ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির কুশীলবদের চেহারা স্পষ্ট হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৭ আগস্ট ২০১৮

অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির কুশীলবদের চেহারা স্পষ্ট হচ্ছে

বিভাষ বাড়ৈ ॥ প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে পুরো সরকার শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিকে যৌক্তিক বললেও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সরকারবিরোধী রূপ দিতে সক্রিয় বিশেষ গ্রুপ। সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরতে শুরু করলেও বেরিয়ে আসছে গুজব ছড়িয়ে নাশকতায় উস্কানি দেয়া তৃতীয় পক্ষের আসল চেহারা। শিক্ষার্থীদের আবেগ কাজে লাগিয়ে প্রতিটি পয়েন্টে সক্রিয় শিবির-ছাত্রদলের প্রশিক্ষিত ক্যাডাররা। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিশেষ গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ মদদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সরকারবিরোধী রূপ দিতে গুজব ছড়িয়ে ব্যাগে রামদা, চাপাতি, পোশাক ও আইডি কার্ড পরে শিক্ষার্থী হিসেবে মাঠে নামানো হয় ক্যাডারদের। গুজবকে সত্য ভেবে বিকৃত তথ্য প্রচারে সক্রিয় অত্যুৎসাহীরাও। নিরাপদ সড়কের দাবিতে ‘কোমলমতি স্কুল শিক্ষার্থীদের’ আন্দোলন নিয়ে দীর্ঘ প্রপাগান্ডা শেষে স্কুলগামী শিক্ষার্থীর বদলে গত দুদিন ধরে রাজপথে সক্রিয় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। যেখানে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় ছাত্রদল-শিবিরের সদস্যরা ছাড়া কিছুটা সক্রিয় আছেন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো। ‘শিক্ষার্থী মৃত্যু’ ‘স্কুলগামী ছাত্রীদের ধর্ষণ’ ‘ধানম-ি কার্যালয় থেকে সাত এ্যাম্বুলেন্সে করে শিক্ষার্থীর লাশ পরিবহন’ ‘তেজগাঁওয়ে ধর্ষিত স্কুল ছাত্রীর লাশ উদ্ধার’ থেকে শুরু করে আরও অনেক কিছু সোমবারও সারাদিন ফেসবুক ইউটিউবে প্রচার হয়েছে। সেগুলো উত্তেজনা ছড়িয়েছে গতকালও। কিন্তু যারা বারবার সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিয়ে মার খাবার সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে ঠেলে দিচ্ছেন, তারা আসলে কারা? কেনই বা নিরাপদ সড়কের আন্দোলন থেকে সরকারবিরোধী স্লোগান আসছে। শিক্ষার্থী হলে কেন তাদের ব্যাগ থেকে বেড় হচ্ছে রামদা, চাপাতিসহ অসংখ্য ভুয়া আইডি কার্ড? জানা গেছে, আন্দোলনের দ্বিতীয় দিন থেকে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়তে থাকার পরই সুযোগের জন্য মাঠে নামে সরকারবিরোধীরা। এরপর কয়েকদিন ধরেই কিছু নিউজপোর্টাল প্রধানমন্ত্রীর নামে বিকৃত, মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য দেশবাসীকে ইতোমধ্যেই আহ্বান জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে একটি ‘কুচক্রী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হয়ে প্রুধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে বিকৃতি, মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করছে উল্লেখ করে তাতে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব বানোয়াট সংবাদ জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা প্রচার করা হচ্ছে। এসব সংবাদের কোন ভিত্তি নেই উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব