অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চামড়া শিল্প নগরীর জন্য আলাদা কোন নিয়ম চালু করা যাবে না। প্লট ও সিইটিপি খরচ একসঙ্গে দিয়েই জমি রেজিস্ট্রেশন করতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। এ সময় শিল্পমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেন, এতো খরচ একসঙ্গে দিয়ে সারা জীবনেও জমি রেজিস্ট্রেশন করতে পারব না। তখন ক্ষিপ্ত হয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, খরচ না দিতে পারলে রেজিস্ট্রেশন করবেন না। ব্যবসা কিভাবে চালাবেন এটি আপনাদের বিষয়। আপনারা সব সময় ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করেন। এটি চলবে না। এতদিন ব্যবসা করেছেন, লাভ করেছেন। এখন এত বাহানা দিচ্ছেন কেন? চামড়া শিল্প নগরীর জন্য আলাদা কোন নিয়ম চালু করা যাবে না। জমির মূল্য এবং সিইটিপির নির্মাণ খরচ একসঙ্গে পরিশোধ করে সাভার চামড়া শিল্পনগরীতে বরাদ্দ প্রাপ্ত প্লট রেজিস্ট্রেশন করতে হবে বলে জানান মন্ত্রী।
সোমবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে চামড়া শিল্পের বিভিন্ন সমস্যা এবং তার সমাধানের বিষয়ে চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মন্ত্রী একথা বলেন।
বৈঠকে শিল্প সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, বিসিক চেয়ারম্যান মুশতাক হাসান মুহ. ইফতিখার, বিএসটিআই-এর মহাপরিচালক সরদার আবুল কালাম, বাংলাদেশ ফিনিস লেদার, লেদার গুডস এ্যান্ড ফুট ওয়্যার এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমদে মাহিন, বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহিন আহমেদসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। শিল্পমন্ত্রী বলেন, ওষুধ শিল্পের জন্য বিসিক যে এপিআই শিল্প পার্ক তৈরি করছে, সেখানেও উদ্যোক্তারা একইসঙ্গে প্লট ও সিইটিপির ব্যয় পরিশোধ করছেন। চামড়া শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য এর ব্যতিক্রম কোন নিয়ম চালু করা সমীচীন হবে না।
বৈঠকে জানানো হয়, সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগারের (সিইটিপি) নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে ৯৮ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে তরল বর্জ্য পরিশোধনে সিইটিপি যথাযথভাবে কাজ করছে। শিল্পনগরীর রাস্তাঘাট মেরামতে বিসিক অগ্রাধিকারভিত্তিতে উদ্যোগ নিয়েছে। তিন মাসের মধ্যে মেরামতের কাজ সম্পন্ন হবে। পাশাপাশি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে বলে সভায় তথ্য প্রকাশ করা হয়।
বৈঠকে চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে দ্রুত কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। এ সময় সংগঠনের নেতারা বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদে শিল্প নগরীতে বর্জ্যরে পরিমাণ বাড়বে। এগুলো ব্যবস্থাপনায় এখন থেকেই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ট্যানারি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে শ্রমিকদের সচেতন করতে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে কর্মসূচী নেয়া হবে বলে তারা উল্লেখ করেন।
সংগঠনের নেতারা জানান, চামড়া শিল্প বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানিখাত। ২০২১ সাল নাগাদ এ খাতে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এটি অর্জনের জন্য কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ কমপ্লায়েন্স ইস্যুতে উন্নতি ঘটাতে হবে। তারা প্রাথমিক পর্যায়ে শুধুমাত্র প্লটের মূল্য পরিশোধ করে জমি রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দিতে শিল্পমন্ত্রীর নির্দেশনা কামনা করেন। তারা চামড়া শিল্পে ব্যবহৃত কেমিক্যাল আমদানি খরচ কমাতে ‘সেন্ট্রাল বন্ডেড ওয়্যার হাউজ’ সুবিধা চান। একইসঙ্গে তারা যেসব ট্যানারির নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে, সেগুলোর অনুকূলে পাওনা ক্ষতিপূরণের টাকা দ্রুত ছাড়ের দাবি জানান। জবাবে শিল্পমন্ত্রী বলেন, কেমিক্যাল আমদানির ক্ষেত্রে ‘সেন্ট্রাল বন্ডেড ওয়্যার হাউজ’ সুবিধা দেয়ার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বরাবর সুপারিশ করা হবে। তিনি শিল্প উদ্যোক্তাদের অন্যান্য দাবি পূরণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: