ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষক-অভিভাবকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী অগ্নিসন্ত্রাসীরা আন্দোলনে ঢুকে নাশকতা চালাচ্ছে গুজবে কান দেবেন না

সন্তানকে ক্লাসে ফেরান ॥ আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ঢুকেছে

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ৬ আগস্ট ২০১৮

সন্তানকে ক্লাসে ফেরান ॥ আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ঢুকেছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুযোগ নিতে ‘তৃতীয় পক্ষ’ মাঠে নেমেছে জানিয়ে আন্দোলনরতদের এখন ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমরা এখন যেটা দেখতে পাচ্ছি, সেটা আরও ভয়ানক। এর ভেতরে তৃতীয় পক্ষ চলে এসেছে। এখন এই তৃতীয় পক্ষ যে কোন অঘটন যদি ঘটায়, তার দায় কে নেবে? স্কুল পোশাক ও আইডি কার্ড বিক্রি বেড়ে গেছে হঠাৎ করে। এগুলো কারা করছে? এরা কি আদৌ ছাত্র? কখনও মুখে কাপড় বেঁধে এদের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। তৃতীয় শক্তি এরা মানুষ না। এরা পারে না এমন কোন কাজ নেই। তিনি বলেন, অগ্নি-সন্ত্রাস সৃষ্টিকারীরা যে কোন অঘটন ঘটাতে পারে। যখন আমি এটা দেখলাম তখনই আমি আতঙ্কিত এই শিশুদের নিয়ে। যারা আগুন দিয়ে মানুষ মারতে পারে, যারা অনিক-হৃদয়ের মতো মেধাবী ছাত্রদের পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে পারে, তারা কি না পারে এদেশে। সে কারণেই অনুরোধ শিক্ষক, অভিভাবক, পিতা-মাতাদের প্রতি- সন্তানদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আপনাদের। কাজেই তাদের রাস্তা থেকে তুলে স্কুল-কলেজে পাঠান। তারা পড়াশোনা করুক। তারা যেটুকু করেছে যথেষ্ট। কোন রকমের গুজবে কান না দিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের ভেতরেই একটা অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টিরও অপচেষ্টা চলছে। তাই দয়া করে আপনারা কোন ধরনের গুজবে কান দেবেন না। কোন মিথ্যা প্রচারে বিভ্রান্ত হবেন না। যা-ই দেখেন বা শোনেন, প্রথমে তা যাচাই করবেন। কোন কিছু যাচাই না করে বিশ্বাস করবেন না। বিশেষ করে আমি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, যুব সমাজ ও তরুণদের এ অনুরোধ করছি। রবিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল বাস্তবায়নাধীন ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে দশটি জেলার ৩শ’ ইউনিয়নের অপটিক্যাল ফাইবার কানেক্টিভিটির উদ্বোধনকালে তিনি এ অনুরোধ করেন। ডিজিটাল প্রযুক্তিকে নোংরা কথা, অপপ্রচারে ব্যবহার না করে ভাল কাজে ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ইন্টারনেট সোশ্যাল মিডিয়া, ফেসবুক-ইউটিউব-এগুলো ভাল কাজে ব্যবহার করুন, গুজব বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজে নয়। সেখানে নোংরা বক্তব্য দেয়া, নোংরা কথা বলা, অপপ্রচার চালানো পরিহার করতে হবে। তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি যেটা মানুষের জীবন গড়ার কাজে, জীবনকে সুন্দর করার কাজে ব্যবহার করতে পারি। শিক্ষা গ্রহণের কাজে ব্যবহার করতে পারি সেটার যেন কোনভাবেই অপব্যবহার না ঘটে তাই আমরা চাই। আজ এই ডিজিটাল পদ্ধতিতে মানুষের যেমন সেবা বাড়ছে, তেমনি মাঝে মাঝে কিছু ঝামেলারও সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা যেখানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছি সেখানে সোশ্যাল মিডিয়াতে অপপ্রচার চালিয়ে দেশের ভেতর একটি অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টিরও কেউ কেউ চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, আমি এখন শঙ্কিত এই স্কুলের ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে। কারণ অতীতে যারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করতে পারে, শিক্ষার্থীদের