ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাঘায় স্কুল ভবন নদীতে বিলীন

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ৭ আগস্ট ২০১৮

বাঘায় স্কুল ভবন নদীতে বিলীন

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ ক’দিন আগেও শিশু শিক্ষার্থীদের কোলাহলে পরিপূর্ণ ছিল বিদ্যালয়ের সুন্দর পরিপাটি ভবনটি। তবে দেখতে দেখতে তা চোখের সামনেই নদীতে বিলীনের পথে এখন সদৃশ্য ভবনটি। একদিনের ব্যবধানে বিদ্যালয়ের চারটি পিলার চলে গেছে পদ্মার গর্ভে। ফলে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম (পাঠদান)। খবর পেয়ে সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্কুলসহ ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাসিমা খাতুন। মাত্র দুই বছর আগে জেলার বাঘা উপজেলার পদ্মার চরাঞ্চলে ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়। তবে চোখের সামনেই এই স্কুলটি ভাঙ্গনের মুখে নদীতে বিলীন হতে চলেছে। স্থানীয়রা জানান, ১৯৭৮ সালে স্থাপিত চকরাজাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি সর্বশেষ গত ১৪ বছরের ব্যবধানে পদ্মার ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে দুইবার। এবারও নদী ভাঙ্গনের কারণে ঠিক একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে নতুন করে যোগ হয়েছে এ অঞ্চলের একমাত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চকরাজাপুর বাজারও। পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ভাঙ্গন শুরু হওয়ায় ৫ দিন আগে বিদ্যালয়ের টিনশেড ভবনটি সরিয়ে নেয়া হয়। অনেকেই ধারণা করেছিল, ভাঙ্গন কমে গেলে এবারের মতো রক্ষা পাবে ইট দিয়ে তৈরি করা পাকা ভবনটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটিও আর রক্ষা করা গেল না। ইতোমধ্যে নতুন ভবনের চারটি পিলার চলে গেছে নদীতে। এখন খুব দ্রুত এটি সরিয়ে ফেলা প্রয়োজন। এ কারণে সোমবার স্কুল পরিদর্শন করতে এসছিলেন রাজশাহী জেলা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নাসিমা খাতুন। এ সময় বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারহানা দিল আফরোজ রুমি, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আরিফুর রহমান, চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিজুল আজম উপস্থিত ছিলেন। ভাঙ্গন কবলিত স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে জেলা প্রশাসক (অতিরিক্ত) বলেন , নদী তীরবর্তী এলাকায় ইট দিয়ে ভবন নির্মাণ না করে স্টিল (লোহা) সামগ্রী দিয়ে টিনশেড ভবন করা দরকার। যাতে করে বিপদ মুহূর্তে অন্যত্র সরিয়ে ফেলা যায়। তিনি এই ভবনের জানালা-দরজাসহ কি কি সামগ্রী রয়েছে তার তালিকা করে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে দেয়ার জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্ট দফতরে (মন্ত্রণালয়ে) প্রতিবেদন পাঠানোর মাধ্যমে বিদ্যালয়টি অন্যত্র সরিয়ে ফেলাসহ নতুন ভবন নির্মাণের আশ্বাস দেন। প্রসঙ্গত, এ বছর নদীতে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাঘা উপজেলার নদী তীরবর্তী ৯টি গ্রামের ১০ কিলোমিটার সীমানায় ভয়াবহ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। এই ভাঙ্গনের ফলে গত এক সপ্তাহে প্রায় দেড় হাজার বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে । এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আম, খেজুর ও পিয়ারা বাগান ও অন্য ফসলি জমির। নদী তীরবর্তী লোকজন জানান, যথাযথ উদ্যোগের অভাবে এলাকার প্রায় ৪ কিলোমিটার বাঁধ অরক্ষিত রয়েছে। গত ৭ বছরে পদ্মার ভাঙ্গনে এসব এলাকার প্রায় ৫শ বাড়িসহ ৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার এবং বিজিবি ক্যাম্প এবং কয়েক হাজার বিঘা আবাদি-অনাবাদি জমি চলে গেছে পদ্মার করাল গ্রাসে। এ ছাড়াও ভাঙ্গনে গৃহহারা হয়েছে অনেক পরিবার। কুড়িগ্রাম স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, জেলাধীন রৌমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গন রোধে নদের তীরে ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মানববন্ধন করেছে। সোমবার দুপুরের দিকে রৌমারী উপজেলার পশ্চিম পাখিউড়া, বাগুয়ারচর নৌকাঘাট হতে বাইশপাড়া পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙ্গন রোধে এ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়। এতে অংশ নেয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কৃষক, শ্রমিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রায় ১০ হাজার মানুষ। এ সময় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, রংপুর সুপারিনটেনডিং ইঞ্জিনিয়ার ও এন্ড এম সার্কেল ইঞ্জি. মোঃ হারুন অর রশিদ, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, কুড়িগ্রাম নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সফিকুল ইসলাম, উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী, রৌমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপঙ্কর রায়, রৌমারী নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ আন্দোলন বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আব্দুল কাদের মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফ মাস্টার প্রমুখ।
×