ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তিন সেতু ঝুঁকিতে

পটিয়ার শ্রীমাই খালে বালু উত্তোলন

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ৭ আগস্ট ২০১৮

পটিয়ার শ্রীমাই খালে বালু উত্তোলন

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটিয়া, ৬ আগস্ট ॥ পটিয়া উপজেলার শ্রীমাই খালের বালু লুট চলছে প্রকাশ্যে। ফলে রেলওয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি সেতু ও সওজের ২টি ব্রিজ বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যে কোন মুহূর্তে ওই ৩টি সেতু ধসে পড়ে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলার বাহুলী, কচুয়াই ও ভাটিখাইন ব্রিজ এলাকা থেকে প্রতিদিন অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। রেলওয়ের ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মাসোহারা দিয়ে একটি চক্র বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। সম্প্রতি সময়ের বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে পানিতে শ্রীমাই খালের ওপর থেকে বালু নিচে নেমে যায়। ওই বালু বাহুলী, ভাটিখাইন ও কচুয়াই এলাকা থেকে প্রতিদিন পিকআপ করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে বাহুলী এলাকায় খালের পাড়ে বালু উত্তোলনের জন্য একটি ড্রেজার মেশিন বসানো হয়েছে। গ্রামবাসী অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশকে জানানোর পরও তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ। দিনে রাতে বালু উত্তোলনের ফলে খালের দুই পাড় ভেঙ্গে বিলীন হচ্ছে আশপাশের শত শত একর ফসলি জমি। একইভাবে রেলওয়ের সেতু ও সওজের সেতুর গোড়া থেকে বালু উত্তোলনের ফলে সেতু দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। অভিযোগ ওঠেছে, সরকারী দলের একটি মহল ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে খালের বালু উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করছে। এ দিকে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বাণিজ্য নিয়ে বর্তমানে দুটি গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। এই বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যে কোন মুহূর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। রেলওয়ে ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পটিয়ার শ্রীমাই খালের ওপরে রয়েছে রেলওয়ের একটি সেতু। গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুর ৫০ ফুট দক্ষিণে রয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি সেতু। শ্রীমাই খালটি উপজেলার পূর্ব হাইদগাঁও পাহাড়ী এলাকা থেকে শুরু। এটি হাইদগাঁও, বাহুলী, কচুয়াই, ভাটিখাইন, ছনহরা হয়ে চানখালী খাল ও কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। শ্রীমাই খালের হাইদগাঁও, কচুয়াই, বাহুলী এলাকার কয়েকটি পয়েন্ট সরকারীভাবে ইজারা দেয়া হলেও গত কয়েক বছর ধরে ইজারা ছাড়াই একটি মহল লাখ লাখ টাকার শ্রীমাই খালের বালু লুট করে নিচ্ছে। পটিয়া পৌরসভা যুবদল সভাপতি মোহাম্মদ শাহাজাহান সরকারী নিয়মনীতি মেনে ২০১৮ সালের বালুমহল ইজারার জন্য ২ লাখ ৭২ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। তাকে বালু উত্তোলনের আদেশও দিয়েছেন। শাহজাহান নিজেই অভিযোগ করেছেন, বালু মহালের ইজারার টাকা তিনি জমা দিলেও বাহুলী ও রেল সেতুর নিচ থেকে আরও কয়েকজন ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। মাঝে মধ্যে থানা পুলিশ বালুসহ পিকআপ জব্দ করলেও গাড়ি পুনরায় ছাড়িয়ে নিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলছে। পটিয়া পৌরসভা যুবলীগ নেতা ও বাহুলী গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আবছার অভিযোগ করেছেন, তাদের এলাকায় বর্তমানে একটি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। তাছাড়া রেল ও সওজের সেতুর নিচ থেকে প্রতিদিন পিকআপে বালু তুলে নিয়ে যাচ্ছে। জনপ্রতিনিধি ও তাদের দলীয় প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি জড়িত থাকার কারণে এলাকার লোকজন ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। অবৈধভাবে বালু লুটের বিষয়টি গ্রামবাসী স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছেন। গাইবান্ধা নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, গাইবান্ধায় সরকারী কোন বালুমহাল না থাকায় নদ-নদী ও ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করেই সকল কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে যেমন নদ-নদীগুলোতে ভাঙ্গন দেখা দিচ্ছে তেমনি ফসলি জমি ভেঙ্গে পড়ছে বালু উত্তোলনের গর্তে। এতে করে একদিকে যেমন মানুষ নদীতে সহায়-সম্বল হারিয়ে আশ্রয়হীন হচ্ছে অপরদিকে তেমনি দিন দিন ফসলি জমির পরিমাণও কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া বালুমহাল না থাকায় সরকারও প্রতি বছর কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ দিকে ইতোপূর্বে বালু উত্তোলন করার গর্তে ডুবে তিনজন শিশুর প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, ভবন, রাস্তা, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ, নিচু জমি ও গর্ত ভরাট করাসহ সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন কাজে বালু প্রয়োজন পড়ে। বর্তমানে জেলায় সরকারী কোন বালুমহাল না থাকায় ফসলি জমি, পুকুর, ব্রহ্মপুত্র নদ, তিস্তা, যমুনা, করতোয়া, বাঙালী, ঘাঘট, আলাই ও মানস নদীসহ যত্রতত্র বিভিন্নস্থান থেকে বালু উত্তোলন করেই এসব উন্নয়নমূলক কাজ করা হচ্ছে। সব কাজ ঠিকমতো হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সরকারীভাবে বালুমহাল না থাকায় সরকার শুধু রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সাঘাটা উপজেলার ঘুড়িদহ ইউনিয়নের মথরপাড়া গ্রামে ফসলি জমি থেকে বালু উত্তোলন করা হয়েছে। আশপাশের জমির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকায় বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়নি। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাখালবুরুজ ইউনিয়নের কাজীপাড়া ও হরিনাথপুর বিশপুকুর এবং মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের চরবালুয়া গ্রামে কাটাখালি নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকা থেকে পাঁচটি শ্যালোইঞ্জিনচালিত মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় এই বালু উত্তোলনের ধারাবাহিকতা চলছেই। আর এসব কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন প্রভাবশালী দলের নেতা, এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি, ঠিকাদারসহ জনপ্রতিনিধি ও তাদের আতœীয়রা।
×