ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বোচ্চ শাস্তির সড়ক পরিবহন আইন মন্ত্রিসভায় যাচ্ছে আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৬ আগস্ট ২০১৮

  সর্বোচ্চ শাস্তির সড়ক পরিবহন আইন মন্ত্রিসভায় যাচ্ছে আজ

তপন বিশ্বাস ॥ সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে সড়ক পরিবহন আইন আজ মন্ত্রিসভায় উঠছে। নতুন এ আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ট্রাফিক আইন অমান্য করলে পয়েন্ট কাটার ব্যবস্থাও থাকছে এই আইনে। নির্ধারিত পয়েন্টের নিচে গেলে লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। চালককে নতুন করে আবার লাইসেন্স নিতে হবে। এক বছর ঝুলে থাকার পর নতুন সড়ক পরিবহন আইন আবার মন্ত্রিসভায় উঠছে। গতবছর আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। গত বুধবার আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং সম্পন্ন করা হয়েছে। আজ সোমবার এটি মন্ত্রিসভায় উত্থাপিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যে নতুন এই আইনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদনের পর এটি তোলা হবে জাতীয় সংসদে। আগের আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন বাধ্যবাধকতা ছিল না। নতুন আইনের খসড়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য চালকের কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণী পাসের শর্ত রাখা হয়েছে। সহকারী হতেও শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। আগের অধ্যাদেশে সহকারীদের লাইসেন্সের কথা থাকলেও তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত ছিল না। নতুন আইনে চালকের সহকারীরও থাকতে হবে পঞ্চম শ্রেণী পাসের সার্টিফিকেট। সহকারী হতে বাধ্যতামূলকভাবে লাইসেন্সের বিধান তো থাকছেই। ব্যক্তিগত গাড়ি চালনার জন্য চালকের বয়স আগের মতোই অন্তত ১৮ বছর রাখা হয়েছে। তবে পেশাদার চালকদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর। নতুন আইনের খসড়ায় চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে অনধিক ছয় মাসের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ড দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। আগের আইনে এই অপরাধের জন্য তিন মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। সহকারীরও সাজা প্রদানের সুযোগ থাকছে এই আইনে। চালকের সহকারীর লাইসেন্স না থাকলে এক মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে নতুন আইনের খসড়ায়। নতুন আইন পাস হলে গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না চালক। এ আইন ভাংলে এক মাসের কারাদন্ড বা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। ছয় মাসের কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে- এমন অপরাধের ক্ষেত্রে চালককে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে পুলিশকে। বিধি অমান্য করলে পয়েন্ট কাটার বিধান রাখা হয়েছে আইনে। প্রস্তাবিত আইনে লাইসেন্সে থাকবে মোট ১২ পয়েন্ট। বিভিন্ন বিধি অমান্যে কাটা যাবে এই পয়েন্ট। পয়েন্ট শূন্য হলে বাতিল হবে চালকের লাইসেন্স। দুর্ঘটনার জন্য শাস্তি দেয়া হবে ফৌজদারি দন্ড বিধি অনুযায়ী। নরহত্যা হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদন্ড। হত্যা না হলে ৩০৪ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদন্ড হবে। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে কাউকে আহত করলে তিন বছরের কারাদন্ড হবে। গত বুধবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় যে শাস্তি হওয়া উচিত, তার সর্বোচ্চটাই থাকছে সড়ক পরিবহন আইনে। ১৯৯১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিজের স্ত্রীকে হারিয়েছেন উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, আমি জানি স্বজন হারানোর কষ্ট কী। তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়ে বলেন, বছরখানেক ধরে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, সড়কে অনেক রকম সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখার চেষ্টা করেছি। জানার চেষ্টা করেছি কী কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে রাস্তার কারণে, গাড়ির কারণে, মানুষ চলাচলের কারণে, দুর্ঘটনা হতে পারে। এসব কারণের ব্যাপারে পর্যাপ্ত প্রভিশন করা হয়েছে কী না, সেগুলো (একই ঘটনা) যাতে না ঘটে, সে জন্য পর্যাপ্ত প্রভিশনের মধ্যে আছে কী না এবং সেখানে আইনের কোন ফাঁকফোকর আছে কী না, সেসব দেখে এটা (সড়ক পরিবহন আইন) প্রস্তত করা হয়েছে। দুজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর কারণে তড়িঘড়ি করে আইনটি প্রস্তত হলো কিনা এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, এটা কাকতালীয় ঘটনা। এটা নিয়ে অনেক দিন ধরেই কাজ চলছিল। আর এরই মধ্যে এ রকম একটা দুর্ঘটনাও ঘটেছে। এ রকম ঘটনা যেন আর না ঘটে সে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পক্ষ থেকে যা যা উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার সবই করা হবে। প্রধানমন্ত্রী চান আইনটি দ্রুত পাস হোক এবং অপরাধীরা শাস্তি পাক।
×