অপসংবাদে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। একইভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পর্কেও মিথা ও বিকৃত তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এমনকি গুলি চালানোর মতো গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এ কাজে ফটোশপের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ছবি বিকৃত করে দেয়া হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ব্যক্তিগত মেসেঞ্জার ও গ্রুপ মেসেঞ্জারে একটি গুজব ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে যা মেসেঞ্জারে ভাইরাল হয়ে গেছে। সেখানে জানানো হচ্ছে, রবিবার স্কুল শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং যৌন নির্যাতন চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সর্বশেষ রবিবার কয়েকটি স্থানে সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়েছে। এ হামলাগুলোর মধ্যে নাগরিক টেলিভিশনের রিপোর্টার আবদুল্লা সাফীর ওপরও হামলায় হয়। হামলা পরবর্তীতে ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, সিটি কলেজের সামনে চলতি গাড়ির ওপর কিল, ঘুষি, ইট পাথর, বাঁশের লাঠি, হকিস্টিক....ধুমধাম ঠরাস ঠরাস কাচের ভাংচুর, সে এক পৈশাচিক আনন্দ শিক্ষার্থীদের! মাথা মুখে হাত রেখে কোন রকম নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা। কিছু বলারও সুযোগ নেই। ভাঙ্গা শেষে তারা আমাদের নামিয়ে গাড়িতে আগুন ধরাতে চাইলে কয়েকজন বাধা দেয়। অভিযোগ গতকালের গুজব কেন মিডিয়া প্রচার করেনি? অর্থাৎ যে কোন গুজব প্রচার করতে বাধ্য মিডিয়া। সর্বোপরি তারা মাথায় হাত দিয়ে সরি বলে আবেদন করেÑ ‘নউজ করার সময় যেন বলি, শিক্ষার্থীরা নয় ভাংচুর করেছে ছাত্রলীগ।’ এরা আসলে কোন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী? আর কেনই বা গণমাধ্যমকে ছাত্রলীগ হামলা করেছে বলতে অনুরোধ করা হয়েছে? ৯ দিনের আন্দোলনে বেশ কিছু ছবি মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে। তার মধ্যে একটি এক মা তার সন্তানের হাতে একটি স্লোগান লেখা কাগজ ধরিয়ে দিয়েছেন। সেখানে লেখা ছিল- ‘পুলিশ আসলেই চ্যাটের বাল’। বিষয়টি আলোচনায় আসে কারণ এতটুকু একটি বাচ্চার কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য কেউ আশা করে না। কিন্তু এই নারী তা ধরিয়ে দিয়েছে শিশুটির হাতে। জানা যায়, তিনি রাজশাহী-৪ আসন থেকে বিএনপির এমপি পদপ্রার্থী। আসন্ন নির্বাচনে এমপি পদে লড়াই করার জন্য ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে দাঁড়াতে চান তিনি। সে কারণেই কি তার এমন রূপ। আন্দোলনের নামে পুলিশের ওপর হামলা চালাতে প্রচার চলানো হয় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যেখানে বলা হয়, ‘পুলিশকে যদি তোমরা থামাতে না পার তাহলে তোমার আশপাশে যত পুলিশের পরিবার আছে তাদের ওপর যৌথ হামলা কর’। আন্দোলনে ধানমন্ডি ও ঝিগাতলা থেকে পোস্ট দেয়া অপর একটি ছবি থেকে জানা যায়, তিনি সাধারণ শিক্ষার্থী নন, বরং এফ রহমান হল ছাত্র দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সরদার আমিরুল ইসলাম। তার মতোই ছাত্রদলের অধিকাংশ নেতা বর্তমানে সক্রিয় এই আন্দোলনে। উত্তরায় ছাত্রলীগকে মারধর ও বাইক ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা মূলত