হত্যা করতে পারে, চলন্ত গাড়িতে পেট্রোল ছুড়ে মেরে মানুষ হত্যা করতে পারে, তারা যখন এর সঙ্গে নেমে আসে তখন তারা কি না করতে পারে? মেধাবী ছাত্রদের পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে তারা সব কিছু করতে পারে। তিনি বলেন, আমরা এখন যেটা দেখতে পাচ্ছি, সেটা আরও ভয়ানক। গাউসিয়া মার্কেটে স্কুল পোশাক তৈরির হার অনেক বেড়ে গেছে, পলাশীতে স্কুলের শিক্ষার্থীদের নতুন পরিচয়পত্র তৈরি করা হচ্ছে, মুখে কাপড় বেঁধে, হেলমেট পরে এরা হামলায় অংশ নিচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য বিরাট হুমকি। আর ঢাকার বাইরে থেকে লোক নিয়ে আসছে এখানে। তাদের কাজটা কী হবে? সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করা। যখনই আমি এটা দেখলাম তখনই আমি আতঙ্কিত এই শিশুদের নিয়ে। রবিবার থেকে ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু করেছি। তার আগে ছোট বাচ্চারা করেছে। খুব ভাল কথা। এখন আর তাদের ট্রাফিক দেখার দরকার নেই। তারা যদি কেউ স্বেচ্ছা সার্ভিস দিতে পারে, তাদের আমরা কাজে লাগাতে পারি। গাড়ির কাগজপত্র দেখা, ফিটনেস দেখা, এটা পুলিশের দায়িত্ব। তারা দেখবে। শিক্ষার্থীদের রাস্তায় নামার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকে তারা রাস্তায় নেমে এসেছে। গত কয়েকদিন পর থেকে তারা যা যা করার করেছে। গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা করা, আমি জানি না, তারা কতটুকু এটা বোঝে। পুলিশ, র‌্যাব সকলেই কিন্তু ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে এতে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তারা যা বলছে, এমনকি মন্ত্রী, এমপির গাড়িতে তারা যা যা করছে, তারা কিন্তু তা মেনে নিচ্ছে। তারা বাধা দেয়নি। কারণ তাদের অনুভূতি, তাদের সেন্টিমেন্ট আমরা বুঝতে পারি। এরকম একজন সহপাঠী মারা গেলে কি অনুভূতি হয় তা আর কেউ না বুঝুক আমার চেয়ে বেশি কেউ বোঝে না। কারণ আমি আমার পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, বিডিআর গেটে হামলা। সেখানে ফাঁকা গুলি হচ্ছে। এই অস্ত্রটা কোত্থেকে এলো? কারা দিল? অপপ্রচার চালিয়ে দেশের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করা এবং এটা যারা করতে পারে তারা যে কোমলমতি শিশুদের ওপর আঘাত করবে না, ক্ষতি করবে না তা কিভাবে বিশ্বাস করব? সেজন্য আমি সমস্ত অভিভাবক, পিতামাতা তাদের আমি অনুরোধ করব যে তারা যেন শিশুদের ঘরে রাখে। তারা যেটুকু করেছে যথেষ্ট। আমরা তাদের বাধা দেইনি। কিন্তু এখন এই তৃতীয় পক্ষ যে কোন অঘটন যদি ঘটায়, তার দায়-দায়িত্ব কে নেবে? সেজন্য আমি আপনাদের সতর্ক করতে চাই যে, দয়া করে আপনারা আপনাদের ছেলেমেয়েদের এবং প্রত্যেকটি স্কুলে প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলকে আমি অনুরোধ করব, আপনারা আপনাদের ছাত্রদের ক্লাসে ফিরিয়ে নিন। ট্রাফিক সপ্তাহ শুরু হয়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীও ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়ার আহ্বান জানান। এ সময় দেশের কিছু গণমাধ্যমের ভূমিকারও সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে কিছু কিছু পত্র-পত্রিকা আছে। আমাদের দেশের সুস্থ ধারা রাজনীতি থাকলে তাদের পছন্দ হয় না। তারা সবসময় চায় একটা অন্যকিছু ঘটুক। তারা মন্ত্রী হতে পারে, পতাকা পায়, এ আকাক্সক্ষা অনেকেরই আছে। তারা নির্বাচিত হয়ে সরকারে আসতে পারে। আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা বা এ ধরনের মিথ্যাচার করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার কি অধিকার তাদের আছে? দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। যারা গাড়ি চালক তাদেরও যেমন বলেছি, তারা যেন ট্রাফিক রুল মেনে গাড়ি চালায়। আবার যারা পথচারী, যাতায়াত করে তাদেরও ট্রাফিক রুল সম্পর্কে জানতে হবে। ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছি স্কুল থেকেই যেন ট্রাফিক রুল শেখানো হয়। দুর্ঘটনা কমাতে নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথাও উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্ডার-পাস, ওভার পাস করে দিচ্ছি। এছাড়া সড়ক প্রশস্তকরণ, মূল হাইওয়ের পাশে আলাদা সড়ক করা, চারপাঁচ ঘণ্টা পরপর ড্রাইভারদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করাসহ নানা পদক্ষেপ নেয়ার কথা তুলে ধরেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, এদের (আন্দোলনকারীদের) দাবি দাওয়া যা যা ছিল সবই একে একে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। প্রত্যেকটা জায়গায় যেখানেই স্কুল সেখানেই ট্রাফিক পুলিশ থাকবে এবং রাস্তা পারাপারের ব্যবস্থা করে দেবে। তবে সবাইকে ওভারব্রিজ ব্যবহার করার আহ্বান করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে স্বাধীনতার সুফল এবং সেবাসমূহ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া। এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বঙ্গবন্ধু মৌলিক অধিকার খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং আবাসনসহ সরকারী সব ধরনের সেবা ধাপে ধাপে জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন। এখন আমরা তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলার সুবিধাভোগী, কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। ‘জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন (ইনফো-সরকার-থার্ড ফেস)’ প্রকল্পের আওতায় এ অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ দেয়া হলো। অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব মোঃ নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন। আইসিটি বিভাগের সচিব জুয়েনা আজিজ এই প্রকল্পের ওপর একটি উপস্থাপনা পরিবেশন করেন। অন্যদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কারী আবুল কালাম আজাদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। যে ১০ জেলায় ৩০০ ইউনিয়নকে অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগের আওতায় আনা হয়েছে সেগুলো হলো- কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, বগুড়া, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, পটুয়াখালী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী ও চাঁদপুর। মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রতিটি প্রত্যন্ত এলাকায় যেখানে ক্যাবল বা অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ পৌঁছানো সম্ভব নয়, সেখানে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর মাধ্যমে ইন্টারনেটের নেটওয়ার্ক পৌঁছে দিতে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে। জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে প্রায় ১০ কোটি মানুষ দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড সংযোগের আওতায় আসবে। দেশের প্রত্যেক ঘরে ঘরে আলো জ্বলবে ॥ গণভবন থেকে বিকেলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবনির্মিত আটটি বিদ্যুতকেন্দ্র উদ্বোধন করেন। এ সময়ে তিনি দেশের প্রত্যেক ঘরে আলো জ্বালাতে তাঁর সরকারের লক্ষ্যের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের লক্ষ্য দেশের প্রত্যেক ঘরে ঘর আলো জ্বালানো। এই লক্ষ্য পূরণ আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ সময় শেখ হাসিনা দুটি গ্রিড সাব স্টেশন এবং দেশের আরও ২১ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ জনগণের মুখে হাসি ফোটানোর মাধ্যমে সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশ স্বাধীন করেছিলেন। দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে এবং