ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শহিদুল ইসলাম

মানসিক চাপ দূরে থাক

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ৬ আগস্ট ২০১৮

 মানসিক চাপ  দূরে থাক

মানুষের চারপাশে যত রকম ঘটনা ঘটে, তা মানুষের মনের ভেতর আন্দোলিত হয়। তাই কোন আনন্দের খবর, সাফল্যের খবরে মানুষ যেমন উদ্দীপ্ত হয় তেমনি কোন দুঃখ বা ব্যর্থতার খবরে মানুষ হতাশ হয়, কষ্ট পায়। এসব ঘটনা থেকেই মানুষ তার মনের ভেতর এক ধরনের চাপ অনুভব করে থাকে- যা আমরা মানসিক চাপ বলে অভিহিত করি। এই মানসিক চাপ এড়ানোর কোন উপায় মানুষের নেই বলেই আমরা বলে থাকি। যার মন আছে তার মানসিক চাপও আছে। মানসিক চাপ এড়াতে না পারলেও তা সহজে মোকাবেলা করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সবার জন্যই জরুরী। কারণ, মানসিক চাপে শারীরিক ক্ষতি তো হয়ই, মাঝে মাঝে মৃত্যুরও কারণ হয় এই মানসিক চাপ। মানসিক চাপের কারণ : মানুষ অনুভূতিপ্রবণ। চারপাশের নানা ঘটনার প্রভাব মানুষের মনের ওপর পড়ে। নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় মানসিক চাপ অনুভব করে মানুষ। এই চাপের পরিমাণ তীব্র হলে, মানসিক বিপর্যয় ঘটে। মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়। প্রতিটি মানুষ নিজস্ব চিন্তাচেতনা নিয়ে বেড়ে ওঠে। এই চিন্তাচেতনায় বিরাট প্রভাব থাকে তার পারিবারিক কারন। পরিবেশের প্রভাবও থাকে। তার এই নিজস্ব চিন্তা-ভাবনার বিপরীত কিছু যখন তার অস্তিত্বে, আবেগ ও মর্যাদায় আঘাত করে তখনই ভেতর দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এই দ্বন্দ্ব থেকে সে মানসিক চাপ অনুভব করে। একই সঙ্গে কাউকে ভালবাসা এবং ঘৃণা করা মানুষের মনে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে। একই মানুষের একটি বৈশিষ্ট্য ভাল একটি বৈশিষ্ট্য খারাপ হলে এই সমস্যাটি হয়। তখন সম্পর্ক রাখা না রাখা নিয়ে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। ছাত্রছাত্রী মানসিক চাপে ভোগে পরীক্ষা সামনে আসলে। একজন কর্মজীবী মানুষও তার কর্মক্ষেত্র নিয়ে নানা ধরনের মানসিক চাপে ভোগে। প্রমোশন আটকে যাওয়া, বসের মন না পাওয়া। হঠাৎ কোথাও দূরে বদলি হওয়া এ সবই কর্মজীবীদের মানসিক চাপের কারণ। হিংসুক, অহঙ্কারী স্বভাবের মানুষের নিত্যসঙ্গী মানসিক চাপ। আবার, যোগ্যতার থেকে বেশি বেশি আশা করা মানুষগুলো তাদের চাহিদামতো কিছু না পেয়ে সর্বদাই মানসিব চাপে ভোগে। সঙ্কীর্ণ মনের এবং স্বার্থপর লোভী মানুষগুলো তাদের স্বভাব দোষের কারণে মানসিক চাপে ভোগে। মানসিক চাপের পরিণতি : মানুষের মনের গতিবিধির ওপর মানুষের আচরণ নির্ভর করে। মানুষ তার আবেগ, ক্ষোপ প্রকাশ করে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি ও কার্যকলাপের মাধ্যমে। মানুষের বাড়তি চাপ, তার হৃৎপি-ের ওপর চাপ বাড়ায়। হাটবিট বেড়ে যায় ফলে হৃদযন্ত্রের কাজ বেড়ে গিয়ে অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ায়। এ চাহিদা মিটাতে না পারলে জীবনের ঝুঁকি বাড়ে। মানসিক চাপের পরিমাণ বাহ্যিক লক্ষণেও প্রকাশ পায়। যেমন : চিৎকার-চেঁচামিচি করা, অসংলগ্ন আচরণ, খিটখিটে মেজাজ দেখানো, প্রাপ্তির চরম লেখা থেকেও মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। এই গরমে মানুষ নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, নানা দুর্ঘটনা ঘটায়। মানসিক চাপ কখনও ভাল কিছু বহন করে না বলেই এটা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চলতে হয়। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করবেন যেভাবে : জীবনে চাপ আছে, থাকবে। অন্য কথায় বললে, জীবন মানেই চাপ। মানসিক চাপ এড়ানোর উপায় নেই বলে। একে নিয়ন্ত্রণ করে চলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে চাপ নিয়ন্ত্রণের কিছু নিয়ম বলেছেন। সদা আনন্দে থাকুন : চাপ নিয়ন্ত্রণে হাসির জুড়ি নেই। মনোবিজ্ঞানী রবার্ট হোল্ডেনের মতে হাসি পেশীকে শিথিল করে, টেনশন কমায়। রক্তচাপ কমায়, অক্সিজেন গ্রহণের ক্ষমতা বাড়ায়। প্রাপ্তি যেমন আনন্দিত হন। পাশাপাশি মেনে নিন অপ্রাপ্তিকেও। কারণ এক জীবনে সব পাওয়া সম্ভব নয়। তাই মনকে সতেজ রাখুন। চাহিদা হোক সীমার মধ্যে : নিজের আয়ের ওপর নির্ভর করে ব্যয় করুন। কারণ অর্থের অভাব মানুষকে চাপে ফেলে। স্ত্রীদের উচিত স্বামীর আয়ের বিষয় বিবেচনা করে চলা। এতে স্বামী চাপমুক্ত থাকে। স্ত্রীরও অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা হয় না। অর্থাৎ সাধ্যের সীমায় সাধকে ধরে রাখুন। চাপ মুক্ত থাকুন। বর্তমান নিয়ে ভাবুন : মনোবিজ্ঞানী বরিসেঞ্চের মতে, মানুষের চিন্তা মূলত অতীত ও ভবিষ্যত নিয়ে। অতীতকে ফিরিয়ে আনা যায় না। ভবিষ্যতকেও ধরা যায় না। তাই বর্তমান নিয়ে ভাবুন। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমান নিয়ে ভাবুন। ভবিষ্যত সুন্দর হবে। ইগো ঝেড়ে ফেলুন : ইগো একটি ভয়ানক বিষয়। যা মানুষের সর্বদাই ক্ষতি করে। অযথা ইগোতে ভুগবেন না। নিজের অবস্থান বুঝে চলুন। নিজেকে জয় করুন। খেয়াল রাখুন। আপনার কোন আচরণ যেন অন্যের মানসিক চাপের কারণ না হয়। এ ছাড়া আরও যা করতে পারেন : নিজ মেধার ব্যবহার করুন। নিয়মিত ব্যায়াম করুন। মেডিটেশন বা প্রার্থনা করুন প্রভুর নামে, জীবনকে সরল পথে চালান। পরিমাণ মতো বিশ্রাম নিন। পরিশেষে নিজেকে যেমন বুঝতে হবে, তেমনি অন্যকেও। অন্যর কথা না শুনে নিজের বাস্তব অবস্থান বুঝে নিজের সিদ্ধান্ত নিন। আবেগ, ক্ষোভ নয়, বাস্তবমুখী হোন। মনে রাখবেন, সবই আপনার নিয়ন্ত্রণে। প্রয়োজন শুধু নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে চলা। সবাই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ রেখে সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন।
×