ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অস্থির সময়ে শান্তির প্রত্যাশায় রবীন্দ্র প্রয়াণবার্ষিকী পালন

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ৭ আগস্ট ২০১৮

অস্থির সময়ে শান্তির প্রত্যাশায় রবীন্দ্র প্রয়াণবার্ষিকী পালন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সেতারেতে বাঁধিলাম তার, গাহিলাম আরবার/মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক ...। বাঙালীর যাপিত জীবনে এভাবেই তিনি বিরাজমান। আপন সৃষ্টির নির্যাসে প্রতিনিয়ত নির্মাণ করে চলেছেন জাতিসত্তার মননকে। পরিণত হয়েছেন বাঙালীর প্রাণের মানুষে সেই। সৃষ্টির আলোয় ছড়িয়েছিলেন রবির কিরণ। শিল্প-সাহিত্যের আলোকধারায় ছুঁয়েছিলেন বাঙালীর মন-প্রাণ। দিয়েছিলেন বাঙালীর সংস্কৃতিবান হয়ে ওঠার পথের দিশা। তাঁর হাত ধরেই বাংলা সাহিত্য জাতীয়তার গ-ি পেরিয়ে পেয়েছিল আন্তর্জাতিকতার ঠিকানা। স্বদেশের ঠিকানা ছাড়িয়ে বৈশ্বিকতায় ঠাঁই করে নিয়েছিল বাঙালিত্বের গৌরববৌধ। বাংলা পঞ্জিকার হিসেবে সোমবার ছিল বাইশে শ্রাবণ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৭তম প্রয়াণবার্ষিকী। বিশ্বব্যাপী জেগে ওঠা উগ্রবাদ ও হিংসা আস্ফালনের অস্থির সময়ে কবির মহাপ্রস্থানের দিনটিতে বারংবার উচ্চারিত হয়েছে শান্তির বারতা। ব্যক্ত হয়েছে হিংসার পথ দূরে ঠেলে মানবতার পথে ধাবিত হওয়ার প্রত্যয়। রবির সৃজনী শক্তির আলোয় উগ্রপন্থার অন্ধকার শক্তির বিরুদ্ধে গাওয়া হয়েছে জীবনের জয়গান। নানা সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে পালিত হয়েছে কবিগুরুর প্রয়াণবার্ষিকী। এ উপলক্ষে পত্রিকাগুলোয় প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বকবিকে নিবেদিত বিশেষ সংবাদ। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোয় ছিল বহুমাত্রিক আয়োজন। কোথাও উচ্চারিত হয়েছে দোলায়িত ছন্দে বিশ্বকবির অবিনাশী কবিতা। আবার কোন চ্যানেলে দিনভর নানা শিল্পীর সুরেলা ধ্বনিতে গীত হয়েছে রবীন্দ্রসঙ্গীত। কোথাও বা প্রচারিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথ রচিত নাটক। বিভিন্ন বেতারেও হয়েছে নানা অনুষ্ঠান। প্রয়াণবার্ষিকীতে কবিগুরুকে নানা আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, ছায়ানটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। প্রাতিষ্ঠানিকতার বাইরে সংস্কৃতিবান বাঙালী প্রাত্যহিক জীবনাচারে সহজাতভাবেই স্মরণ করেছে কবিগুরুকে। ‘আজকের বিশ্বে রবীন্দ্রসৃজনের প্রাসঙ্গিকতা’ : কবির প্রয়াণবার্ষিকী উপলক্ষে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। ‘আজকের বিশ্বে রবীন্দ্রসৃজনের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক একক বক্তৃতা করেন নাট্যজন আতাউর রহমান। বিকেলে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। একক বক্তৃতায় আতাউর রহমান বলেন, রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণ দিবসে তাঁকে স্মরণ করতে গিয়ে বলতে হয় মৃত্যুকে তিনি আবিষ্কার করেছেন অমৃত করে। কারণ, তিনি বিশ্বাস করতেন মহৎ মানবাত্মার কোন বিলয় নেই। তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ বিশেষ করে আমাদের পূর্ববঙ্গেরও। কারণ পূর্ববঙ্গে অবস্থান তাঁকে পরিপূর্ণ রবীন্দ্রনাথ করেছে, মাটি ও মানুষের সঙ্গে নিবিড় আত্মীয়তার বন্ধনে বেঁধেছে। রবীন্দ্রনাথের নাটকে আমরা লক্ষ্য করব আগল ভাঙ্গার পালা। তিনি অচলায়তন, রক্তকরবী, রথের রশি, রাজা কিংবা ডাকঘর-এর মতো নানামাত্রিক নাটকে একদিকে যেমন কায়েমি স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন, ক্ষমতার মদমত্ততার বিরুদ্ধে স্বর শানিত করেছেন। সভাপতির বক্তব্যে আনিসুজ্জামান বলেন, জাতীয়তাবাদের উর্ধে উঠে আন্তর্জাতিকতাবাদের সাধনার সূত্রে রবীন্দ্রনাথ আজ ও আগামীতে প্রাসঙ্গিক হয়ে রয়েছেন। তাঁর প্রাসঙ্গিকতার বহু ক্ষেত্রের মধ্যে রয়েছে শিক্ষাভাবনা ও পল্লী পুনর্গঠন চিন্তা। রবীন্দ্রনাথ প্রকৃতিলগ্ন কবি ও ভাবুক কিন্তু একই সঙ্গে সভ্যতার বিকাশে প্রযুক্তির ভূমিকাকেও স্বাগত জানিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা এভাবে আমাদের প্রাণের বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে। মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, বাঙালী জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রকে রবীন্দ্রনাথ তাঁর সৃষ্টির ঐশ্বর্যে আলোকিত করে রেখেছেন। সাংস্কৃতিক পর্বে ওই পোহাইল তিমির রাতি শীর্ষক গীতিনৃত্যালেখ্য পরিবেশন করে শুদ্ধ সঙ্গীত চর্চা কেন্দ্র রক্তকরবী। কবিগুরু স্মরণে শিল্পকলার আয়োজন ॥ কবিতা দোলায়িত ছন্দের সঙ্গে নৃত্যগীতে পরিবেশনায় বিশ্বকবিকে স্মরণ করেন শিল্পকলা একাডেমি। সঙ্গে ছিল কবিকে নিবেদিত আলোচনায়। একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক ড. বেগম আকতার কামাল। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। সাংস্কৃতিক পর্বে শুরুতে ‘আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে’ ও ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা’ গানের সুরে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করেন একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা। এরপর আরও কয়েকটি নৃত্যে পরিবেশিত হয়।
×