অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সহজ শর্তের ঋণে বর্তমানে চার ধরনের সুদহার নির্দিষ্ট রয়েছে। তবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ ঋণে সর্বোচ্চ দুটি সুদহার নির্দিষ্ট করার প্রস্তাব করেছেন। প্রস্তাব অনুযায়ী, কৃষি ঋণ ও পুনঃঅর্থায়ন ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ এবং দুধ বা মাংস উৎপাদন ও আমদানি বিকল্প নির্দিষ্ট ফসল ভুট্টা, ডাল, তেলবীজ ও মসলা পণ্যের সুদহার ৫ শতাংশ হওয়া উচিত। গত মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশনায় এ প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। এ নির্দেশার বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ডাল, তেলবীজ, মসলা ও ভুট্টা চাষে ঋণের সুদহার ১ শতাংশ বাড়বে। বর্তমানে কৃষক পর্যায়ে এ সুদহার ৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চিঠি পাওয়ার পরই অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ এবং কৃষি ঋণ বিভাগ এ বিষয়ে কাজ করছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, অর্থমন্ত্রী মূলত সহজ শর্তের ঋণে দুটি সুদহার নির্দিষ্ট করার প্রস্তাব করেছেন। এর মধ্যে কৃষি ও পুনঃঅর্থায়ন ঋণের ক্ষেত্রে একটি হার এবং দুধ উৎপাদন, ভুট্টা, তেলবীজ ও মসলা পণ্যের জন্য আরেকটি হার। প্রথম দুটি ক্ষেত্রের সুদহার একই হওয়ায় এখানে কোন পরিবর্তন করতে হবে না। তবে দুধ উৎপাদন এবং ভুট্টা, তেলবীজ ও মসলা পণ্যের সুদহার বর্তমানে পৃথক রয়েছে। প্রথমটির সুদহার ৫ শতাংশ এবং দ্বিতীয়টির ৪ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী এ দুটির ক্ষেত্রে একটি সুদহার তথা ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন। তার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে হলে ভুট্টা, তেলবীজ ও মসলা পণ্যের সুদহার আগের চেয়ে ১ শতাংশ বাড়বে। এটা কতটা যৌক্তিক হবে সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি এবং কৃষি ঋণ বিভাগ কাজ করছে। ৩ জুলাই গবর্নরকে লেখা চিঠিতে অর্থমন্ত্রীর দাফতরিক নির্দেশনা তুলে ধরে বলা হয়, বর্তমানে বিভিন্ন হারে কতিপয় ক্ষেত্রে ঋণের সুদের হার নির্দিষ্ট আছে। কৃষি খাতে সুদের হার ৯ শতাংশ। একই হারে পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের অধীনে বিশেষ উদ্যোগের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়া হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে কতিপয় ফসল যেমনÑ ভুট্টা, মসলা ও তেলবীজের জন্য ৪ শতাংশ হারে সুদ দেয়া হয়। আবার দুধ উৎপাদন বা মাংসের জন্য ৫ শতাংশ হারে ঋণ দেয়া হয়। অর্থাৎ সহজ শর্তে চারটি হারে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ঋণ দেয়া হয়। তাই এগুলোকে খানিকটা যৌক্তিকীকরণের উদ্দেশ্যে দুটি সুদের হার নির্দিষ্ট করা যায়। ৯ শতাংশে কৃষি ঋণ বা কতিপয় খাতে বিনিয়েগের জন্য পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে ঋণ দেয়া যেতে পারে এবং অন্য ঋণ দুটি তথা কতিপয় ফল, ফসল এবং মাংস বা দুধের জন্য ৫ শতাংশ হারে ঋণ দেয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর মসলাজাতীয় বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ১০ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় হয়। তাই বৈদেশিক এ ব্যয় কমিয়ে ও দেশজ উৎপাদন বাড়াতে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে স্বল্প সুদের সহজ শর্তের এ ঋণ সুবিধা চালু করে সরকার। ব্যাংকগুলো কৃষক পর্যায়ে ৪ শতাংশ সুদে এ ঋণ বিতরণ করলেও সরকার ভর্তুকি হিসেবে ব্যাংকগুলোকে দেয় আরও ৬ শতাংশ। ফলে এ ধরনের ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের প্রকৃত সুদ আয় আসে ১০ শতাংশ। এর পরও রেয়াতি সুদের এ ঋণে কোন ব্যাংকের সুদ ক্ষতি হলে ক্ষতির অংশটি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সিএসআর হিসাবে দেখানোর সুযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ডাল, ভুট্টা, তেলবীজ ও মসলা পণ্যে ৯১ কোটি ৩২ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ হয়েছে। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৮১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সূত্র বলছে, অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে এসব পণ্য উৎপাদনে কৃষকের খরচ বাড়বে। তবে এখানে সরকারের ভর্তুকি ১ শতাংশ কমবে। আর ব্যাংকগুলোর আয় যা ছিল তাই থাকবে।