ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের আলোচনায় বি চৌধুরী

ছাত্র আন্দোলনে সরকার ন্যায়ের বদলে অন্যায় পদক্ষেপ নিচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৭ আগস্ট ২০১৮

ছাত্র আন্দোলনে সরকার ন্যায়ের বদলে অন্যায় পদক্ষেপ নিচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে গণতন্ত্র নেই, গুণ্ডাতন্ত্র আছে। গুণ্ডারা লাঠি নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের ওপর হামলা করছে। গুণ্ডা লেলিয়ে দিয়ে ঐক্যবদ্ধ মানুষকে দমানো যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। রাজধানীর প্রেসক্লাবে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে বিকল্পধারা সভাপতি একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ন্যায়বিচারের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনে ন্যায়ের বদলে অন্যায় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। সরকারী দলের গু-ারা ছাত্রদের ওপর হামলা করছে। তিনি বলেন, দেশে ভারসাম্যের রাজনীতি ছাড়া সঙ্কটের সমাধান হবে না। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন জাতীয় ঐক্যের পথ খুলে দিয়েছে। এখন আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে। সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের প্রতিবাদ ও সংহতি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে বক্তৃতায় তারা এসব মন্তব্য করেন। ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, গু-ারা পুলিশের সঙ্গে লাঠি নি৬েয় ঘুরে বেড়াচ্ছে, ছাত্রদের ওপর হামলা করছে। পুলিশ-গু-া পার্টনারশিপ হতে পারে না। আমরা গু-ামুক্ত বাংলাদেশ চাই। জীবনের বিনিময়ে হলেও গু-াতন্ত্র মুক্ত হোক। আমি এই গু-াতন্ত্রের মধ্যে বেঁচে থাকতে চাই না। চাই যে আমাকে গুলি করে মারা হোক। তাহলে অন্তত বলতে পারব গু-াতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে মারা গেছি। তিনি বলেন, যে দেশে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদকে জীবন দিতে হয়েছে, সেই বাংলাদেশে গু-াতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে এটা মেনে নেয়া যায় না। যে দেশের জন্য লাখো শহীদ জীবন দিয়েছে, যাদের লাশও আমরা পাইনি, তারা আমাদেরকে ঋণী রেখে গেছেন। একটা দেশ রেখে গেছেন, যেখানে সভ্যতা থাকবে, মানবাধিকার থাকবে। গু-াতন্ত্র থাকা মানে তাদেরকে অপমান করা। দেশে অসুস্থ শাসন ব্যবস্থা চলছে। তরুণ ছাত্রদের সাহায্য না করে সরকার তাদের ওপর গু-া লেলিয়ে দিয়েছে। তরুণ ছাত্ররা যা দেখাল তা হলো জাগ্রত বিবেক। কিন্তু যারা লাঠি ও অস্ত্র নিয়ে মাঠে নেমেছে, তাদেরকে কোন ছাত্র সংগঠন বলব না। এরা গু-া। এদের থেকে দেশকে মুক্ত করা জাতীয় কর্তব্য। আগস্ট মাসে বঙ্গবন্ধুকে অপমান করা হচ্ছে। এই মাসে গু-ারা লাঠি নিয়ে নিরীহ মানুষের ওপর হামলা করছে। এটা কি বঙ্গবন্ধুকে সম্মান জানানোর প্রক্রিয়া। উনার ছবি লাগালে সম্মান জানানো হয় না। বঙ্গবন্ধু জীবনের বিনিময়ে যে সভ্যতা আমাদের মধ্যে রেখে গেছেন, সেই সভ্যতার বিরুদ্ধে আজকে গু-া লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ‘ছাত্ররা ন্যায়বিচার চেয়েছে। সরকারী দলের গু-ারা ছাত্রদের ওপর হামলা করেছে। একজন মা হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি এতে উদ্বিগ্ন হবেন না?’ ভারসাম্যের রাজনীতি ছাড়া দেশের সঙ্কটের সমাধান হবে না বলেও মনে করেন তিনি। শিক্ষার্থীরা জাতীয় ঐক্য তৈরির সুযোগ করে দিয়েছে-ফখরুল ॥ এদিকে সমাবেশে বক্তৃতাকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জাতীয় ঐক্য তৈরি করার সুযোগ করে দিয়েছে। তাদের এই আন্দোলন আমাদেরকে নাড়া দিয়েছে। জাতীয় ঐক্য ছাড়া এই স্বৈরাচারী, ফ্যাসিবাদ সরকারের হাত থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। ছেলেরা আমাদের একটা সুযোগ করে দিয়েছে। এখন দায়িত্ব সব রাজনৈতিক দলের জাতির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করা। তার বিরুদ্ধে মামলা হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, শুনেছি যে নতুন করে আমার নামে একটি মামলা হয়েছে। মামলাকে এখন আর বেশি কিছু মনে করি না। মামলা কোন সমস্যা নয়। আমার বিরুদ্ধের মামলার সংখ্যা ৮৬। ৭৮ হাজারের বেশি মামলা হয়েছে আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। বেশিরভাগ নেতার নামে ৪০-৫০টি করে মামলা রয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা রয়েছে। অনেকবার কারাগারে গিয়েছি, নির্যাতনের শিকার হয়েছি। মূল সমস্যা হচ্ছে যে ছেলেরা আন্দোলন করে মরছে তাদের জন্য কী বসবাসযোগ্য বাংলাদেশ রেখে যেতে পারব। ফ্যাসিস্ট শক্তি সব তছনছ করে দিচ্ছে। গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা করে তাদের মুখ বন্ধ করতে চাইছে। ছাত্ররা ঐক্যের পথ দেখিয়ে দিয়েছে। এখন আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে। জাতীয় ঐক্য ছাড়া দেশের ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, তৃতীয় পক্ষ বলতে অন্য কিছু নেই। শেখ হাসিনা ভূত দেখছেন। ছাত্রদের ওপর হামলা করলে তাদের অভিভাবক ও সচেতন মানুষ রাস্তায় নামবেই, এতে তৃতীয় পক্ষ খোঁজার কিছু নেই। বিনা ভোটে আবার ক্ষমতায় যেতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরউল্লাহ চৌধুরী রাষ্ট্রের মেরামত চলছে, মেরামতটা দ্রুত হওয়া প্রয়োজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুলের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহীম।
×