ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ৭ আগস্ট ২০১৮

তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির নিত্যনতুন ব্যবহারে সারা বিশ্ব যখন এগিয়ে যাচ্ছে, তখন আমরা নেমেছি এর অপব্যবহারের প্রতিযোগিতায়। এর সর্বশেষ উদাহরণ নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা। এহেন কুকীর্তি ও হীন প্রচেষ্টায় জড়িত রয়েছে রাজধানীসহ দেশব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কতিপয় স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ও চক্র। ফটোশপে হামলা-ভাংচুরের ছবি এডিট করে, অশ্লীল ও আপত্তিকর ভাষায় লিখিত ব্যনার-ফেস্টুন-স্লোগান ইত্যাদি লিখে সর্বোপরি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার উদ্দেশ্যে বহুবিধ পোস্ট দেয়া হচ্ছে ফেসবুক, ইন্টারনেট, ইউটিউবেÑ যা ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে মুহূর্তেই। এতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বভাবতই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এবং উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন মহলে। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে, সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোই তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। হাতেনাতে এর প্রমাণও মিলেছে। কুমিল্লায় অবস্থানরত এক শিবির নেতাকে বিএনপির এক শীর্ষ নেতার মোবাইল ফোনে ঢাকায় গিয়ে লোকজন জড়ো করে আন্দোলনে যোগদানের আহ্বান রীতিমতো উস্কানির নামান্তর বৈকি। এর জন্য অবশ্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম আদালতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) ধারা এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাও হয়েছে। যা যথাযথ ও যুক্তিসঙ্গত। অন্যদিকে ফেসবুক লাইভে রাজধানীর ঝিগাতলায় আন্দোলনরত দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু, একজনের চোখ উপড়ে ফেলাসহ চার ছাত্রীকে আওয়ামী লীগ অফিসে গুম ও ধর্ষণের অপপ্রচারের অভিযোগে বিএনপিপন্থী এক মডেল-অভিনেত্রীকে উত্তরা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এর বাইরেও রয়েছে আরও নানা গুজব। সরকারবিরোধী বিভিন্ন লেখা ও স্লোগান, অনাহুত ও অন্যায্য যে আক্রমণ থেকে এমনকি অব্যাহতি পাননি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও। অথচ বাস্তবতা হলো, নিরাপদ সড়ক চাইয়ের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবিসহ যে কোন যুক্তিসঙ্গত ও ন্যায্য দাবি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে মেনে নেয়ার সদিচ্ছা ব্যক্ত করা হয়েছে। তবে যে কোন দাবি মেনে নেয়া এবং তা বাস্তবায়নের জন্য আইনের আবশ্যক হয় এবং গণতান্ত্রিক বিধিবিধানে তা পাস করতে সময়েরও প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের এই বিষয়টি অবশ্যই বুঝতে হবে। শিক্ষক এবং অভিভাবকদেরও এ বিষয়ে দায়িত্ব রয়েছে বৈকি। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে সপ্তাহের অধিককাল ধরে চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সর্বস্তরের জনসাধারণ অশেষ ভুক্তভোগী হলেও সমর্থন জানিয়েছে এবং সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শন করেছে। মোবাইল, ফেসবুক, ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া গুজবে কান দেয়ার অবকাশ তাদের নেই, থাকা উচিতও নয়। ফেসবুক, তথ্যপ্রযুক্তি, ইন্টারনেটে অপপ্রচার ও উস্কানিমূলক বক্তব্য এবং ছবি প্রচার প্রতিরোধে স্থায়ী কোন আইন করা যায় কিনা, তা ভেবে দেখতে হবে সংশ্লিষ্টদের। আইনের যথাযথ ব্যবহার যেমন প্রত্যাশিত, তেমনি আইনের অপপ্রয়োগও নিন্দনীয়। তবে দেশ, সম্পদ ও জাতির জন্য ক্ষতিকর তথা ধ্বংসাত্মক তৎপরতাকে উৎসাহিত করে এমন যে কোন উদ্যোগ ও প্রয়োগকে অবশ্যই নিরুৎসাহিত করা অত্যাবশ্যক। কিছুদিন আগে অনুষ্ঠিত কয়েকটি সিটি নির্বাচনেও ফেসবুক, মোবাইল ও ইন্টারনেটের ব্যাপক অপব্যবহারের প্রমাণ মিলেছে। এসব ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
×