ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিজ জয়ের আশায় আজ শেষ ম্যাচ

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৬ আগস্ট ২০১৮

 সিরিজ জয়ের আশায় আজ শেষ ম্যাচ

মিথুন আশরাফ ॥ স্ট্রাইক থেকে ননস্ট্রাইক প্রান্তে খেলার সিদ্ধান্ত নিতেই সাফল্য কুড়িয়ে পেলেন তামিম ইকবাল। প্রথম টি২০তে রানের খাতা খোলার আগেই আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় টি২০তে ননস্ট্রাইক প্রান্ত থেকে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন তামিম। তাতেই সাফল্য ধরা দেয়। ম্যাচের নায়কও হন তামিম। ওপেনার তামিমের ৭৪ রানের অসাধারণ ইনিংসের সঙ্গে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১২ রানে হারায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ৫ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৭১ রান করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯ উইকেট হারিয়ে ২০ ওভারে ১৫৯ রানের বেশি করতে পারেনি। তাতে করে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজেও আসে ১-১ সমতা। যদিও এই সমতা আজ সকাল ৬টায় শুরু হতে যাওয়া তৃতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচের ইতি ঘটতেই শেষ হবে। হয় বাংলাদেশের সিরিজ জয়, নয়তো হারে তা শেষ হবে। প্রথম টি২০ হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেন্ট কিটসে। তাতে বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে হারে। সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে। প্রথম টি২০ ম্যাচটির পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলাও শেষ হয়। তবে দুটি টি২০ বাকি থাকে। আর সেটি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় হচ্ছে। ‘নতুন ভেন্যু’ বলেই বাংলাদেশের আশা ছিল। ক্রিকেটারদের ভেতর বিশ্বাসও ছিল, ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। দল ঘুরেও দাঁড়াল। দ্বিতীয় টি২০তে জিতে গেল। এখন আজকের ম্যাচটি সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে পরিণত হয়ে গেছে। দ্বিতীয় টি২০তে টস হারে বাংলাদেশ। ফ্লোরিডার লওডারহিলের সেন্ট্রাল ব্রোওয়ার্ড রিজিওনাল পার্ক স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এর আগে কোন দলই হারাতে পারেনি। নিউজিল্যান্ড, ভারত কুপোকাত হয়েছে। এবার প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে খেলেই বাজিমাত করেছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজও ভেন্যুটিতে প্রথমবারের মতো হেরেছে। তা সম্ভব হয়েছে ব্যাটিংয়ে তামিমের ৪৪ বলে ৬ চার ও ৪ ছক্কায় করা অসাধারণ ব্যাটিংয়ের সঙ্গে সাকিবের ৩৮ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় করা ৬০ রানের সুবাদে। আগে যে বাংলাদেশই ব্যাটিং করেছে। চতুর্থ উইকেটে তামিম-সাকিবের ৯০ রানের জুটিইতো আসল ভরসা তৈরি করেছে। এরপর বল হাতেও সাকিব ঘূর্ণি জাদু দেখান। ৪ ওভারে ১৯ রান দিয়ে ২ উইকেট শিকার করেন। ৩ উইকেট করে নেয়া মুস্তাফিজুর রহমান ও নাজমুল ইসলাম অপুও ছোবল দেন। তাতে করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা কাত হয়ে পড়েন। অথচ তামিম ও সাকিব হাল না ধরলে বাংলাদেশের বিপদই ছিল। ৪৮ রানের মধ্যে লিটন কুমার দাস, মুশফিকুর রহীম ও সৌম্য সরকার সাজঘরে ফেরেন। এদিন শুরুতেই স্ট্রাইকিং প্রান্তে থাকেন লিটন। বাংলাদেশ দল কিছুটা পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনে। মেহেদী