ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুদের চাপে ঋণগ্রহীতার আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ০৬:৫৭, ৫ আগস্ট ২০১৮

সুদের চাপে ঋণগ্রহীতার আত্মহত্যা

স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী ॥ এক নারীসহ দুই দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চড়া সুদে ৩০ হাজার টাকার ঋণ নিয়ে ৪৫ হাজার টাকা ফেরত দেয়ার পরও আরও সুদের টাকার দাবির চাপ সহ্য করতে না পেরে আব্দুল আজিজ (৪৮) নামের এক ভ্যানচালক বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নে ছাতনাই গ্রামে শুক্রবার সন্ধ্যায় এই ঘটনায় পুলিশ ওই ভ্যান চালকের মরদেহ উদ্ধার করে শনিবার জেলার মর্গে লাশের ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে। নিহত ভ্যানচালক উক্ত গ্রামের মৃত আহম্মদ আলীর ছেলে। তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষ দাদন ব্যবসায়ী দুইজনকে গ্রেফতার দাবি করেছে। জানা গেছে ভ্যানচালক আব্দুল আজিজ গত আট মাস আগে একই উপজেলার পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের মধ্যছাতনাই গ্রামের সহির উদ্দিনের স্ত্রী দাদন ব্যবসায়ী সালেহা বেগমের (৩৫) কাছ থেকে ২০ হাজার ও একই গ্রামের অপর দাদন ব্যবসায়ী ইয়াছিন আলী ছেলে হাবিবুল্লাহ (৩৪) কাছ থেকে ১০ হাজারসহ মোট ৩০ হাজার টাকা চড়া সুদে ঋণ নিয়ে চার্জার ভ্যানগাড়ি ক্রয় করে। ইতোমধ্যে দাদনের মূল টাকা ফেরত ও ওই টাকা সুদ বাবদ সালেহাকে ৩০ হাজার ও হাবিবুল্লাহকে ১৫ হাজার, মোট তাদের ৪৫ হাজার টাকা বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু ওই দুই দাদন ব্যবসায়ী, ভ্যান চালক আব্দুল আজিজের কাছে আরও সুদের টাকা দাবি করে। কিন্তু ভ্যান চালক আব্দুল আজিজ ওই টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে শুক্রবার দুপুরে দাদন ব্যবসায়ী সালেহা বেগম ও হাবিবুল্লাহ দু’জন মিলে পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাবুল ইসলামকে নিয়ে হাজির হয় ভ্যানচালক আব্দুল আজিজের বাড়িতে। তারা সুদের আরও ১০ হাজার টাকা প্রদানের জন্য ভ্যান চালক আব্দুল আজিজকে প্রচ-ভাবে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। এমনকি টাকা দিতে না পাড়লে তারা একটি ৩শ টাকার স্ট্যাম্পে ভ্যানচালক আব্দুল আজিজের বাড়ির সঙ্গে লাগানো সুপারি বাগানের ৮ শতক জমি লিখে নেয়ার চেষ্টা চালায়। এক পর্যায় ভ্যানচালক আব্দুল আজিজ ৫ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়ে ৭ দিন সময় চায়। কিন্তু নাছোরবান্দা দুই দাদন ব্যবসায়ী ৫ হাজার টাকা নিতে রাজি নয়। তারা ওই সুপারি বাগানটি লিখে দেয়ার জন্য পুনরায় চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে দাদন ব্যবসায়ী সালেহা বেগম চিৎকার করে বলতে থাকে টাকা দিবি না। আজ তোর (ভ্যানচালক আব্দুল আজিজ) বাড়িতে সারা রাত থাকব। পরের দিন থানায় গিয়ে তোর বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করব। ঘটনাটি দুপুর হতে বিকেল গড়িয়ে গেলে ভ্যানচালক আব্দুল আজিজ দাদন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে থাকা ৩০০ টাকার সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করেই ঘরে থাকা কীটনাশক পান করে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তাৎক্ষণিকভাবে উক্ত দুই দাদন ব্যবসায়ী ও ইউপি সদস্য পালিয়ে যায়। এলাকাবাসী ও পরিবারের লোকজন ভ্যানচালক আব্দুল আজিজকে বাঁচানোর চেষ্টায় ডিমলা হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে সন্ধ্যায় তার মৃত্যু হয়। তারা মরদেহ বাড়ি ফিরে নিলেও পুলিশ খবর পেয়ে রাতে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নেয় এবং শনিবার দুপুরে জেলার মর্গে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে। এ বিষয়ে ভ্যানচালক আব্দুর আজিজের স্ত্রী হাফিজা বেগম কান্নাবিজরিত কণ্ঠে তার স্বামীর মৃত্যুর জন্য উক্ত দুই দাদন ব্যবসায়ীকে দায়ি করে সাংবাদিকদের জানায় ৭ মাস আগে তার স্বামী চার্জার ভ্যান ক্রয়ের জন্য সুদের উপর সালেহার নিকট ২০ হাজার ও হাবিবুল্লাহ নিকট ১০ হাজার টাকা নিয়েছিল। ইতোমধ্যে সুদ ও আসল মিলে তাদের ৪৫ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছে। দাদন ব্যবসায়ী হাবিবুল্লাহ সুপারি বাগানে ৮ শতক জমি দাবি করে। আবার সালেহা ধর্ষণ মামলার হুমকি দেয়। ফলে তার স্বামী বিষপানে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। আমি তাদের গ্রেফতার ও বিচার চাই।
×