ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্লোরিডায় তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে বৃষ্টি আইনে ১৯ রানে হার ওয়েস্ট ইন্ডিজের, ম্যাচসেরা লিটন দাস ও সিরিজ সেরা সাকিব আল হাসান

টি২০ সিরিজেও অবিস্মরণীয় জয় বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৭:১২, ৭ আগস্ট ২০১৮

টি২০ সিরিজেও অবিস্মরণীয় জয় বাংলাদেশের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি২০ ক্রিকেটে বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। আর ফ্লোরিডার লডারহিলে ব্রোওয়ার্ড রিজিওনাল পার্ক টার্ফ গ্রাউন্ডে ক্যারিবীয়রা ৪ ম্যাচ খেলে হারেনি কখনও। তাদেরই টানা দুই ম্যাচে হারিয়ে টি২০ সিরিজ জয় করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। সোমবার এই ভেন্যুতে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে তৃতীয় টি২০ ম্যাচে ক্যারিবীয়দের ১৯ রানে হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে ৩ ম্যাচের টি২০ সিরিজ জয় করে সফরকারীরা। এটি বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের দ্বিতীয়বার টি২০ সিরিজ জয়ের রেকর্ড আর সার্বিকভাবে পঞ্চম সিরিজ জয় টি২০ ফরমেটে। তবে গত ৩ বছরে এই প্রথম টি২০ সিরিজ জিতল বাংলাদেশ দল। এসবই সম্ভব হয়েছে শেষ ম্যাচের ম্যাচসেরা লিটন কুমার দাসের ঝড়ো ব্যাটিং এবং মুস্তাফিজুর রহমানের দুর্দান্ত বোলিং ও সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড নৈপুণ্যের সুবাদে। প্রথম ব্যাট করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস ৫ উইকেটে ১৮৪ রান তোলে বাংলাদেশ দল। জবাবে ১৭.১ ওভারে ৭ উইকেটে ১৩৫ রান তোলার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস থমকে যায় বৃষ্টির বাগড়ায়। পরে আর খেলা হয়নি, বৃষ্টি আইনে ১৯ রানে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় বাংলাদেশ দলকে। এর আগে বিদেশের মাটিতে একবারই সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ড সফরে ৩-০ ব্যবধানে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করেছিল। আর সর্বশেষ ২০১৫ সালে সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাটিতে একমাত্র টি২০ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছিল বাংলাদেশ দল। তারপর থেকে গত ৮ সিরিজে ৫ বারই হার দেখতে হয়েছিল এবং ৩টি সিরিজ ড্র করেছিল টাইগাররা। আর অধিনায়ক হিসেবে সাকিবেরও বেশ বাজে সময় কাটছিল। এবার টি২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচেও ৭ উইকেটের হার দিয়ে শুরু হয়েছিল সাকিবের। কিন্তু ফ্লোরিডা নিরপেক্ষ ভেন্যু, সেখানে এসেই জ্বলে উঠল বাংলাদেশ দল। এর আগে কখনও ফ্লোরিডায় না খেললেও অধিকাংশ দর্শকের সমর্থনে জ্বলে ওঠা টাইগাররা দ্বিতীয় টি২০ ম্যাচে ১২ রানে জয় তুলে নিয়ে সমতা ফেরায়। এরপর সোমবার সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচে নামে সফরকারীরা একই ভেন্যুতে। সোমবার টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ দল। আগের দুই ম্যাচেও আগে ব্যাটিং করেছিল সফরকারীরা, তবে টস জিতেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবার সাকিব টস জিতে আবার ব্যাটিং বেছে নেন। শুরু থেকেই ক্যারিবীয় বোলারদের ওপর চড়াও হন তামিম ইকবাল ও লিটন। মাত্র ২৮ বলেই ৬১ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে বিধ্বংসী সূচনা এনে দেন এ দু’জন। ফর্মের তুঙ্গে থাকা তামিমকেই অবশ্য আগে সাজঘরে ফিরতে হয়েছে। অধিনায়ক কার্লোস ব্রেথওয়েট ব্রেক থ্রু এনে দেন নিজের দলকে। তামিম ১৩ বলে ৩ চার, ১ ছক্কায় ২১ রান করে সাজঘরে ফেরেন। পরের ওভারেই সৌম্য সরকার (৪ বলে ৫ রান) কিমো পলের শিকার হন। তবে টানা দুই উইকেট হারিয়ে ফেললেও পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ৭১ রান তুলে বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় বাংলাদেশ। আর ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস উপহার দিয়ে তখনও ক্রিজে ছিলেন লিটন। মাত্র ২৪ বলে টি২০ ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি পেয়ে যান তিনি। তৃতীয় উইকেটে মুশফিকুর রহীমের সঙ্গে আরও ৩১ রানের জুটি গড়েন লিটন। তবে মুশফিকও বেশিদূর যেতে পারেননি, সাজঘরে ফেরেন ১৪ বলে ১২ রান করার পর ব্রেথওয়েটের দ্বিতীয় শিকার হয়ে। মুশফিক সাজঘরে ফিরে গেলেও ততোক্ষণে ইনিংসের ১০ ওভার পেরিয়ে গেছে, বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে তখন ৩ উইকেটে ৯৭ রান। সেই ওভারেই অবশ্য লিটন সাজঘরে ফেরেন। তিনি ৩২ বলে ৬ চার, ৩ ছক্কায় ৬১ রান করেছেন। তাকে ফিরিয়ে স্বস্তি পায় উইন্ডিজরা। কিন্তু সাকিব, মাহমুদুল্লাহ দারুণ ব্যাট করেন। তারা ৪৪ রানের জুটি গড়েন ৩১ বলে। সাকিব অবশ্য খুব বেশি আক্রমণাত্মক হতে পারেননি, ২২ বলে ২ চারে ২৪ রান করার পর সাজঘরে ফেরেন তিনি। তবে মাহমুদুল্লাহ শেষ পর্যন্ত ছিলেন। বাংলাদেশ দলের সংগ্রহটা হয়ত আরও বড় হতে পারত। কিন্তু ক্যারিবীয় বোলারদের দৃঢ়তা এবং আরিফুল হকের বড় শট খেলতে পারার ব্যর্থতায় সেটা হয়নি। এরপরও শেষ ৪ ওভারে ৩৮ রান তুলতে পেরেছে বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহ ২০ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় ৩২ এবং আরিফুল ১৬ বলে ১ চারে ১৮ রান করে অপরাজিত থাকেন। ৫ উইকেটে ১৮৪ রান তোলে বাংলাদেশ। এটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস। ২০১২ সালে ঢাকায় ১ উইকেটে করা ১৭৯ রান ছিল আগের সেরা। ব্রেথওয়েট ও কিমো পল ২টি করে উইকেট নেন। সিরিজ বাঁচানোর লক্ষ্যে জয়ের জন্য খেলতে নেমে ক্যারিবীয়রা মূলত পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারেই হেরে গেছে। কারণ প্রথম ৬ ওভারে মাত্র ৩২ রান তুলতেই তারা ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে। তিন টপঅর্ডার আন্দ্রে ফ্লেচার (৬), মারলন স্যামুয়েলস (২) ও চ্যাডউইক ওয়ালটন (১৯) সাজঘরে ফিরেছেন যথাক্রমে মুস্তাফিজ, সাকিব ও সৌম্যর বোলিংয়ে। চতুর্থ উইকেটে অবশ্য রোভম্যান পাওলে ও দিনেশ রামদিন ৩৩ বলে ৪৫ রান তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন। কিন্তু কিন্তু ১৮ বলে ১ চার, ১ ছক্কায় ২১ রান করা রামদিনকে বোল্ড করে পেসার রুবেল হোসেন আবারও তাদের ব্যাকফুটে ঠেলে দেন। ২০ বলে ২৩ রান করা পাওয়েলকেও ফিরতি স্পেলে এসে এর দুই ওভার পরেই সাজঘরে ফেরান মুস্তাফিজ। এরপর লড়াই যা করার আন্দ্রে রাসেলই করেছেন। তাকে সঙ্গ দেয়ার তেমন কেউ ছিল না। ব্যাট হাতে নামার পর থেকেই আগ্রাসী রাসেল সাকিবের ১৩তম ওভারে ১৩, মুস্তাফিজের ১৪তম ওভারে ১৩ এবং আবু হায়দার রনির ১৭তম ওভারে ১৪ রান তুলে নিয়ে বিপদের কারণ হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু ১৮তম ওভারের প্রথম বলেই তাকে শিকার করেন মুস্তাফিজ। রাসেল ২১ বলে ৬ ছক্কা, ১ চারে করেছিলেন ৪৭। এরপরই বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। আর খেলা শুরু করা যায়নি। ১৭.১ ওভারে ৭ উইকেটে তখন ক্যারিবীয়দের স্কোর ১৩৫ রান! জেতার জন্য ১৭ বলে তখনও তাদের প্রয়োজন ছিল ৫০ রানের! ড্রেসিং রুমে বসে উভয় দলের খেলোয়াড় অপেক্ষা করছিলেন। ম্যাচ রেফারি ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশকে ১৯ রানে জয়ী ঘোষণার পরপরই মাঠে প্রবেশ করেন উচ্ছ্বাস করতে করতে। স্মারক হিসেবে উইকেটে থাকা স্টাম্প নিয়ে উল্লাস করেন। লডারহিলে উপস্থিত প্রায় ৫ হাজার বাংলাদেশী সমর্থকও উল্লাসে ফেটে পড়েন। মুস্তাফিজ সফলতম ছিলেন ৩১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে। এমন আনন্দে ভাসতেই পারে বাংলাদেশ দল, সাকিবেরও তো ভারমুক্তি। কারণ, টেস্ট সিরিজে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার পর ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ, কিন্তু প্রথম টি২০ ম্যাচেই সেন্ট কিটসে বৃষ্টি আইনে হেরে যায় ৭ উইকেটে। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে টানা দুই ম্যাচ জিতে মার্কিন মুলুকে বিজয় রচনা করেছে সাকিবের দল। অধিনায়ক হিসেবে এটিই প্রথম সিরিজ জয় সাকিবের। এই সিরিজের আগে ১১ ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে মাত্র ১টি জয় এনে দিতে পেরেছিলেন তিনি। এবার তিন ম্যাচের দুটিতেই জিতলেন এবং দলকেও সিরিজে বিজয়ী করলেন।
×