দাঁড়িয়ে ছিলেন। আসল কাজটি করেছে ছাত্রদল। ধানম-িতে হামলা করা অপর এক সাধারণ শিক্ষার্থীর ছবি প্রকাশিত হলে জানা যায়, তিনি ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক। রামদা হাতে নিজ সহযোগীদের সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছেন তিনি। অপর একটি ছবিতে কিছু শিবির কর্মীকে দেখা যায় গোল হয়ে বসে আগুন জ্বালাচ্ছে টিয়ারশেলের গ্যাস থেকে বাঁচতে। স্কুল ড্রেস পরা এক শিক্ষার্থী দৌড়ে আসার সময় তার স্কুল ব্যাগ থেকে চাপাতি বের করেন এমনই এক ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। গতকাল সোমবারের একটি ভিডিওটি দেভে আঁতকে উঠেছেল সকলেই। ছাত্রের ব্যাগ থেকে মিলল দেশীয় হাঁসুয়া এবং আগ্নেয়াস্ত্র। মানিকগঞ্জ থেকে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে আসা শিবির কর্মী জনগণের হাতে ধরা পড়ে। পরে পুলিশ গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। তার ব্যাগে পায় একটি দেশীয় হাঁসুয়া, দেশী আগ্নেয়াস্ত্র। তাকে আটক করে সাধারণ মানুষ বলছে, ছদ্মবেশ নিয়ে তারা কিভাবে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে দেখুন। দেখলে আঁতকে উঠবেন এই সরল চেহারার পেছনের কি ভয়ঙ্কর মানুষ তারা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীর বদলে নিজ কর্মীদের একত্র করার আহ্বান ছিল বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদের ফাঁস হওয়া অডিও ক্লিপে। সেখানে বিভিন্ন স্থান থেকে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে এসে আন্দোলন চালিয়ে যাবার নির্দেশ প্রদান করেন তিনি। সাক্ষাৎকারে তিনি এই বক্তব্যের সত্যতা নিশ্চিতও করেন। সেই সঙ্গে সারাদেশ থেকে নিজ কর্মীদের একত্র হওয়ার জন্য আমির খসরুর দেয়া বক্তব্যকে সমর্থন প্রদান করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ইসলাম আলমগীর। আন্দোলনের অষ্টম দিনে আরও একবার সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনায় আসেন মাহমুদুর রহমান মান্না। ‘ক্যাম্পাসে লাশ ফেলা’ তত্ত্ব দিয়ে সমালোচিত এই রাজনীতিবিদ এক ফোনালাপে বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষার্থীদের চাঙ্গা করে আন্দোলন বাঁচিয়ে রাখার আহ্বান প্রদান করা হয়। অপর পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিগত কয়েকদিন বিমানবন্দর এলাকা অচল করে রাখতে পেরেছে তারা। কিন্তু সামনে কি হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে। মান্না তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান দেয় এবং যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে বলে। সরকারের বিষয়ে হুঁশিয়ারও করেন তিনি। প্রশ্ন উঠেছে, শান্তিপূর্ণ এই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এখন কারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন? আন্দোলনে ভাংচুর ও মারধরের ঘটনায় সত্যিকার অর্থে কতজন সাধারণ শিক্ষার্থী জড়িত রয়েছে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন স্কুল-কলেজের প্রধানসহ বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রথম দুদিন অহিংস আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয় সকল শিক্ষার্থীরা। সেখানে সমর্থন ছিলো সকল শ্রেণীর মানুষের। কিন্তু এরপরই আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ হ্রাস