ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের যুগপূর্তির দিনে দারুণ অর্জন এ অলরাউন্ডারের

বিশ্বাস ছিল জিততে পারব ॥ সাকিব

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ৭ আগস্ট ২০১৮

বিশ্বাস ছিল জিততে পারব ॥ সাকিব

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ১২ বছর আগে এই দিনেই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে যাত্রা শুরু হয়েছিল সাকিব আল হাসানের। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট হারারেতে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক পদযাত্রা শুরু হয়েছিল তার। তখন কে ভেবেছিল একদিন তিন ফরমেটেরই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হয়ে সবাইকে চমকে দেবেন তিনি। প্রথম দফায় অবশ্য ২০০৯ সালেই অধিনায়ক হয়েছিলেন। সেটা সুখকর না হওয়াতে হারিয়েছিলেন নেতৃত্ব। গত বছর অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আবার টি২০ অধিনায়ক হয়ে নেতৃত্বে ফেরেন তিনি। কিন্তু তারপর থেকে টানা ৭ ম্যাচে মাত্র ১বার জয় এনে দিতে পেরেছিলেন দলকে। অধিনায়ক হিসেবে আবারও বেশ চাপেই ছিলেন সাকিব। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যুগপূর্তির দিনে সাকিব বড় একটি অর্জনে অলঙ্কৃত হলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় লডারহিলে বাংলাদেশ দল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টি২০ সিরিজে ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছে তৃতীয় ম্যাচে ১৯ রানে জিতে। যদিও প্রথম টি২০-তে হেরেছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু সিরিজ জয়ের পর সাকিব দাবি করলেন তার মধ্যে বিশ্বাস ছিল ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব এবং সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানো সম্ভব। ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে নিশ্চিতভাবেই দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব। ব্যাটে-বলে তার বিকল্প এখন পর্যন্ত খুঁজে পায়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে এখন পর্যন্ত দলের জন্য আহামরি কোন সাফল্য বয়ে আনতে পারেননি তিনি। বিশেষ করে দ্বিতীয় দফায় জাতীয় দলের নেতৃত্ব পাওয়ার পর থেকে দলগত সাফল্য এনে দিতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন সাকিব। বিশেষ করে সর্বশেষ গত জুনে আফগানিস্তানের কাছে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা বরণ করেছেন সাকিব তার দল নিয়ে। দ্বিতীয় দফায় তিনি টি২০ অধিনায়ক হন গত বছর অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে এবং ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার মধ্য দিয়ে তার যাত্রা শুরু হয়। তারপর থেকে সবমিলিয়ে ৭ ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে একটিই মাত্র জয় এনে দিতে পেরেছেন সাকিব দলকে। গত মার্চে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় টি২০ সিরিজে লঙ্কানদের বিপক্ষে সেই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। সবচেয়ে মর্মান্তিক ও দুঃসহ বেদনার বিষয় গত মাসে আফগানিস্তানের কাছে ভারত সফরে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার লজ্জা। সেখান থেকে এবার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে নামতে হয়েছিল এবার সাকিবকে। ওয়ানডে সিরিজ জয়ের বিষয়টি অনুপ্রেরণা র্ছিল নিশ্চিতভাবে। এরপরও প্রথম টি২০ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে বৃষ্টি আইনে ৭ উইকেটে হার দিয়ে শুরু হয় সাকিবের দলটির যাত্রা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার লডারহিলকে যেন নিজেদের মাঠের মতোই মনে হয়েছে সাকিবদের কাছে। টানা দুই ম্যাচে ক্যারিবীয়দের হারিয়ে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে সাকিব বলেন,‘অবিশ্বাস্য পারফর্মেন্স পেলাম আমার দলের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে। প্রথম ম্যাচ হারের পর সিরিজে ফিরে আসার জন্য আমাদের দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রয়োজন ছিল। দলের ক্রিকেটাররা সবাই সেই পারফর্মেন্সটা দেখিয়েছে। নিজেদের অনেক বেশি প্রদর্শন করেছে তারা। সবাই বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল, এই অবস্থা থেকেও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের মোকাবেলা করেছি এবং সেই মোকাবেলা করতে গিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বই প্রমাণ করেছি।’ তিন ম্যাচের এ সিরিজে সাকিব হয়েছেন সিরিজসেরা, দল জিতেছে সিরিজ। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের যুগপূর্তিতে এরচেয়ে বড় পুরস্কার আর হতে পারে না। একেবারে সোনায় সোহাগা হয়ে গেলেন ওয়ানডে ও টেস্টের বিশ্বসেরা এবং টি২০ ক্রিকেটে বিশ্বের তৃতীয় সেরা এ অলরাউন্ডার। নিজের পারফর্মেন্সের মূল্যায়ন করতেও ছাড়েননি সাকিব। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, পুরো সিরিজেই আমি ভাল ব্যাটিং করেছি। বলে ভালভাবে হিট করতে পারছিলাম। যেটা আমাকে ভাল বোলিং করতেও সহযোগিতা করেছে। একই সঙ্গে অধিনায়কত্ব করতেও সহযোগিতা করেছে। এই মাঠে খেলতে গিয়ে আমাদের কখনোই মনে হয়নি যে ঘরের বাইরে খেলতে নেমেছি। এ কারণে দর্শক-সমর্থকদের ধন্যবাদ না দিয়ে উপায় নেই। তারা যেন আমার দলের দ্বাদশ ব্যক্তি।’ কিছুদিন আগেও অধিনায়কত্ব নিয়ে বেশ সমালোচনায় পড়েছিলেন সাকিব। এবার সেটারও জবাব দিয়ে দিলেন। ব্যক্তিগত নৈপুণ্য এবং নেতৃত্বে একেবারে জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠলেন তিনি। তবে সতীর্থদের জন্য আরও বেশি প্রশংসা ঝরে পড়ল সাকিবের, ‘যদি আমার সতীর্থরা হৃদয় দিয়ে না খেলত, তাহলে যেভাবে জিতেছি সেভাবে জিততে নাও পারতাম। ওয়ানডেতে গত তিন/চার বছর আমরা ভাল খেলছি। বিশেষ করে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের পর থেকে। এই টি২০ সিরিজ জয় নিশ্চিত আমাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দেবে। টি২০-তে আমরা ভবিষ্যতে আরও অনেক ভাল করতে পারব এবার। আমাদেরকে এখন টেস্ট ক্রিকেট নিয়েই বেশি কাজ করতে হবে। ঘরের মাঠে ইতিমধ্যেই ভাল করতে শুরু করেছি। এখন আমাদের প্রয়োজন ঘরের বাইরে ভাল টেস্ট খেলার এবং জয়ের অভ্যাস গড়ে তোলার।’
×