ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

টানা দুই জয়ে টি২০ সিরিজ টাইগারদের

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৭ আগস্ট ২০১৮

টানা দুই জয়ে টি২০ সিরিজ টাইগারদের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ঘরের মাঠে কিংবা দেশের বাইরে- গত তিন বছরে টি২০ ফরমেটে কোন সিরিজ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। মাঝে নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত সফর করেছে- টি২০ সিরিজ হারতে হয়েছে। এমনকি সর্বশেষ ভারতের মাটিতে উঠতি ক্রিকেট শক্তি আফগানিস্তানের কাছেও ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ হেরে টি২০ ফরমেটে নিজেদের খর্বশক্তির পরিচয় দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। কিন্তু নিরপেক্ষ ভেন্যু মার্কিন মুলুকের ফ্লোরিডায় এবার বর্তমান টি২০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে হারিয়ে দিয়েছে টাইগাররা। অধিনায়ক হিসেবে সাকিব আল হাসানের প্রথম এবং বিদেশের মাটিতে ৬ বছর পর মাত্র দ্বিতীয়বার টি২০ সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। সোমবার লডারহিলের সেন্ট্রাল ব্রোওয়ার্ড রিজিওনাল পার্ক স্টেডিয়াম টার্ফ গ্রাউন্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বৃষ্টি আইনে ১৯ রানে হারিয়ে এই অবিস্মরণীয় বিজয় ছিনিয়ে আনে টাইগাররা। এ কারণে ব্যাটে-বলে এবং নেতৃত্বে দুরন্ত সাকিব সিরিজসেরা হয়ে সতীর্থদের পারফর্মেন্স এবং দলের সবার আত্মবিশ্বাসকেই এ জয়ের পেছনে মূল কারণ হিসেবে দাবি করেছেন। ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে যাত্রা শুরু করেছিলেন সাকিব। সোমবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ছিল তার ক্যারিয়ারের যুগপূর্তির দিন। সেইসঙ্গে অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবার টি২০ সিরিজ জেতার ম্যাচ। সে ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিং নেন সাকিব। শুরুটা তরুণ ওপেনার লিটন দাস করেন দুর্ধর্ষ ব্যাটিংয়ে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে তিনি তামিম ইকবালকে নিয়ে এ্যাসলে নার্সের বোলিংয়ে ১৭ এবং চতুর্থ ওভারে আন্দ্রে রাসেলের ওভারে ১৯ রান তুলে নেন। উদ্বোধনী জুটিতে ওঠে মাত্র ২৮ বলে ৬১ রান! তবে তামিম তখনই ফিরে গেছেন ১৩ বলে ২১ রান করে ক্যারিবীয় অধিনায়ক কার্লোস ব্রেথওয়েটের বলে। পরের ওভারেই সৌম্য সরকার আগের মতোই ব্যর্থ হয়ে ৫ রান করেই সাজঘরে ফেরেন। এরপরও পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে ২ উইকেটে ৭১ রান তুলে দারুণ অবস্থানে চলে যায় বাংলাদেশ। আর সেই ভিতেই দাঁড়িয়ে মুশফিকুর রহীমের ১৪ বলে ১২, সাকিবের ২২ বলে ২৪ রানে বড় সংগ্রহের পথ পেয়ে যায় বাংলাদেশ দল। লিটন ২৪ বলে অর্ধশতক হাঁকিয়ে শেষ পর্যন্ত ৩২ বলে ৬ চার, ৩ ছক্কায় ক্যারিয়ারসেরা ৬১ রান করে সাজঘরে ফিরে যান। ততক্ষণে শক্ত অবস্থানেই পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ২০ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় অপরাজিত ৩২ এবং আরিফুল হক ১৬ বলে অপরাজিত ১৮ রান করলে ৫ উইকেটে ১৮৪ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। এটি ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ টি২০ সংগ্রহ। এর আগে ২০১২ সালে ঢাকায় ১ উইকেটে ১৭৯ রান ছিল সর্বোচ্চ। ব্রেথওয়েট ও কিমো পল দুটি করে উইকেট নেন। জবাব দিতে নেমে মাত্র ৩২ রানেই ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচার (৬), চ্যাডউইক ওয়ালটন (১৯) ও মারলন স্যামুয়েলসের (২) উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সম্মিলিত বোলিং নৈপুণ্যে ক্যারিবীয়দের চেপে ধরে বাংলাদেশ আর তাতেই পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে মাত্র ৩২ রান তুলে চাপে পড়ে যায় ক্যারিবীয়রা। সেখান থেকে আর সহজে বের হতে পারেনি তারা। শেষদিকে, রাসেল যেভাবে রুদ্র্রমূর্তি ধারণ করেছিলেন তাতে অবশ্য ম্যাচ বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে শুরু করেছিল। কিন্তু ১৮তম ওভারের প্রথম বলেই তাকে আরিফুলের দুর্দান্ত ক্যাচে শিকার করে টাইগার শিবিরে স্বস্তি আনেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। রাসেল ২১ বলে ১ চার, ৬ ছক্কায় ৪৭ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলেছিলেন। ওই সময় ক্যারিবীয়দের সংগ্রহ ছিল ৭ উইকেটে ১৩৫! ১৭.