পেয়ে বেড়েছে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। নিরাপদ সড়ক নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে বা অর্থ দিয়ে এই আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের পর্যায়ে নিয়ে যেতে চেষ্টা করছে একটি পক্ষ। সরকারকে বারবার ব্যর্থ বলে এই আন্দোলন ঘিরে সরকার পতনের ডাক দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। এবারের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনরে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুটি চরিত্রের একজন ‘শহীদ আপন’। তিনি তার বন্ধু কানাডায় বসবাস করা মুস্তফা রেজওয়ান রাহাদের মাধ্যমে আন্দোলনে যোগ দেন। মে মাসে কানাডায় যাওয়া রাহাদ তার ফেসবুক ভিডিওর মাধ্যমে অনেককে আহ্বান করেন আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট হতে। পরবর্তীতে রবিবার প্রকাশ করা অপর এক ভিডিওতে রাহাদ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে না নামার আহ্বান জানান। সেখানে তিনি বলেন, আন্দোলনটি রাজনৈতিকভাবে এখন ব্যবহার করছে জামায়াত-শিবির ও ছাত্রদল। তিনি এ সময় আরও জানান, বৃহস্পতিবারের পর থেকে আন্দোলনের নিয়ন্ত্রণ আর তার হাতে থাকেনি। একটি মহল এবারের আন্দোলনের সংঘর্ষের জন্য দায়ী করছে ছাত্র লীগকে। এ বিষয়ে কথা বলেছেন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। তিনি বলছিলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও পেশাগত দায়িত্বপালনরত সাংবাদিকদের কাউকে ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগের কেউ নখের আঁচড়ও মারেনি। ছাত্রলীগের সভাপতিকে নিয়ে রবিবার আমি গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। প্রোগ্রাম শেষ করে আমরা যখন ল্যাবএইড হাসপাতাল ক্রস করি, বিনা উস্কানিতে অপরপ্রান্ত থেকে কিছু স্কুল-কলেজ ড্রেস পরা অস্ত্রধারী আমাদের ওপর আক্রমণ করে। এ সময় আমাদের বহন করা গাড়ির কাচ ভেঙ্গে যায়। ছাত্রলীগের তিনটি মোটরসাইকেল জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে এবং সংগঠনের ১৫-১৬ নেতাকর্মী আহত হওয়ার অভিযোগ করে ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ছাত্রলীগের কেউ আক্রমণে ছিল না। আমরা নিজেরাই আক্রান্ত হয়েছি। গোলাম রাব্বানী আরও বলেন, দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ও কোমলমতি শিশুদের আবেগ থেকে এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে। শুরুতে ছাত্রলীগ তাদের সঙ্গে শতভাগ সহমর্মিতা প্রকাশ করেছে। আন্দোলনের মধ্যে যারা দুষ্কৃতকারী তারা ব্যাগের মধ্যে পাথর বহন করছে। কয়েকজন ছাত্রের ব্যাগে রিভলভার পাওয়া গেছে। এ থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান, তাদের আবেগ নিয়ে আগুন সন্ত্রাসীরা অনুপ্রবেশ করেছে। নীলক্ষেত থেকে ভুয়া আইডি কার্ড বানিয়ে, মিনি ট্রাকে স্কুল ব্যাগ ভর্তি করে সাপ্লাই দিয়েছে। শিবির এবং ছাত্রদলের সন্ত্রাসীরা আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে, জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বিব্রত করতে ছাত্রলীগের বদনাম রটাচ্ছে। ফেসবুকে কয়েক নারীর ভয়াবহ গুজব! সড়কে নিরাপত্তা দাবির আন্দোলনের সপ্তমদিন শনিবার দুপুরে রাজধানীর রাস্তায় শিক্ষার্থীরা যখন যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স তল্লাশির কাজে