ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বুড়াগৌরাঙ্গের প্রবল তোড়ে বাঁধ বিলীন

গলাচিপায় হুমকির মুখে আট গ্রামের মানুষ

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ৭ আগস্ট ২০১৮

গলাচিপায় হুমকির মুখে আট গ্রামের মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ নদী শাসনের উদ্যোগ নেই। বরং নদীর পানির প্রবল তোড়ে বার বার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ বিলীন হচ্ছে। আবার তার পাশেই নতুন বেড়িবাঁধ তৈরি হচ্ছে। এভাবেই ভাঙ্গা-গড়ার খেলা চলছে দশকের পর দশক। এতে হচ্ছে শুধু অর্থ ব্যয়। কমছে না মানুষের দুর্ভোগ। বরং তিন ইউনিয়নের আট গ্রাম এখন হুমকির মুখে চলে এসেছে। নদীতে জোয়ারের পানি সামান্য বাড়লেই গ্রামগুলো তলিয়ে যাচ্ছে পানির নিচে। চাষাবাদ থেকে জনজীবন। সবকিছুই মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ চিত্র পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরকাজল, চরবিশ্বাস ও পার্শ্ববর্তী ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার মুজিবনগর ইউনিয়নের। পানি উন্নয়ন বোর্ড সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে মানুষ এবং লবণাক্ততার হাতে থেকে জমি, ফসল ও গবাদিপশু রক্ষার উদ্দেশে ওই তিন ইউনিয়নকে একই পোল্ডারের আওতায় নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। যার পোল্ডার নম্বর ৫৫/৩। স্থানীয়রা জানান, নব্বইয়ের দশকে নির্মাণ করার পর থেকে বুড়াগৌরাঙ্গ নদের প্রবল তোড়ে এ যাবত চরকাজল লঞ্চঘাট থেকে শুরু করে জিমতলা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধ অন্তত চার বার বিলীন হয়েছে। আর প্রতিবারই পানি উন্নয়ন বোর্ড নতুন করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে। বুড়াগৌরাঙ্গ নদের উৎসমুখ বঙ্গোপসাগরে পড়ায় এটি প্রায় সারাবছরই কমবেশি উত্তাল থাকে। যা বর্ষায় ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে। বুড়াগৌরাঙ্গের আগ্রাসী তোড়ে বেড়িবাঁধের সঙ্গে ধানী জমি থেকে শুরু করে এ যাবত অসংখ্য মানুষ ঘরবাড়ি ও বাগান থেকে শুরু যাবতীয় সম্পদ হারিয়েছে। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড কখনই এখানে নদী শাসনের কাজ করেনি। স্থানীয় বাসিন্দারা নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণের চেয়ে নদী শাসনে গুরুত্ব দিয়েছে এবং এ দাবিতে এলাকায় বহুবার মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কখনই এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়নি। সর্বশেষ আবারও তিন কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ বুড়াগৌরাঙ্গ নদ গিলে খেয়েছে। এতে করে ওই তিন ইউনিয়নের অন্তত এক লাখ মানুষ জলোচ্ছ্বাসের হুমকির মুখে পড়েছে। ভাঙ্গনের কাছাকাছি আট গ্রাম সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। বুড়াগৌরাঙ্গ নদে পানি কিছুটা বাড়লেই গ্রামগুলো তলিয়ে যাচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। চরবিশ্বাস ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেন বাবুল মুন্সি জানান, পূর্ণিমা-অমাবস্যার জোয়ারে গ্রামগুলো রীতিমতো পানির নিচে ডুবে থাকে। এ সময় হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে। কখনও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস কিংবা ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানলে গোটা এলাকা বিরানভূমিতে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সামুদ্রিক সাইক্লোনের সঙ্কেত জারি হলে এলাকার মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। পশ্চিম চরকাজল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাফর হাওলাদার জানান, বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেলে চরকাজল ইউনিয়নের ৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যাতায়াতে মারাত্মক সমস্যায় পড়ে। এতে লেখাপড়ায় বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। তার বিদ্যালয়টিও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায়। যার কারণে বিদ্যালয়ের পাঠদান ব্যাহত হয়। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান জানান, এখানে যেমন জরুরী ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রয়োজন। তেমনি নদী শাসনের উদ্যোগ না নেয়া হলে কখনই সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না। চরকাজল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রুবেল জানান, বেড়িবাঁধের অভাবে চরকাজলে অধিকাংশ এলাকা বর্ষা মৌসুমে তলিয়ে থাকে। এতে কৃষক সময়মতো ফসল ফলাতে পারছে না। গ্রামীণ অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
×