ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্ঘটনার মাধ্যমে গুরুতর আহত করলে বা প্রাণহানি ঘটালে পাঁচ বছরের কারাদ- ;###;ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ৪ মাসের জেল ;###;ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে অষ্টম শ্রেণী পাস হতে হবে

হত্যা প্রমাণে ফাঁসি ॥ সড়ক দুর্ঘটনা আইন ২০১৮

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৭ আগস্ট ২০১৮

হত্যা প্রমাণে ফাঁসি ॥ সড়ক দুর্ঘটনা আইন ২০১৮

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দুর্ঘটনার কারণ ইচ্ছাকৃত ছিল তা তদন্তে প্রমাণিত হলে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। এ বিধান রেখে মন্ত্রিসভা সড়ক পরিবহন আইন চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। দুর্ঘটনার মাধ্যমে গুরুতর আহত করলে বা প্রাণহানি ঘটালে চালকের সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদ- ও অর্থদ-ের বিধার রেখে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এই আইনের অধীনে মোবাইলকোর্টও পরিচালনা করা যাবে। আগামী সংসদ অধিবেশনে আইনটি পাস হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এই অনুমোদনের কথা জানান। বৈঠক শেষে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণহানিটি তদন্তে হত্যা প্রমাণিত হলে চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- হবে। গত বছরের ২৭ মার্চ খসড়াটি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নের দাবিতে রাজধানীজুড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী আইনটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর আইন মন্ত্রণালয় খসড়া আইনটি দ্রুত ভেটিং (পরীক্ষা-নিরীক্ষা) করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। ‘দি মোটর ভেহিক্যাল অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩’ যুগোপযোগী করে নতুন আইনটি করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই আইনের মূল ফোকাস হচ্ছে- সড়ক ব্যবস্থাপনা, সড়কে যানবাহনগুলো কীভাবে চলবে সেই বিষয়ে। তিনি বলেন, দুর্ঘটনা সংক্রান্ত অপরাধের বিষয়ে খসড়া আইনের ১০৩ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন মোটরযান চালনাজনিত কোন দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে কোন ব্যক্তি আহত হলে বা তার প্রাণহানি ঘটলে এ সংক্রান্ত অপরাধ দণ্ডবিধি-১৮৬০-এর সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী অপরাধ বলে গণ্য হবে। ৩০২, ৩০৪ যেগুলো আছে। এটা অবস্থার গুরুত্ব অনুসারে আলামত এভিডেন্স অনুযায়ী হবে। বোঝা যায় যদি সে স্বেচ্ছায় (দুর্ঘটনার মাধ্যমে প্রাণহানি) কাজটা করেছে, ভলান্টারিলি (স্বেচ্ছায়) কাউকে সে পিষে দিল এ রকম ঘটনা, এটা দ-বিধি বা সংশ্লিষ্ট ধারায় এর শাস্তি হবে। তদন্তে সিদ্ধান্ত হবে এটা কোন লাইনে যাবে, (দ-বিধির) ৩০২ হবে নাকি ৩০৪ হবে। খসড়ায় রয়েছে, তবে শর্ত থাকে যে পেনাল কোডে সংশ্লিষ্ট সেকশন ৩০৪ (বি) এ যা কিছু থাকুক না কেন ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলা জনিত কারণে মোটরযান চালানোর কারণে সংঘটিত দুর্ঘটনায় কোন ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত হলে বা তার প্রাণহানি ঘটলে ওই ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থ দণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তিনি বলেন, আগে ছিল ৭ বছর, পরে সংশোধন করে এটাতে ৩ বছর করা হয়। এখন পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও যাত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে সব শ্রেণীর সর্বসম্মত মত হলো ৫ বছর। এখানে অর্থদ-টা অসীম (আনলিমিটেড), কোন লিমিট করা হয়নি। অবস্থার ওপর নির্ভর করে অর্থদ-ের পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনা সংক্রান্ত অপরাধের ১০৩ ধারা তুলে ধরে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, বেপরোয়া গাড়ি চালনার কারণে প্রাণহানির ক্ষেত্রে তদন্তে যদি প্রমাণিত হয় ইন্টেনশন (ইচ্ছাকৃত) ছিল তবে এর শাস্তি ৩০২ ধারা অনুযায়ী হবে। এর শাস্তি মৃত্যুদ-। ৩০৪ (বি) এর শাস্তি বাড়িয়ে ৩ বছর থেকে ৫ বছর করা হয়েছে। এবং অজামিনযোগ্য করা হয়েছে, আগে জামিনযোগ্য ছিল। পার্শবর্তী দেশগুলোতে সড়ক পরিবহন আইনে সড়ক নিরাপত্তার জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই। সড়ক দুর্ঘটনার মাধ্যমে প্রাণহানি হত্যার পর্যায়ে গেলেই কেবল দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুযায়ী শাস্তি হবে। যে অপরাধে যে শাস্তি ॥ ১৯৮৩ সালের অধ্যাদেশের সঙ্গে নতুন আইনে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে জানিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর শাস্তি সর্বোচ্চ ৪ মাসের জেল বা ৫০০ টাকা অর্থদণ্ড। নতুন আইনে বলা হচ্ছে ৬ মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া গাড়ি চালানোর শাস্তি এখন ৩ মাসের জেল বা ২ হাজার টাকা জরিমানা। নতুন আইনে এই শাস্তি ৬ মাসের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানোর জরিমানাও বর্তমানে সর্বোচ্চ ৩ মাসের জেল বা জরিমানা ২ হাজার টাকা জানিয়ে সড়ক সচিব বলেন, নতুন আইনে এই অপরাধের শাস্তি ৬ মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। গাড়ির চেসিস পরিবর্তন, জোড়া দেয়া, বডি পরিবর্তন করার বর্তমান শাস্তি ২ বছরের কারাদ- বা ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। সেখানে নতুন আইনে শাস্তি এক থেকে ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। সড়কের ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে তবে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী দায়ী হবে কিনা- জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, ওদের দায়ী করা হবে, সেটা আইনে আছে। ধারা ৫০-এ বলা আছে তারা দায়ী হবেন। এই ধারায় বলা হয়েছে, এই আইন বা অন্য কোন আইনের অধীন কোন সরকারী কর্মচারী তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব অবহেলা বা ত্রুটিপূর্ণভাবে পালন করার কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে ওই কর্মচারীকে দায়ী করে প্রচলিত আইনে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। অদক্ষ চালক নিয়োগের ক্ষেত্রে মালিকদের সাজার বিষয়টি খসড়া আইনে আছে কিনা-এ বিষয়ে সড়ক সচিব বলেন, খসড়া আইনে বলা আছে, চালকের সঙ্গে চুক্তিপত্র ছাড়া নিয়োগ দিতে পারবে না। চুক্তি করতে হলে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স লাগবে।শ্রম আইন অনুযায়ী চুক্তিপত্র থাকতে হবে। ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে অষ্টম শ্রেণী পাস হতে হবে ॥ ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে। পেশাদার ডাইভিং লাইসেন্স পেতে চাইলে বয়স ২১ বছর হতে হবে। কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণী পাস হতে হবে। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী ড্রাইভারের লাইসেন্সের বিপরীতে ১২ পয়েন্ট বরাদ্দ থাকবে। অপরাধ করলে পয়েন্ট কাটা যাবে, পয়েন্ট শূন্য হয়ে গেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। লাল বাতি অমান্য করে যানবাহন চালালে, পথচারী পারাপারের নির্দিষ্ট স্থানে ওভারটেক করলে একটি করে পয়েন্ট কাটা যাবে। ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী ব্যক্তি অপ্রকৃতস্থ, অসুস্থ, শারীরিক বা মানসিকভাবে অক্ষম, মদ্যপ, অভ্যাসগত অপরাধী হলে লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করা যাবে। যে যানবাহনগুলো ভাড়ায় খাটে না যেমন, সরকারী যানবাহন, মৃত বহন ও সৎকারে নিয়োজিত পরিবহন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, এ্যাম্বুলেন্স, রেকার; এগুলোকে রুট পারমিট থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। নতুন আইনানুযায়ী কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থে সারা বাংলাদেশ বা যে কোন এলাকার জন্য যে কোন ধরনের মোটরযানের সংখ্যা নির্ধারণ করে দিতে পারবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সিঙ্গাপুরে যে কেউ গাড়ি নামাতে পারে না, কারণ ওখানে সংখ্যা নির্ধারণ করে দেয়া আছে। যে কোনো ধরনের গাড়ির জীবনকাল প্রজ্ঞাপন দিয়ে সরকার নির্ধারণ করে দিতে পারবে। চালক ও তার সহকারীদের যথাযথভাবে রেস্ট হয় না। তাদের সুবিধার জন্য সরকারী প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শ্রম আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মঘণ্টা ও বিরতিকাল নির্ধারণ করে দেয়া যাবে। নিয়োগকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আবশ্যিকভাবে সেই কর্মঘণ্টা বা বিরতিকাল মেনে চলতে হবে। গতিসীমা, শব্দমাত্রা, পার্কিংয়ের বিষয় আইনে বলা আছে। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট চালক ও তার সহকারীরা তাৎক্ষণিকভাবে কাছের থানা এবং ক্ষেত্রমতো ফায়ার সার্ভিস, চিকিৎসাসেবা ও হাসপাতালকে অবহিত করবে। আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির জীবন রক্ষার্থে কাছের সেবাকেন্দ্র বা হাসপাতালে পাঠানো ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। পুলিশ দেশব্যাপী টোল ফি নম্বর প্রবর্তন করবে যার মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা কবলিত মোটরযানের চালক ও তার সহকারী, মালিক, পরিচালক বা তাদের প্রতিনিধি বা অন্য কোনো ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট নম্বরে ফোন করে জানাতে পারবেন। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা তার পরিবারকে সহায়তায় তহবিল ॥ কোন মোটরযান দুর্ঘটনায় কেউ আঘাতপ্রাপ্ত হলে বা মারা গেলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি তার উত্তরাধিকারী আর্থিক সহায়তা তহবিল থেকে ট্রাস্টি বোর্ড কর্তৃক ক্ষতিপূরণ বা চিকিৎসার খরচ পাবেন। এই সহায়তা তহবিল কীভাবে গঠন হবে আইনে তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ওই তহবিল পরিচালনায় ট্রাস্টি বোর্ড করা হবে। সরকার অনুদান, মোটরযানের মালিকের কাছ থেকে আদায়কৃত চাঁদা, এই আইনের অধীন জরিমানার অর্থ, মালিক সমিতির অনুদান, মোটর শ্রমিক ফেডারেশন বা সংগঠনের অনুদান বা অন্য কোন বৈধ উৎস থেকে পাওয়া অর্থ নিয়ে এই তহবিল গঠন করা হবে। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী মদ বা নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করে কেউ গাড়ি চালাতে পারবে না জানিয়ে তিনি বলেন, এসব সেবন করে চালকের সহকারী গাড়িতে অবস্থান করতে পারবে না। চালকের সহকারীদের যানবাহন চালানোর দায়িত্ব দেয়া যাবে না। সড়ক বা মহাসড়কে উল্টোপথে গাড়ি চালাতে পারবে না। মোটরযান চালানোর সময় চালক মোবাইল ফোন বা অনুরূপ কোন কিছু ব্যবহার করতে পারবে না। সিট বেল্ট বাঁধতে হবে। কোন যাত্রী যান চালাতে চালককে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় এমন কোন আচরণ করতে পারবেন না। মহিলা, শিশু, প্রতিবন্ধী ও বয়োজ্যেষ্ঠ যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে অন্য কেউ বসতে পারবে না। যাত্রীদের সিটবেল্ট বাঁধার বিষয়ে নির্ধারিত বিধান অনুসরণ করতে হবে। এসব বিধান না মানলে আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। আইনমন্ত্রীর বক্তব্য ॥ বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটলে তা তদন্তে হত্যা প্রমাণিত হলে চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক। আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, যদি দেখা যায়, চালক হত্যাই করেছে তবে ৩০২ ধারা অনুযায়ী বিচার হবে। কিন্তু আপনাদের মনে রাখতে হবে তদন্ত সাপেক্ষে যখন তথ্য ভিন্ন পাওয়া যায়। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে ৩০২ এ যাবে তা না। তদন্ত এবং তথ্যের ওপর নির্ভর করে এটাকে কোন খাতে যাবে সেটা তদন্ত যারা করবেন তারা ঠিক করবেন। তিনি বলেন, যদি তদন্তে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায় তবে দ-বিধির ৩০২ এবং ক্ষেত্রমতে, ৩০৪ ধারা এই আইনেও প্রযোজ্য হবে। ৩০২ প্রমাণ করতে হলে ইনটেনশনটাও প্রমাণ করতে হবে। একটা মানুষকে মারলেই ৩০২-এ আপনি করবেন এ রকম না। আগে দ-বিধির ৩০৪ (বি) তে সাজা ছিল সাত বছর। ১৯৮৫ সালে সাজা কমিয়ে তিন বছর করা হয়। আজকে সেই সাজা বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। বেপরোয়া গাড়ি চালনার কারণে দুর্ঘটনায় কেউ যদি গুরুতর আহত হন বা মৃত্যুরবণ করেন তাহলে শাস্তি হচ্ছে পাঁচ বছর। সংসদে পাসের আগে আইনটি অধ্যাদেশ আকারে কার্যকরের কোন পরিকল্পনা নেই জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, সংসদে কবে যাবে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় বলতে পারবে। মন্ত্রিসভায় আলাপ-আলোচনা হয়েছে এটা অর্ডিনেন্স (অধ্যাদেশ) করা হবে না। এটা পার্লামেন্টের মাধ্যমে পাস হবে। তিনি বলেন, আমার মনে হয় পার্লামেন্টের মাধ্যমে পাস হলে এটা নিয়ে আরও আলাপ-আলোচনার সুযোগ থাকবে। নতুন সড়ক পরিবহন আইন শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ করতে পেরেছে কিনা- জানতে চাইলে আনিসুল হক বলেন, তাদের দাবি নিশ্চয়ই পূরণ হয়েছে। কারণ হচ্ছে এই যে ভ্রান্ত একটা ধারণা ছিল এখানে হত্যা প্রমাণিত হলেও দ-বিধির ৩০২ বা ৩০৪ ধারা প্রযোজ্য হবে না, সেই জিনিসটা আজকে দূর হলো। নতুন আইনে থাকা সড়ক দুর্ঘটনার শাস্তি ৫ বছর যথেষ্ট কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, মনে হয়ে যে অপরাধকে আমরা পাঁচ বছরের আওতায় এনেছি তা যথেষ্ট। দুর্ঘটনার পর চালক ও তার সহকারীরা পালিয়ে গেলেও যেন ধরা যায় সেইসব বিধান আইনে রাখা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ মামলা সব সময় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, রমিজ উদ্দিনের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় তদন্ত শেষ হলে তা দ্রুত বিচার আইনের অধীনে বিচার করা হবে।
×