ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শহীদ শেখ কামাল স্মরণ বিনম্র চিত্তে

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৫ আগস্ট ২০১৮

শহীদ শেখ কামাল স্মরণ বিনম্র চিত্তে

আগে যদি জানতাম, তবে মন ফিরে চাইতাম- এই জ্বালা আর প্রাণে সয় না’ শিল্পীর এই গান ও কথামালা পোড়ামনে বারবার সেই স্মৃতিকে তীব্র বেদনাদায়ক করে তুলছে। জনশ্রুতি আছে, এই গানটি শহীদ শেখ কামালকে স্মরণ করেই রচিত ও সুরারোপ করা হয়েছিল। আমাদের কলেজ ও পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রজীবনে, এমনকি এখনও আমাদের এক যন্ত্রণাকাতর দিনে ফিরিয়ে নিয়ে যায় এই গানটি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের বর্বর ও নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে যেদিন হত্যা করা হয়, সেদিন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালও শাহাদৎবরণ করেন। আমাদের ছাত্র জীবনকালে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শন তথা মুজিববাদে নিরন্তর বিশ্বাসী ছাত্র যুবকদের মনে শহীদ শেখ কামালের রাজনীতি, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি মানস কত যে নিবিড়ভাবে প্রোথিত, তা শুধু আমরাই অনুধাবন করতে পারি। গোপালগঞ্জ জেলার পাটগাতি ইউনিয়নের এক নিসর্গ শোভিত গাঁয়ের নাম টুঙ্গিপাড়া। আজ এই গ্রামটি শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্ব পরিম-লে সুখ-দুঃখের ঐতিহাসিক তীর্থস্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এই গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন মহাকালের মহানায়ক স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৯ সালে ৫ আগস্ট এই টুঙ্গিপাড়ায় জন্মেছিলেন কিংবদন্তি তারুণ্যের প্রতিকৃত শহীদ শেখ কামাল। এটি বিপুলভাবে প্রচারিত যে, চট্টগ্রামের বার আউলিয়ার অন্যতম সুফি সাধক হযরত সুলতান বায়েজিদ বোস্তামীর (রঃ) দক্ষিণহস্তখ্যাত উঁচু মার্গের আধ্যাত্মিক পুরুষ হযরত শেখ বোরহান উদ্দিন এই শেখ পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। বঙ্গবন্ধুর পরম শ্রদ্ধেয় পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সাহারা খাতুনের অনুমতি সাপেক্ষে আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আতাতুর্কের ‘কামাল’ ও শেখ পরিবারের উপাধি সমন্বিত করে শেখ কামালের নামকরণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থে শেখ কামালকে নিয়ে তাঁর আবেগ উপস্থাপিত করেছেন এভাবে- ‘একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। এক সময় কামাল হাসিনাকে বলছে, ‘হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।’ আমি আর রেণু দু’জনই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, ‘আমি তো তোমারও আব্বা।’ কামাল আমার কাছে আসতে চাইত না। আজ গলা ধরে পড়ে রইল। বুঝতে পারলাম, এখন আর ও সহ্য করতে পারছে না। নিজের ছেলেও অনেক দিন না দেখলে ভুলে যায়।’ সত্যি বিষয়টি হলো এই জন্মের অল্প সময়ের মধ্যেই পিতার সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত ছিলেন অবুঝ শেখ কামাল। কারণ তাঁর জন্মের কয়েক মাসের ব্যবধানে বঙ্গবন্ধু আবার কারাবরণে চলে যান। আধ্যাত্মিকতার পরিক্রমায় সুফি দর্শনের আলোকে একদিকে ধার্মিকতা, অন্যদিকে অসাম্প্রদায়িকতা ও বিশ্বজনীন মানবতাবাদের ধারণায় পিতার মতো সমৃদ্ধ ছিলেন শেখ কামাল। হযরত শেখ আবদুল আওয়ালের (রঃ) অষ্টম ও নবম উত্তর পুরুষ ছিলেন যথাক্রমে বঙ্গবন্ধু ও শহীদ শেখ কামাল। ধারাবাহিকভাবে নৈসর্গিক গ্রাম্যজীবনের সহজ-সরলতা ও অন্যের মঙ্গল ভাবনাকে ঘিরে বঙ্গবন্ধু যেমন নিজের জীবন চরিত নির্মাণ করেছেন, জাতির জনকের সুযোগ্য তনয়া দেশরতœ শেখ হাসিনা ও শহীদ শেখ কামালসহ পরিবারের সকল সন্তানের ওপর এর প্রভাব ছিল অত্যন্ত জোরালো। এই জন্যই তো সকল মোহ-মায়া ত্যাগ করে পিতার আহ্বানে দেশের জনসাধারণের সঙ্গে একাত্ম হয়ে দেশমাতৃকার জন্য প্রাণ বিসর্জনের লক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সন্তান পরিচয়ে নয়, অন্যান্য সাধারণ মুক্তিযোদ্ধার মতো অপরিমেয় কষ্ট স্বীকার করে ট্রেনিং নিয়েছেন এবং দেশের ইতিহাসে যুগান্তকারী অধ্যায় সৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৭১ সালের ৯ অক্টোবর বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ৬১ জন কমিশনপ্রাপ্তের মধ্যে একজন অফিসার ছিলেন শহীদ শেখ কামাল। মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান কর্নেল ওসমানীর অধীনে এডিসির গুরু দায়িত্ব বহন করে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে নিজের অবস্থানকে অত্যন্ত সুদৃঢ় করেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শত্রুরা তাদের সেই অন্ধ ও কালিমাযুক্ত কুৎসিত চিন্তা-চেতনা ও প্রচারণা চালিয়ে গৌরবদীপ্ত মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে যেমন বিকৃত করার চেষ্টা করেছে, তা থেকে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যরাও কেউই রেহাই পাননি। শহীদ শেখ কামালের চরিত্র হরণের জন্য বহু বানোয়াট, মিথ্যা ও জঘন্য উদ্দেশ্যমূলক বিরূপ এমন কিছু প্রচার করে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা দীর্ঘদিন অব্যাহত ছিল। কিন্তু এটিই চরম সত্যি যে, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সামরিক জান্তা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে সম্পদ, অর্থ বা অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করেও বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে কোন প্রকার অপবাদ ন্যূনতমও প্রমাণ করতে পারেনি। জনশ্রুতি আছে প্রয়াত মেজর জেনারেল আমিন আহম্মদ চৌধুরীকে দিয়ে ৩২ নম্বর বাসভবনসহ ব্যাংক, বীমা ইত্যাদি সম্পর্কে যে সিজারলিস্ট করা হয়েছিল এবং তাতে যে বিবরণী ছিল তা যে কোন মধ্যবিত্ত পরিবারের অর্জিত সম্পদের মতোই। এর যদি কোন ব্যতিক্রম পেত, পরাজিত শত্রুরা এর অপপ্রচার যে চালিয়ে যেত তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। শহীদ শেখ কামাল শুধু বীর মুক্তিযোদ্ধা বা তরুণ রাজনীতিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান বিভাগের একজন কৃতী শিক্ষার্থী। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য পদে বঙ্গবন্ধু যাকে সমাসীন করেছিলেন, তৎকালীন সময়ে বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজের সর্বোচ্চ অভিভাবক অধ্যাপক আবুল ফজল ‘শেখ মুজিব- তাঁকে যেমন দেখেছি’ গ্রন্থে ‘শেখ কামাল : স্মৃতিচারণ’ অধ্যায়ে চমৎকার কিছু বিষয় উপস্থাপন করেছেন। সম্ভবত ১৯৬৬-৬৭ সালে দেশের খ্যাতিমান সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানটের বার্ষিক অনুষ্ঠান ছিল