১ ওভার খেলা হয়েছে; ১৭ বলে তখনও ৫০ রান প্রয়োজন তাদের ম্যাচ ও সিরিজ জেতার জন্য। কিন্তু বৃষ্টি আর তাদের লড়তে দেয়নি। শেষ পর্যন্ত ডাকওয়ার্থ-লুইস মেথডে ১৯ রানে বাংলাদেশকে বিজয়ী ঘোষণার পরই ড্রেসিং রুম থেকে বেরিয়ে মাঠে ঢুকে উল্লাস করেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। মুস্তাফিজ ৩১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ক্যারিবীয় ইনিংসে মূল ধ্বংস চালিয়েছেন। ২০১৫ সালে সর্বশেষ টি২০ সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। সেটি অবশ্য ১ ম্যাচের সিরিজ ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। এরপর গত ৮ সিরিজের ৫টিতেই হার এবং তিনটি ড্র করতে পেরেছিল। আর ২০১২ সালে আয়ারল্যান্ড সফরে ৩-০ ব্যবধানে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করে দেশে ফিরেছিল টাইগাররা। বিদেশের মাটিতে টি২০ সিরিজ জয় সেই একটাই। ৬ বছর পর আবারও বিদেশের মাটিতে টি২০ সিরিজ জয়টি আসল অধিনায়ক সাকিবের হাত ধরে এবং সেটি বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে। সবমিলিয়ে এটি বাংলাদেশের পঞ্চম টি২০ সিরিজ জয়। ২০০৬ সালে নিজেদের প্রথম টি২০ সিরিজে ঘরের মাঠে জিম্বাবুইয়েকে ১-০, ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২০১১ সালে ১-০, আয়ারল্যান্ডে ২০১২ সালে ৩-০, ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে পাকিস্তানকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ দল। তবে টেস্ট খেলুড়ে কোন দেশকে টি২০ সিরিজে দেশের বাইরে সিরিজ হারানোর গৌরব এই প্রথম দেখালো বাংলাদেশ দল। ভারমুক্ত হলো পঞ্চপা-ব- সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাশরাফি ও মাহমুদুল্লাহ। এই কয়েকজনের হাতেই এতদিন বিজয় রচিত হয়েছিল। তরুণরা টাইগারদের বিজয়ে অবদান রাখতে পারছিলেন না। এ ম্যাচে সেই বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে বাংলাদেশ। ২৩ বছর বয়সী তরুণ ওপেনার লিটন ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলে হয়েছেন ম্যাচসেরা। আর সাকিবও হয়ত অনেকখানি ভারমুক্ত হলেন। কারণ, দ্বিতীয় দফায় গত অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টি২০ অধিনায়ক হওয়ার পর থেকেই চাপে ছিলেন তিনি। টানা ৭ ম্যাচে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে মাত্র একটি জয় এনে দিতে পেয়েছিলেন। সবমিলিয়ে ১১টি২০ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করে ১ জয়, ১০ পরাজয়ে বিপর্যস্ত ছিলেন অধিনায়ক সাকিব। কিন্তু এবার সিরিজ জেতালেন, নিজে হলেন ব্যাটে-বলে অসামান্য অবদান রেখে সিরিজ সেরা খেলোয়াড়। এ কারণেই তিনি ম্যাচ শেষে বলেন, ‘অবিশ্বাস্য পারফর্মেন্স পেলাম আমার দলের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে। প্রথম ম্যাচ হারের পর সিরিজে ফিরে আসার জন্য আমাদের দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রয়োজন ছিল। দলের ক্রিকেটাররা সবাই সেই পারফর্মেন্সটা দেখিয়েছে। নিজেদের অনেক বেশি প্রদর্শন করেছে তারা। সবাই বিশ্বাস করতে শুরু করেছিল, এই অবস্থা থেকেও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের মোকাবেলা করেছি এবং সেই মোকাবেলা করতে গিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বই প্রমাণ করেছি। এই মাঠে খেলতে গিয়ে আমাদের কখনোই মনে হয়নি যে ঘরের বাইরে খেলতে নেমেছি।’
×