামসুন্নাহারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ৯ আগস্ট থেকে ব্যাংক আমানতে ৬ শতাংশ ও ঋণে ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর হচ্ছে। তাই ব্যাংক আমানতে সুদহার থেকে সঞ্চয়পত্রে সুদহার পার্থক্য অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সুদহার কমাতে চায় সরকার। এ জন্য অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সমন্বয় একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি আগামী দুই মাসের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট দিবে। তবে রিপোর্ট যাই আসুক আগামী নির্বাচনের আগে সঞ্চপত্রের সুদহার কমানো হবে না। এই কমিটির প্রধান কাকে করা হয়েছে এ বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা অর্থ বিভাগই ঠিক করবে। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রের সুদহারের ক্ষেত্রে আমরা বাজার রেট থেকে ১ বা দেড় শতাংশ বেশি রাখতে চেষ্টা করি। কিন্তু এখন এটা আছে ১১ প্লাস যা ব্যাংকের আমানতের তুলনায় অনেক বেশি। সুতরাং এটাকে একটু কমাতে হবে। তবে পরবর্তী সরকার সঞ্চয়পত্র কমানোর বিষয়টি বাস্তবায়ন করবে। আশা করছি, আমরা আবারও সরকারে আসব। আমরাই এটি বাস্তবায়ন করব। মুহিত বলেন, জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের সকল কার্যক্রম অটোমেশনে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের সঙ্গে লিংক থাকবে। তখন সঞ্চয়পত্রে লেনদেন পেপারলেসভাবে হবে। তাই কেউ সীমার অরিরিক্ত সঞ্চয়পত্র কিনছে কিনা সেটি সহজেই ধরা পড়বে। অটোমেশন হয়ে গেলে কার কত সঞ্চয়পত্র আছে তার যাবতীয় তথ্য পাওয়া যাবে। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রে কালো টাকা বিনিয়োগ রোধে আগামী ৫০ হাজার টাকার বেশি কেউ সঞ্চয়পত্র কিনতে চাইলে তাকে চেকের মাধ্যমে টাকা পেমেন্ট করতে হবে। কারণ ব্যাংকে লেনদেনের ক্ষেত্রে কোথা থেকে টাকা এলো সেটা জিজ্ঞাসা করা হয় বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। বর্তমানে অনেক ধরনের সঞ্চয়পত্র আছে। তাই আমরা কমিটিকে বলেছি তোমরা এ জিনিসটা স্টাডি কর। কমিটি শুধু সুদহারই নয় অনেক ধরনের সঞ্চয়পত্রের সংখ্যা কমিয়ে যৌক্তিকীকরণও করবে। ব্যাংকি সিস্টেমে যখন সঞ্চয়পত্র বিক্রি হতো না তখন পোস্ট অফিস বিক্রি করত। সার্বিকভাবে সঞ্চয়পত্র কার্যক্রমটাকে রিফর্ম করার সুপারিশ দেবে কমিটি। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রে বর্তমানে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ২ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকার মতো। যা মোট অর্থ প্রবাহের প্রায় ২২ শতাংশ। অর্থাৎ অনেক মানুষ এখানে বিনিয়োগ করেছে। কারণ এখানে সুদহার বেশি। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গত দুই বছরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ এসেছে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। ব্যাংককেও সুদহার কম, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ নিরাপদ নয় তারপর যদি সঞ্চয়পত্রে সুদহার কমানো হয় তাহলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোথায় বিনিয়োগ করবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, সুদহার একটু কমলেও এখানে বিনিয়োগ নিরাপদ। আমাদের পলিসি হচ্ছে আমরা সবসময় বাজার রেটের থেকে সঞ্চয়পত্রে সুদহার বেশি রাখি। কিন্তু এটার পার্থক্যটা অনেক বেশি হয়ে গেলে আমরা সুদহার রিভিউ করি।
×