ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দৃকের প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল ৭ দিনের রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৭ আগস্ট ২০১৮

দৃকের প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল ৭ দিনের রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দায়ের মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এর আগে সোমবার বিকেলে তাকে আদালতে তুলে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) আরমান আলী। এদিকে শহিদুলের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন ও জোতির্ময় বড়ুয়া রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতের নিবন্ধন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে কড়া নিরাপত্তা ও পুলিশী পাহারার মধ্যে খালি পায়ে শহিদুলকে এজলাসে তোলা হয়। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পরিদর্শক আরমান আলী তার বিরুদ্ধে দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। তার পক্ষে জামিন আবেদনের শুনানি করতে ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, এ্যাডভোকেট প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস, জীবনানন্দ চন্দ্র জয়ন্তসহ ১০-১২ আইনজীবী আদালতে উপস্থিত আছেন। আদালত শহিদুল আলমের জামিন নামঞ্জুর করে তার ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠায়। এর আগে বিকেলে ডিবি (উত্তর) পরিদর্শক মেহেদী হাসান বাদী হয়ে শহিদুলের বিরুদ্ধে রমনা থানায় আইসিটি এ্যাক্টে মামলা দায়ের করেন। পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল অধিকার আন্দোলনের সঙ্গেও যুক্ত। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত শনি ও রবিবার জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েকবার ফেসবুক লাইভে আসেন তিনি। ওই আন্দোলনের বিষয়ে আল জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি সরকারের সমালোচনাও করেন। এরপর রবিবার রাতে শহিদুলকে তার ধানম-ি ৯/এ সড়কের বাসা থেকে উঠিয়ে নেয়া হয় বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়। সোমবার সকালে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তারা ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে গেছেন। বিকেলে মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, তার বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় তিনিই একমাত্র আসামি। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় করা এ মামলায় ‘কল্পনাপ্রসূত তথ্যের’ মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে ‘মিথ্যা প্রচার’ চালানো, উস্কানিমূলক তথ্য উপস্থাপন, সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ ও অকার্যকর’ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘অবনতি ঘটিয়ে’ জনমনে ‘ভীতি ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে’ দেয়ার ষড়যন্ত্র এবং তা বাস্তবায়নে ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ‘অপপ্রচারের’ অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শহীদুল আলমের স্ত্রী রেহনুমা আহমেদ জানান, ফটোসাংবাদিক ও অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলা করা হবে। তিনি বলেন, আমি ডিবি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলছি। তারা আমাকে জানিয়েছে, শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে আইসিটি এ্যাক্টে মামলা দেবে। শহিদুল নাকি তথ্যপ্রযুক্তি আইনে অপরাধ করেছে। তারা গ্রেফতারের বিষয়টিও স্বীকার করেছে। তবে তার অপরাধের বিষয় আমাকে কিছু তারা বলেনি। রেহনুমা জানান, রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ‘ডিবি পুলিশ’ পরিচয় দিয়ে তার ধানম-ির বাসায় চতুর্থ তলায় তাদের ফ্ল্যাটে ঢুকে শহিদুল আলমকে তুলে নিয়ে যায়। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে আরও তিনজনকে ৫ দিনের রিমান্ডে ॥ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে উস্কানি দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতারকৃত তিনজনের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তদন্ত কর্মকর্তা ৭ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে আসামিদের আইনজীবী রিমান্ড আবেদন বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম (এসিএমএম) আসাদুজ্জামান নূর প্রত্যেকের পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলাম জানান, রবিবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ দমন বিভাগের সদস্যরা মাহবুবুর রহমান আরমান (৩০), আলমগীর হোসেইন (২৭) ও সাইদুল ইসলাম (৩১) নামে তিনজনকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, মেমরিকার্ডসহ ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড ও গ্রুপসমূহ জব্দ করা হয়েছে। এডিসি নাজমুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃত মাহবুবুর রহমান আরমান নিজেকে সাইবার এ্যানালিস্ট বলে পরিচয় দিয়েছে। সে সাইবার মাহবুব নামেও পরিচিত। সাইবার সেবা দানের কথা বলে ঋরমযঃ ঋড়ৎ ঝঁৎারাড়ৎং জরমযঃ : ঋঝজ নামে একটি গ্রুপ খোলে মাহবুব। এছাড়াও সাইদুল ইসলাম ও আলমগীর হোসেন নিজেদের ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে সহিংসতার পক্ষে গুজব রটিয়েছে। তিনি জানান, গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন সময় ফেসবুক লাইভ ও পোস্টসহ নানা কন্টেন্ট শেয়ার করে আন্দোলনকে সহিংস করতে ভূমিকা রেখেছেন বলে তদন্তে জানা গেছে। গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসল উদ্দেশ্য বেরিয়ে আসবে। কারা এর সঙ্গে জড়িত জানা যাবে। পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের উস্কানিদাতা হিসেবে ২৮টি ফেসবুক ও টুইটার আইডি শনাক্ত করেছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ। তাদের বিরুদ্ধে গত ২ আগস্ট রাজধানীর রমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ। গ্রেফতার তিনজনকে রমনা থানার সাইবার আইনে দায়ের করা ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
×