ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার আদিবাসীরা ভাসমানে পরিণত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৭ আগস্ট ২০১৮

মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার আদিবাসীরা ভাসমানে পরিণত হচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হত্যাকা-, ভূমি দখল, নির্যাতন সর্বোপরি চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়ে দেশের আদিবাসীদের মধ্যে দেশান্তরিত হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)। তিনি বলেন, দিনে দিনে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীকে ভাসমান জনগোষ্ঠীতে পরিণত করা হয়েছে। তারা সর্বস্ব হারিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে দেশান্তরী হতে বাধ্য হচ্ছে। তাদের জীবনধারা আজ বিপর্যস্ত ও বিলুপ্তপ্রায়। আদিবাসীদের অধিকার আদায় ও সমস্যা সমাধানে কোন সরকারই আন্তরিক নয়। রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে সব সময়ই আদিবাসীদের প্রতি বৈরী মনোভাব কাজ করে। বাংলাদেশে আদিবাসীদের মানবিক পরিস্থিতি ভাল নয়। তাদের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। সংগ্রামের মাধ্যমেই আদিবাসীরা তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে। বিশ্ব আদিবাসী দিবস উপলক্ষে সোমবার রাজধানীর একটি পাঁচতারা হোটেলে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রংয়ের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য জান্নাত-ই-ফেরদৌস, আদিবাসী ফোরামের সহ-সাধারণ সম্পাদক ডাঃ গজেন্দ্রনাথ মাহাতো এবং বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা। আগামী ৯ আগস্ট পালিত হবে বিশ^ আদিবাসী দিবস। এবার জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত ২০১৮ সালের আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘আদিবাসী জাতিসমূহের দেশান্তর : প্রতিরোধের সংগ্রাম’। আদিবাসীদের উচ্ছেদ হওয়ার খ-চিত্র তুলে ধরে ফোরামের সভাপতি সন্তু লারমা বলেন, বাংলাদেশে আদিবাসীদের ইতিহাস নিজভূমি থেকে উচ্ছেদের ইতিহাস, জোরপূর্বক দেশান্তরের ইতিহাস, নির্মম দেশান্তরকরণের ইতিহাস। এখানে ১৯৪৭ সালের পর বার বার আদিবাসীদের দেশান্তরী হতে বাধ্য করা হয়েছে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চল, সিলেট, উত্তরবঙ্গে, পার্বত্য চট্টগ্রামে ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে অগণিত আদিবাসী মানুষ দেশান্তরিত হয়েছে। ১৯৬০ সালে কাপ্তাই জল বিদ্যুত প্রকল্পের কারণে প্রায় লক্ষাধিক আদিবাসী উচ্ছেদের শিকার হন এবং তাদের মধ্যে ৬০ হাজারের অধিক আদিবাসী মানুষ ভারত ও মিয়ানমারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। এখনও আদিবাসী অঞ্চলের মানুষ নীরবে দেশত্যাগ করছেন। সংবাদ সম্মেলনে ৮ দফা দাবি উত্থাপন করে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে সন্তু লারমা বলেন, আদিবাসী জাতিসমূহের সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ আদিবাসীদের ওপর সব প্রকার নিপীড়ন ও নির্যাতন বন্ধের লক্ষ্যে একটি আদিবাসী অধিকার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে। মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করে আদিবাসীদের জোরপূর্বক দেশান্তরকরণ প্রক্রিয়া বন্ধ করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আদিবাসীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং জাতীয় বাজেটে আদিবাসীদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অবিলম্বে যথাযথ বাস্তবায়ন এবং এ লক্ষ্যে সময়সূচীভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। ভূমি কমিশন আইন অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ২০০৭ সালে গৃহীত আদিবাসী অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র অনুসমর্থন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। আর আইএলও কনভেনশন ১০৭ বাস্তবায়ন ও ১৬৯নং কনভেনশন অনুস্বাক্ষর করতে হবে। সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা সমাধানের জন্য ভূমি কমিশন গঠন, মধুপুর গড়ে গারো ও কোচদের ভূমিতে ঘোষিত রিজার্ভ ফরেস্ট বাতিল করতে হবে। মৌলভীবাজার জেলার ঝিমাই ও নাহার খাসিয়াপুঞ্জির খাসিয়াদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত এবং চা বাগানের লিজ বাতিল করতে হবে। আদিবাসী নারীদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তাদের ওপর এ পর্যন্ত যে সমস্ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা (ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যা, অপহরণ, বৈষম্য-নির্যাতন ইত্যাদি) ঘটেছে সেসব ঘটনার পূর্ণ তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
×