রোগে ভুগে কেউ যেন মারা না যায় ও অন্ধকারে না থাকে সে লক্ষ্যে সরকার পরিকল্পিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা চাই প্রত্যেকে শিক্ষিত হোক। প্রত্যেক ঘরে আলো জ্বলুক। বিদ্যুত ব্যবহারে জনগণকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, বিদ্যুত উৎপাদনে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। এ কথা আপনাদের মনে রাখতে হবে। বিদ্যুত খাতে সরকার প্রচুর পরিমাণে ভর্তুকি দিচ্ছে। উৎপাদন ব্যয়ের চেয়েও আমরা বেশি পরিমাণে ভর্তুকি দিচ্ছি। আর এর মাধ্যমে আমরা জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুত সাশ্রয়ে নিজহাতে সুইচ বন্ধ করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা চাই না বিদ্যুতের অপচয় হোক। দেশের প্রত্যেক এলাকা শতভাগ বিদ্যুতায়নের আওতায় আসবে উল্লেখ করে সরকার প্রধান আরও বলেন, সরকার বিদ্যুত উৎপাদন ৩২০০ থেকে ১৮ হাজার ৯শ’ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছে। আমরা ১২২ বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন করেছি এবং ১৪ হাজার ১৩৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ২৬টি বিদ্যুতকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়াও আমরা ভারত থেকে ছয়শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করেছি এবং এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকে হাইড্রোইলেক্ট্রিসিটি ক্রয়ের ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে। দেশে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সরকার পারমাণবিক বিদ্যুতের মতো বহুমুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। জনগণ এ থেকে উপকৃত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নতুন যেসব বিদ্যুতকেন্দ্র উদ্বোধন করেন সেগুলো হলো- ঘোড়াশালের কোড্ডায় ঘোড়াশাল ৩৬৫ মেগাওয়াট সমন্বিত বিদ্যুতকেন্দ্র, গাজীপুর ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র, দাউদকান্দি ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র, ফেঞ্চুগঞ্জ ২০০ মেগাওয়াট সমন্বিত বিদ্যুতকেন্দ্র, নোয়াপাড়া ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র, মুন্সীগঞ্জের কমলাঘাটে মুন্সীগঞ্জ ৫৪ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র এবং সিদ্ধিরগঞ্জে ৩৩৫ মেগাওয়াট সমন্বিত বিদ্যুতকেন্দ্র (গ্যাস টারবাইন) ও সিদ্ধিরগঞ্জ ২২৫ সমন্বিত বিদ্যুতকেন্দ্র (দ্বিতীয় ইউনিট)। এছাড়া শতভাগ বিদ্যুত সংযোগের আওতায় এসেছে এমন ২১ উপজেলা হচ্ছে- মৌলভীবাজার সদর, গাইবান্ধার সাঘাটা, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, নরসিংদীর মনোহরদী, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল ও কালাই, নওগাঁর পোরশা, রাজশাহীর মোহনপুর ও দুর্গাপুর, পঞ্চগড়ের আটোয়ারী, নীলফামারীর কিশোরীগঞ্জ, ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও সোনাগাজী, চট্টগ্রামের পটিয়া ও হাটাহাজারী, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এবং হবিগঞ্জ সদর উপজেলা। দুটি গ্রিড সাবস্টেশন হলো নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় ৪০০/২০০ কেভি গ্রিড সাবস্টেশন ও খাগড়াছড়ি ১৩২/৩৩ কেভি গ্রিড সাবস্টেশন। প্রধানমন্ত্রী পরে কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, মৌলভীবাজার ও খাগড়াছড়ির উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী এবং বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। বিদ্যুত বিভাগের সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনার মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অর্জন ও পদক্ষেপ তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বিদ্যুত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
×