ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সোমবার ভুটান যাচ্ছে নারী ফুটবল দল

প্রকাশিত: ০৭:৩৫, ৫ আগস্ট ২০১৮

সোমবার ভুটান যাচ্ছে নারী ফুটবল দল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অভিজ্ঞতা এবং ক্রমাগত সাফল্য তৈরি করে শক্ত মানসিকতা। ফলে লক্ষ্য পূরণের জন্য কঠিন পথ পাড়ি দিতে ভয় লাগে না। এই যেমন গোলাম রব্বানী ছোটন এবং তার অধিনায়ক মারিয়া মান্দা ও সহ-অধিনায়ক আঁখি খাতুনকে মোটেও ভীত দেখালো না। বরং তাদের চোখে-মুখে দেখা গেল শিরোপা ধরে রাখার দৃঢ়প্রত্যয়ের ছাপ। শুধু এই তিনজনকেই নয়, বাংলাদেশ অ-১৫ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের সবাইকেই একই চেহারায় দেখা গেল। বছর চারেক আগেও কোন টুর্নামেন্ট খেলার আগে কোচ ছোটন কিন্তু বলতেন না, ‘আমরা চ্যাম্পিয়ন হব।’ বরং বলতেন, ‘আমরা ভাল খেলার চেষ্টা করব।’ অথচ এখন সময়ের পরিক্রমায় পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। এখন সেই একই দ্রোণাচার্য এবং তার শিষ্যারা অসীম আত্মবিশ্বাস নিয়ে অবলীলায় বলতে পারে, ‘আমরা চ্যাম্পিয়ন হবার জন্যই খেলব!’ শনিবার বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কনফারেন্স রুমে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে ঠিক এভাবেই শিরোপা ধরে রাখার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন কোচ ছোটন। তাতে সুর মেলালো মারিয়া এবং আঁখিও। সাফ অ-১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে দ্বিতীয়বারের মতো অংশ নিতে আগামী রবিবার ঢাকা ছাড়ছে ছোটনবাহিনী। টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন তারা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ঢাকার কমলাপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রথম আসরে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। তাই ভুটানে শিরোপা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ নারী ফুটবল দলের সামনে। কোচ ছোটন জানান, সাফে ভাল পারফর্মেন্স করতে প্রস্তুত তার শিষ্যরা। প্রস্তুতিটাও ভাল হয়েছে তাদের। সংবাদ সম্মেলনে মহিলা ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন, ‘সাফের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আমরা। প্রথম আসরে অংশ নেয়া সেই দলের ১৮ ফুটবলার বর্তমান দলেও আছে। গতবারের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে মেয়েদের আত্মবিশ্বাস আছে। চ্যাম্পিয়ন ফাইট করতেই ভুটান যাচ্ছি আমরা। আশা করছি মেয়েরা ভাল করবে।’ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেছেন, ‘দ্বিতীয়বারের মতো সাফে খেলতে যাচ্ছি। প্রথমবার ভাল খেলেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। এরপর থেকে প্রস্তুতি কিন্তু বন্ধ ছিল না। কঠোর অনুশীলন করেছে মেয়েরা। হংকংয়ে আমরা টুর্নামেন্ট খেলে সেখানেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। মাঝে মাত্র সাতদিন বিশ্রাম পেয়েছে মেয়েরা। সাফে খেলতে প্রস্তুত আছি। আল্লাহর রহমত থাকলে এবারও ভাল কিছুই করতে পারব।’ দলীয় অধিনায়ক মারিয়া মান্দার অভিমত, ‘এর আগে আমরা অ-১৫ সাফের চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন হওয়া। সে লক্ষ্যে সফলও হয়েছিলাম। স্যার (ছোটন) বলেছেন সামনে আমাদের অনেক খেলা আছে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছি। দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই যেন ভাল ফল নিয়ে ফিরতে পারি।’ সহ-অধিনায়িকা এবং ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন গত আসরে দুটি দর্শনীয় গোল করে হয়েছিল টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়। এবার তার সংকল্প চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটা দেশবাসীর হাতে তুলে দেয়া, ‘ভুটানে ভাল খেলার জন্যই যাব আমরা। আমি একজন ডিফেন্ডার। সবার আগে দলের ডিফেন্স সামলানোটাই আমার দায়িত্ব। তারপর গোল করার চিন্তা। ভাল খেলে আপনাদের হাতে ট্রফি তুলে দেয়ার ইচ্ছা আমাদের।’ ঢাকায় টার্ফে অনুশীলন করলেও ভুটানে খেলা হবে ঘাসের মাঠে। তাছাড়া মাঠের পার্থক্য মেয়েদের খেলায় কোন সমস্যা হবে কিনা সেটাও দেখার বিষয়। কিন্তু ছোটন এই বিষয়টি মেয়েদের মাথায় দিতে চান না। নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটাই প্রধান লক্ষ্য। পুরো দলের টেকনিক্যাল, ট্যাকটিক্যাল, সাইকোলোজিক্যাল এবং সোশ্যালÑ এই চারটি বিষয় নিয়েই তিনি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন। ছোটন জানানÑ দলে কোন ইনজুরি সমস্যা নেই। বর্তমান দলের ১৮ ফুটবলারেরই খেলার অভিজ্ঞতা আছে অনুর্ধ-১৫ সাফে। এছাড়া হংকংয়ে চার জাতি আমন্ত্রণমূলক জকি কাপেও খেলেছেন দলের ১৮ জন। বাকি ৫ ফুটবলার এসেছে বাংলাদেশ গেমস এবং অ-১৪ জেএফএ কাপে ভাল পারফর্মেন্স করে। এরা হলো : ইলা মনি, শাহেদা আক্তার রিপা, রেহেনা আক্তার, রোজিনা আক্তার এবং নওশন জাহান। মূল লড়াইয়ে নামার আগে বিদেশী কোন দলের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ না হলেও অ-১৮ এবং অ-১৯ দলের সঙ্গে সপ্তাহে ৩-৪টি করে ম্যাচ খেলেছে অ-১৫ দল। এই ম্যাচগুলো খুব কাজে দিয়েছে প্রস্তুতিতেÑ এমনটাই অভিমত ছোটনের। যদিও সাফে কোন প্রতিটি দলকেই শক্তিধর হিসেবে মানছেন ছোটন। লক্ষ্য ম্যাচ বাই ম্যাচ এগুনো। অ-১৫ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের দ্বিতীয় আসরে ছয়টি দল অংশ নেবে। দলগুলো হলো ভুটান, ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ রয়েছে ‘বি’ গ্রুপে। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান ও নেপাল। অন্যদিকে ‘এ’ গ্রুপে রয়েছে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও স্বাগতিক ভুটান। ৯-১৩ আগস্ট পর্যন্ত হবে গ্রুপপর্বের ম্যাচগুলো। ১৬ আগস্ট হবে দুটি সেমিফাইনাল। আর ১৮ তারিখ হবে ফাইনাল ও তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচ।
×