হাসান মিরাজকে একাদশের বাইরে রেখে আবু হায়দার রনিকে খেলানো হয়। রনি উইকেট নিতে পারেননি। তবে ৪ ওভার বল করে ২৬ রানের বেশিও দেননি। লিটনকে স্ট্রাইকিংয়ে খেলার সুযোগ দিয়ে তামিম ননস্ট্রাইকিংয়ে থাকেন। শুরুটা এভাবেই করেন তামিম। এরপর দেখতে দেখতে ৩ উইকেটের পতন ঘটে। তবে তামিম উইকেট আঁকড়ে থাকেন। তার যে এখন জানা হয়ে গেছে, উইকেটে টিকে থাকতে পারলে রান আসবেই। তাইতো তামিম ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকেন। সুযোগ পেলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। তবে খুব সাবধানে এগিয়ে গেছেন। প্রথম টি২০তে যে রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়েছিলেন। তাতে দলও ভুগেছে। রবিবার সেই ভুল করেননি তামিম। খেলা টি২০। তাই কোনভাবেই রান ও বল এক হতে দেননি। সবসময়ই বলের চেয়ে রান বেশি করেছেন তামিম। সাকিবও সমান তালে এগিয়ে যেতে থাকেন। দুইজনের বোঝাপড়াটা দারুণ হয়। ৩ উইকেট দ্রুত পড়ে যাওয়ার পর যদি তামিম কিংবা সাকিব যে কোন একজন আউট হয়ে যেতেন তাহলেই খাদের কিনারায় পড়ে যেত বাংলাদেশ। তা হতে দেননি তামিম ও সাকিব। দেখতে দেখতে দল ১৫তম ওভারে ১১৬ রানে চলে যায়। এমন সময় হাতে ৫ ওভার থাকে। উইকেট থাকে ৭টি। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের ওপর চড়াও হওয়া ছাড়া বিকল্প কোন পথ খোলা ছিল না। রান ১৭০-এর ঘরে না নিতে পারলে বিপদ হতে পারে। তাই তামিম চড়াও হলেন। ১৬তম ওভারে আন্দ্রে রাসেলের ৫ বলে ২২ রান তুলে ফেলেন তামিম। তিন ছক্কা, দুই চার হাঁকান। এক বছরে ১০০০ রান করার কৃতিত্বও গড়েন। ষষ্ঠ বলেও হাঁকিয়েছিলেন। কিন্তু লংঅনে ক্যাচ আউট হন তামিম। ১৩৮ রানে গিয়ে তামিম-সাকিবের জুটির ইতি ঘটে। এরপর রানের গতি খানিকটা ধীরলয়ে চলতে থাকে। পরের দুই ওভারে তো ১১ রানের বেশি করাই যায়নি। শেষ দুই ওভারে আবার রান আসে। সাকিব শেষ ওভারের তৃতীয় বলে আউট হয়ে যান। সাকিবের সঙ্গে মাহমুদুল্লাহ (১৩*) শেষে রানের গতি বাড়ান। যে রান হয় তাতেই জেতার আশা জাগে। বোলাররা দুর্দান্ত বল করায় জেতাও যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন ৫৮ রানে তখনই ৪ উইকেটের পতন ঘটে। ম্যাচ যেন সেখানেই বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। পঞ্চম উইকেটে গিয়ে ওপেনার আন্দ্রে ফ্লেচার ও রোভমেন পাওয়েল মিলে একটু আতঙ্ক ছড়ান। দুইজন মিলে ৫৮ রানের জুটিও গড়ে ফেলেন। বাংলাদেশের চেয়েও দ্রুত গতিতে রান নিতে থাকেন দলের হয়ে দুই সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক, ৪৩ রান করা ফ্লেচার ও পাওয়েল। এমন সময় ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভূত হন যেন নাজমুল ইসলাম অপু। তার ঘূর্ণির ফাঁদে পড়ে দলের ১১৬ রানের সময় সাকিবের হাতে ক্যাচ আউট হন ফ্লেচার। বাংলাদেশ দলেও যেন স্বস্তি ফিরে। এরপর একজন করে ব্যাট হাতে নামেন। কিছুক্ষণ উইকেটে থাকেন। আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন। দলের ১৩১ রানের সময় ব্রাথওয়েট যখন আউট করেন সাকিব ও ১৪৬ রানের সময় যখন পাওয়েলকে ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজ, তখন ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরিই বাংলাদেশের হাতে চলে আসে। শেষ পর্যন্ত ১৫৯ রানের বেশি করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতায় ফিরে। সমতায় ফিরতেই আজকের ম্যাচে জেতার আশাও করছেন অধিনায়ক সাকিব। জিতলেই যে টি২০ সিরিজ জয় হয়ে যাবে।
×