ব্যস্ত, ঠিক তখনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে কমপক্ষে ৮টি ভিডিও। এসব ভিডিওতে ধানম-ি জিকাতলার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই তরুণ আর কয়েকজন তরুণী দাবি করেন ওই এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়ে ছাত্রদের হত্যা করা হচ্ছে আর ছাত্রীদের ধরে নিয়ে ধর্ষণ করা হচ্ছে। এসব ভিডিওর মধ্যে কান্নায় ভেঙ্গে পড়া চার কন্যার আকুতি মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে এবং চার কন্যার ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওগুলোর কয়েকটিতে দাবি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের দুইজন মেয়েকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং রেপ করা হয়েছে। এছাড়াও কিছু ভিডিওতে জিগাতলার সংঘর্ষে প্রাথমিকভাবে দুইজন নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করা হয়। কয়েকটি ভিডিওতে জানানো হয়েছে, নিহত হয়েছেন চারজন। গুজব ছড়ানো আলোচিত চার কন্যার মধ্যে চেনা মুখ ছিলেন অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ। তিনি তার লাইভ ভিডিওতে দাবি করেন, একজনের চোখ তুলে নেয়া হয়েছে এবং দুইজনকে মেরে ফেলা হয়েছে। এ সময় তিনি কান্নাভেজা কণ্ঠে সবাইকে রাস্তায় নামার আহ্বান জানান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ভিডিওটিই সবচেয়ে বেশি আলোড়ন তৈরি করে। তাকে ইতোমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি বলছেন, না জেনে তার এ কাজ করা ঠিক হয়নি। ঘটনার সময় তিনি ছিলেন উত্তরা শূটিং স্পটে। টেলিফোনে রুদ্র নামে একজনের কথা শুনেই তিনি ভিডিও বার্তা দিয়েছিলেন। আর গুজব তৈরিতে ভূমিকা রাখা অন্য তিনটি ভিডিওতে তিন তরুণীকে দেখা যায় মুখ ঢেকে কথা বলতে। এদের মধ্যে আবার দুজনের পরনে ছিল সাদা কলেজ ইউনিফর্ম এবং অন্যজন ছিলেন গোলাপি রঙের সিভিল ড্রেসে। ফেসবুক ভিডিওতে তাদের দাবির সত্যতা নিশ্চিত না হয়েই সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে অবস্থান নেয়া শিক্ষার্থীরা হামলা চালান ধানম-ি ৩/এ তে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে। ঘটতে থাকে পাল্টা হামলা-ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ঘটনা। সন্ধ্যায় সব উত্তেজনার অবসান ঘটিয়ে ছাত্রদের দুটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগ কার্যালয় ঘুরে এসে জানান, সবই গুজব ছিল। এটিও নিশ্চিত হয়, প্রপাগান্ডার মাধ্যমে নৈরাজ্য ও নাশকতার তৈরির পাঁয়তারা থেকেই পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এসব গুজব ছড়ানো হয়েছে। নওশাবা ছাড়াও একজন ছিল বোরকা পরা এবং বাকি দুইজন কলেজের পোশাক পরা। কিন্তু মুখ ঢাকা। বোরকা পরা তরুণীর চিৎকার অস্থিরতা ছড়িয়েছে। জানা গেছে, তার নাম লুনা সরকার। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয় এ ছাত্রীর বাড়ি গোপালগঞ্জে। ইতোমধ্যেই তথ্য মিলছে এ মেয়েটি জঙ্গি নেতা মুফতী হান্নারের আত্তীয়। এই মেয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘জিগাতলাতে তাদের পার্টি সেন্টারে অনেক অনেক মেয়েকে রেপ করা হচ্ছে। প্লিজ কিছু করেন।’ মেয়েটির মুখ এমনিতেই ঢাকা ছিল। কিন্তু রেকর্ডিংয়ের সময় তার সেই মুখেও ক্যামেরা ধরা হয়নি। চিৎকার করে ওই তরুণী যা যা বলতে থাকেন তার সব বোঝা যায় না। যতটুকু বোঝা যায় সেটুকু হলো, ‘ওরা গুলি করতেছে, ওরা কি ছাত্র? ওরা কি আদৌ কোনো ছাত্র?’ পপুলার হাসপাতালের ভেতর থেকে ঢাকা আরেক তরুণীর রেকর্ডিং হয়। এই তরুণী দাবি করতে থাকেন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে মারা হয়েছে সাত জনকে, ধর্ষণ করা হয়েছে চার জনকে। এই তরুণী কথা বলেছেন একটি কাঁচ ঘেরা কক্ষে। পরে তিনি নিজেই জানান ধানম-িতে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। এই তরুণী বলতে থাকেন, ‘ছাত্রলীগের কর্মীরা বস্তি থেকে ছেলেদের নিয়ে এসে তাদের স্কুলের পোশাক দিয়েছে, তাদের আইডি কার্ডও দেয়া হয়েছে।’ আরেকজন তরুণের কথা ফেসবুকে ছড়িয়েছে যিনি একটি সাক্ষাতকারের মতো দেন। নিজের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নাম বলেননি। বলেন, ‘আমি বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক স্কুলের স্টুডেন্ট ছিলাম, এখন পরীক্ষা দিয়ে বাইর হয়ে গেছি।’ অনুসন্ধানে জানা গেছে, গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনকে সহিংস রূপ দিতে যে ভিডিওগুলো ভাইরাল হয়েছে তার মধ্যে অন্তত তিনটির উৎস হলো জামায়াত-শিবিরের চিহ্নিত ফেসবুক পেইজ ‘বাঁশের কেল্লা’। দিন দিন অপপ্রচারের মাধ্যমে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই ফেসবুক পেজটি বিটিআরসি একাধিকবার বন্ধ করে দেয়ার পরও কোন লাভ হয়নি। কারণ বন্ধ করার অল্প সময়ের মধ্যেই শিবিরের লোকজন আবার একই নামে একটি করে নতুন পাতা চালু করে ফেলছে। দেশে-বিদেশে সহস্রাধিক এডমিন হিসাবে বাঁশের কেল্লার বিভিন্ন পেইজে বা সাইটে সার্বক্ষণিক কাজ করছে। তাদের সঙ্গে পাকিস্তান, তুর্কী ও ইন্দোনেশিয়ার সাইবার আর্মি একযোগে কাজ করছে। লন্ডন থেকে জামায়াত শিবিরের যে ফ্যান পেজটি পরিচালিত হয় তার নাম ইউকে বাঁশের কেল্লা। বাঁশের কেল্লা সাইট থেকে নাশকতার পরিকল্পনার বিষয়টি নিয়ে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের সাইট কোথা থেকে পরিচালিত হচ্ছে এই বিষয়টি কোনভাবেই নিশ্চিত হতে পারছেন না তারা। কারণ দেশের বাইরে থেকে এটি পরিচালিত হয়ে আসছে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের উসকানিদাতা হিসেবে ২৮টি ফেসবুক ও টুইটার আইডি শনাক্ত করা হয়েছে। এসব আইডির মালিক ও এডমিনদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান শুরু করেছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ। এ ঘটনায় গত ২ আগস্ট রাজধানীর রমনা থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ। এজাহারে যেসব ফেসবুক আইডি ও পেজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে, বাংলামেইল ৭১, বাঁশের কেল্লা, ফাইট ফর সারভাইভার্স রাইট, জুম বাংলা নিউজ পোর্টাল, বিএনপি সমর্থক গোষ্ঠী কেন্দ্রীয় সংসদ, এ্যাক্সিডেন্ট নিউজ, ফাঁকিবাজ লিংক, আন্দোলন নিউজ। এছাড়া টুইটার আইডিগুলো হচ্ছে- রানা মাসুম-১, নওরিন-০৭, দিপু খান বিএনপি, ইদ্রিস হোসেইন, এম আল আমিন-৯৯, বিপ্লবী কাজী, নাসিফ ওয়াহিদ ফায়জাল। ৩০ জনের নাম পেল সিআইডি, চলছে যাচাই-বাছাই ॥ ধানম-িতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ছাত্রদের হত্যা ও ধর্ষণের গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে দেয়ার ঘটনায় আরও ৩০ জন শনাক্ত হয়েছে। সচেতন মানুষদের পক্ষ থেকে এদের নাম ও ছবি পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি। তবে সেই তালিকায় সবাইকে দোষী হিসেবে দেখছে না সংস্থাটি। যাচাই-বাছাই শেষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম। এর মধ্যে গুজব ছড়িয়ে উস্কানি দেয়ার চেষ্টা করেছেন, এমন ব্যক্তিদের ছবি প্রকাশ করে পুলিশকে বিস্তারিত তথ্য দেয়ার আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকেই প্রকাশ করা হয়েছে তালিকা। সেখানে তথ্য দিতে ফোন নম্বর হিসেবে ০২৯৩৪২৯৮৯ উল্লেখ আছে। সন্দেহভাজন তালিকায় নাম রয়েছে পার্থ চৌধুরী, আনুশকা পারিশা, সাফায়েত জাহান চৌধুরী, হুমায়রা মাহ্জাবীন প্রমা, তারিকুল নাঈম (তমাল) জুবায়ের আহমেদ শুভ, ওয়াকি আবদুল্লাহ, কে এম নাজমল হক, সোনালী রহমান, ফারহানা ক্যামেলিয়া, রকিবুল ইসলাম নাবিল, রুপন্তী দীপা মল্লিক, শেহজাদ আরেফিন, তারেক আজিজ, ইফতেখার আহমেদ, আঞ্জুমান কাজী, আফসার আহমেদ স্বাধীন, খাদিজা ইমলাম কবির, আব্দুল কাইয়ুম খান, রাজু রহমান, মঞ্জিল মোর্শেদ সাব্বির, সাঈদ ইসলাম, সানজিদা শিমু, মেহরান সানজাদা, মেহেদী হাসান রাশেদ, তাসকিন আল আসাম, রিয়াদ রহমান রকি, সেকুল ইসলাম আছকা, ফাতেমা তুজ জহুরা ও রাফসান। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল বলেন, সহিংসতার পর সিআইডির পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে আহবান করেছিলাম উস্কানিদাতাদের নাম ও ছবির। পরে কোন সচেতন নাগরিক সেটা দিয়েছে। আমরা সেই তালিকা নিয়ে আগাচ্ছি। এখনও কাউকে অভিযুক্ত বলছি না। তবে তদন্ত চলছে কিছুটা সময় লাগবে। এই তালিকা আরও বড় হতে পারে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মিলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। হঠাৎ স্কুল ড্রেস বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় অবাক বিক্রেতারাই! নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনের মধ্যেই হঠাৎ স্কুল ড্রেস বিক্রি বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। তাদের তথ্য মতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে সাদা শার্ট। বছরের প্রথম দিকে সাদা শার্ট বিক্রির হিড়িক থাকলেও বছরের মাঝামাঝি অবস্থানে এই বিক্রি অস্বাভাবিক বলে মনে হয়েছে খোদ বিক্রেতাদের কাছে। বিক্রেতারা জানান, বছরের শেষ দিকে এই সময়ে শার্টের তেমন চাহিদা থাকে না। তার মধ্যে এখন যে হারে তা বিক্রি হচ্ছে, তা বছরের শুরুর দিকের চাহিদাকে ছাড়িয়ে গেছে। আন্দোলনে থাকা অনেকেই বলছেন, যারা অপরাধ করছে, তারা ছাত্র কি না, সন্দেহ আছে। তাদের ব্যবহার নিয়েও সংশয় আছে। রাজধানীতে স্কুল ড্রেস বা সাদা শার্ট পাওয়া যায় এমন কয়েকটি মার্কেটের মধ্যে অন্যতম নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুর সুপার মার্কেট, আল্লাহ করিম সুপার মার্কেট, মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্প ও পুরনো কাপড় বিক্রির মার্কেট গরীবুল্লাহ মার্কেট। কত বিক্রি হয়েছে, জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর সুপার মার্কেটের স্কুল ড্রেস বিক্রির সবচেয়ে বড় দোকানটির মালিক আনিসুর রহমান তার হিসেবের খাতা খোলেন। তিনি জানান, বিষয়টা অবাক করার মতো। এই টাইমে কখনও এত শার্ট বিক্রি হওয়ার কথা না। যা বিক্রি হয়েছে তার সব সাদা আর কালো স্কুল ড্রেসের শার্ট। বুধবার সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে। আর কোন ছোট শার্ট না, সব বড়গুলা বিক্রি হইছে।
×