ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপি ও ১/১১ কুশীলবরা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে ॥ ও কাদের

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৮ আগস্ট ২০১৮

বিএনপি ও ১/১১ কুশীলবরা ষড়যন্ত্র শুরু করেছে ॥ ও কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি ও এক এগারোর কুশীলবরা এক হয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশে যখন শান্তিময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে তখন এক-এগারোর কুশীলবরা রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অশুভ খেলায় মেতে উঠেছে। বিএনপি ওয়ান-ইলেভেনের সেই কুশীলবদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নতুন কোন ষড়যন্ত্রের জাল বোনা যায় কিনা, সেই গোপন চক্রান্ত করে যাচ্ছে। মঙ্গলবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষ থেকে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের করা একটি মন্তব্যের প্রসঙ্গে বলেন, ‘তার (ড. কামাল) কাছে জানতে চাই গু-াতন্ত্র কাকে বলে? চোখ উপড়ে ফেলা হলো আমাদের ছেলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী আরাফাত বাপ্পির। সেই আহত কর্মীকে হাইজ্যাক করলেন ঘৃণ্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। আমাদের সেই রাজনৈতিক কর্মীর একটি চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। তাকে এখন চেন্নাই পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আক্রান্ত হলাম আমরা অথচ দেশে-বিদেশে সুপরিকল্পিতভাবে ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে আমাদের আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হলো।’ রাজনৈতিক বিরোধী শক্তির উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, জানি আমরা কোথায় কোন মিটিং হচ্ছে। দেশে হচ্ছে, বিদেশে হচ্ছে। প্রথম প্রহরে হচ্ছে, মধ্য প্রহরে হচ্ছে, শেষ প্রহরে হচ্ছে, রাতের অন্ধকারে। সরকার কিছুই জানে না সেটা ভাবলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন। সবকিছুই আমরা জানি। সবকিছু সরকারের নলেজে আছে। কত ষড়যন্ত্র হয়েছে, কত বৈঠক হয়েছে। ব্যবস্থা নিলে কারও জেলের বাইরে থাকার কথা ছিল না। কিন্তু আমরা ধৈর্য ধরছি। ওবায়দুর কাদের বলেন, দেশে বিধ্বংসী রাজনীতি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আজকে অনেকেই অনাবশ্যক কটু ভাষণ দিচ্ছে। কটু ভাষণ দিয়ে তারা রাজনীতির দূষণ হয়ে আছে। রাজনীতিতে মতান্তর থাকবেই, কিন্তু সেই মতান্তরকে ছদ্মবেশী রাজনৈতিকরা বিধ্বংসী মনান্তরের সীমা অতিক্রমে নিয়ে যাচ্ছে। যা দেশের, জাতি, গণতন্ত্র ও ভবিষ্যতের জন্য দুঃসংবাদ। আর যারা ক্ষমতার জন্য দেশকে ধ্বংস করার রাজনীতি করে তাদের সঙ্গে কী করে রাজনৈতিক সমঝোতা হবে ভেবে পাই না। আন্দোলনে তাদের সফলতা দেখলাম না। আন্দোলনে ব্যর্থ এ দল বিএনপি কখনও কোটা সংস্কার আন্দোলনে, কিন্তু সেখানেও তারা ব্যর্থ। এখন তারা শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনের ওপর ভর করেছে। সেটাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার পথে। বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তারা সরকার হটানোর চক্রান্তের অংশ হিসেবে ঢাকা অচলের কর্মসূচী পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। ঢাকা অচল করার মাধ্যমে তারা বাংলাদেশ অচল করতে চেয়েছে। কিন্তু তাদের অতীতের সব চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে। এই অপপ্রয়াসও ভেস্তে যাবে। ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার পথে। এখানেও তাদের মিশন ফেল। আর কত ষড়যন্ত্র চক্রান্ত তারা করবে?’ তিনি বলেন, যত অপবাদ আসুক, যতই ষড়যন্ত্র হোক, কাজের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন করে তার জবাব দেব। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে যতটা সম্ভব সহনশীল হব। কিন্তু ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। জাতিসংঘের বিবৃতি বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘জাতিসংঘকে আমরা জানিয়েছি যে এটা অপপ্রচার। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় বিদেশী মিশনের কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি কূটনীতিকদের ব্রিফ করতে চায়, করুক। তারা তো এটা করেই যাচ্ছে। এটা তাদের রেগুলার প্র্যাকটিস। দেশে যখন আন্দোলন হয় তখন বিদেশীদের কাছে নালিশ করে। এটা তাদের পুরনো অভ্যাস। চিহ্নিতদের আইনের আওতায় আনতে তদন্ত হচ্ছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা ভাল করে বিষয়টি তদন্ত করছি। আটঘাট বেঁধে তদন্ত হচ্ছে। যাতে জালে ধরা পড়ে আবার বেরিয়ে যেতে না পারে। ছাত্রলীগের ওপর অপবাদ দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে তার তালিকা দিন। ঘটনায় ছাত্রলীগের কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে আমরা সাংগঠনিক ও আইনগতভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। বিচারের মুখোমুখি হতে আওয়ামী লীগের কোন দ্বিধা নেই। শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে কেউ রেহাই পায়নি, পাবেও না।’ সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত বিএনপি তাদের কলঙ্ক আওয়ামী লীগের ওপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে অভিযোগ করেন ওবায়দুল কাদের। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যারা ক্ষমতার জন্য দেশকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে তাদের সঙ্গে কীভাবে ওয়ার্কিং আন্ডারস্ট্যান্ডিং হবে তা ভেবে পাই না। সোহেল তাজের দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তিনি (সোহেল তাজ) যেকোন কারণে হোক আমাদের রাজনৈতিক কর্মকা- থেকে এখন একটু দূরে। এটা তার ব্যক্তিগত মতামত।’ ওবায়দুল কাদের বলেন, নিরাপদ সড়কের আন্দোলন নিয়ে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের রাজনৈতিক খেলা আমরা লক্ষ্য করছি। এ আন্দোলনকে তৃতীয় কোন পক্ষ যাতে তাদের ঘৃণ্য রাজনৈতিক পুঁজি হিসেবে যাতে ব্যবহার করতে না পারে, এ জন্য দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে সকলকে সচেতন হতে হবে এবং দৃষ্টি রাখার অনুরোধ করছি। তিনি বলেন, কয়েকদিনের উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যে অবশেষে একটা স্বস্তিদায়ক পরিবেশ ফিরে এসেছে। দেশের মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক এবং পরিবহন সঙ্কটের জন্য মানুষের যে দুর্ভোগ তারও অবসান হতে চলেছে। আশা করছি দূরপাল্লাসহ পরিবহনের জন্য মানুষের যে দুর্ভোগ তা সহনীয় মাত্রায় চলে আসবে। আন্দোলন প্রত্যাহার করে ক্লাশে ফিরে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, অভিভাবক, শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। কিশোর-কিশোরী শিক্ষার্থীরা রাজপথ থেকে ঘরে ফিরে গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দিয়ে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, এ কে এম এনামুল হক শামীম, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আনোয়ার হোসেন, গোলাম রাব্বানী চিনু, মারুফা আক্তার পপি।
×