ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে আনন্দ স্কুলের কোটি টাকা লোপাট

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ৭ আগস্ট ২০১৮

কুড়িগ্রামে আনন্দ স্কুলের কোটি টাকা লোপাট

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম ॥ আনন্দ স্কুলের নামে চরম অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও পুকুরচুরির ঘটনা ঘটেছে। অস্তিত্ববিহীন এসব স্কুলের উপবৃত্তি, উপকরণ ও ঘরভাড়াসহ বরাদ্দের কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে। বেশিরভাগ এলাকায় স্কুল ঘর নেই, থাকলেও সেগুলোও পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। খাতা-কলমে স্কুল সচল দেখিয়ে বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। জানা যায়, হতদরিদ্র ও ঝরে পড়া শিশুদের স্কুলগামী করতে ‘রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন’ (রস্ক) প্রকল্প-২ আওতায় ২০১৪ সালে ৫ বছরের জন্য জেলার দুটি উপজেলায় ১৪৩টি আনন্দ স্কুলের কার্যক্রম শুরু হয়। এর মধ্যে নাগেশ্বরীতে ৯ ইউনিয়নে ৭৪টি স্কুলে ১ হাজার ৪৮৩ জন এবং রৌমারীতে ৬ ইউনিয়নে ৬৯টি স্কুল ১ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায় অধিকাংশ স্কুলের অস্তিত্ব নেই তবুও এসব স্কুলে নিয়মিত শিক্ষার্থী দেখিয়ে উপবৃত্তিসহ উপকরণের টাকা প্রদান করা হয়ে আসছে। এই স্কুল দেখভাল করার জন্য উপজেলায় একজন করে ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর রয়েছে। প্রতি বছর শিক্ষার্থীদের পোশাকের জন্য ৫শ’ টাকা, পরীক্ষার ৪শ’ টাকা এবং ঘর মেরামতের জন্য ৪শ’ টাকা বরাদ্দ থাকলেও স্কুল প্রতিষ্ঠার পর একবার দেয়া হয়। এ ছাড়াও প্রতি মাসে ১ম-৩য় শ্রেণী ২২০ টাকা, ৪র্থ-৫ম শ্রেণীর ৩শ’ টাকা করে উপবৃত্তি থাকলেও অনেক শিক্ষার্থী দু একশ’ টাকা করে পেয়েছে। আর অধিকাংশ শিক্ষার্থীর কপালে জোটেনি বাকি টাকা। স্কুলের শিক্ষকের বেতন মাসে ৩ হাজার টাকা এবং স্কুল ঘর ভাড়া ৪শ’ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। শিক্ষার্থীর টাকা প্রশাসনের নাকের ডগায় লোপাট হলেও নীরব ভূমিকায় প্রশাসন। এ দিকে আনন্দ স্কুলের পোশাক ও উপবৃত্তির টাকা দেবার খবর শুনে স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে অফিসার এলেই ভাড়া করা শিক্ষার্থী নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠান চালু দেখানো হয়। নাগেশ^রীর অভিভাবক আব্দুস সালাম, বক্কর মিয়া, ও তমিজ উদ্দিন জানান, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব স্কুল শুরুতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। শিক্ষক নিয়োগেও নেয়া হয় টাকা। প্রথম দিকে সাইনবোর্ড থাকলেও এখন সেগুলো বিলুপ্তির পথে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আনন্দ স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, আনন্দ স্কুলের টাকা নিয়ে অনেক অনিয়ম রয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন অনেক বড় মানুষ। ফলে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায় না। অনিয়মই এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানে। সোনালী ব্যাংক নাগেশ^রী শাখার সুপারভাইজার সেকেন্দার আলী টাকা বিতরণকালে জানান, এই স্কুলে শিক্ষার্থীদের মাঝে টাকা বিতরণ করতে এসেছি। কিন্তু এখানে কোন ছাত্র নেই। ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর এবং স্কুলের শিক্ষকগণ কূট-কৌশলের মাধ্যমে টাকা নেয়ার চেষ্টা করেছেন। পরে তিনি স্কুলে শিক্ষার্থী উপস্থিত না পেয়ে টাকা নিয়ে ফেরত চলে যান। টাকা ভাগবাটোয়ারার বিষয়টি অস্বীকার করে রস্ক প্রকল্পের উপজেলা ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর এরশাদ হোসাইন দোষ চাপালেন ব্যাংক কর্মকর্তার ওপর। তবে তিনিও স্বীকার করেন রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে স্কুল না থাকলেও সেগুলো চালু দেখানো হয়েছে।
×