ঢাকার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট হলে। সমবেত সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য শিল্পীরা যখন অর্ধবৃত্তাকারে মঞ্চে আসন নিয়েছেন, সেই শিল্পীদের মাঝে দীর্ঘকায় হ্যাংলাদেহের যে ছেলেটি হাতে সেতার নিয়ে ঋজু হয়ে সূচনা সংগীতের অপেক্ষা করছিলেন তিনি ছিলেন শহীদ শেখ কামাল। মহীয়সী রমণী বেগম সুফিয়া কামাল অঙ্গুলি নির্দেশ করে অধ্যাপক সাহেবকে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন শেখ কামালকে। ১৯৭৪ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। অধ্যাপক আবুল ফজলের ভাষায় ঐদিন ঢাকায় ছাত্রলীগ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন তিনি। যে ছেলেটি অধ্যাপক স্যারকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা ও সম্ভ্রমের সঙ্গে বিমানবন্দরে বরণ করে তাঁর হ্যান্ডব্যাগটিও বিনয়ের সঙ্গে বহন করে বিমানবন্দর থেকে আসা-যাওয়ার পথে একা নিজে গাড়ি চালিয়ে স্যারের শুধু মন জয় করেননি, দেশের সর্বোচ্চ কর্ণধারের সন্তান হয়েও কোনভাবেই তার প্রকাশ না ঘটিয়ে স্যারের হৃদয়ে আবেগের এক গভীর রেখাপাত স্থাপন করেছেন। অধ্যাপক আবুল ফজল স্যার এটি যখন চিত্রিত করেছেন তাঁর গ্রন্থে, এই লেখাটি যিনিই পড়বেন তিনি শুধু আবেগতাড়িত হবেন না, অধিকন্তু চোখের জলে কী প্রগাঢ় অবনত চিত্তে শহীদ শেখ কামালের প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন তা সহজেই অনুমেয়। ক্রীড়া জগতের আধুনিক সংগঠকের গর্বিত ফসল আবাহনী ক্লাব। ফুটবল জগতের আধুনিকতা ও নান্দনিকতা দিয়ে ফুটবল খেলাকে বিশ্বমানের অবস্থানে নিয়ে গিয়ে কতটুকু উপভোগ্য বিনোদন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায় তার নিখাদ প্রমাণ দিয়েছেন শহীদ শেখ কামাল। তাঁর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সাক্ষাত মাত্র তিনবার। কথিত বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রীদের হাতে যখন চট্টগ্রাম কলেজ ও নগর ছাত্রলীগের কর্মী এবং নেতা হিসেবে মারাত্মক নিপীড়িত, নিগৃহীত ও আক্রান্ত হয়েছি বারবার, তখন সহযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে প্রায়ই ঢাকায় যেতাম। এরকম দু’দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিলে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়েছিল। সংখ্যায় মুজিববাদে বিশ্বাসী শিক্ষার্থীদের মিছিলগুলো অনেকটা পরিসরে ছোট হতো বিধায় দুই লাইনে সারি সারি দাঁড়িয়ে মিছিলকে বড় করে দেখানোর এক আকর্ষণীয় নেতৃত্বের অগ্রভাগে থাকতেন শহীদ শেখ কামাল। মাঝে মাঝে মিছিলের আগে-পরে-মাঝখানে এসে হাতে হাত ধরে মিছিলকে স্লোগানে স্লোগানে এগিয়ে নিয়ে যেতেন। সেই সুবাদে তাঁর হাত ধরে মিছিলে অংশগ্রহণ করার সুযোগ আমার হয়েছিল। এসএসসি ও এইচএসসিতে ভাল ফলাফলের কারণে মেধাবী ছাত্রের তালিকায় নাম উঠেছিল। সরাসরি নেতৃত্ব ও আশীর্বাদ পেয়েছি প্রয়াত নেতা এস এম ইউছুপ (মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, চট্টগ্রামের বরেণ্য নন্দিত ছাত্র-যুব-আওয়ামী লীগ নেতা), প্রয়াত নেতা জালাল উদ্দিন আহম্মদ (মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, চট্টগ্রাম কলেজের প্রাক্তন ভিপি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক), প্রয়াত নেতা কাজী এনামুল হক দানু (বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অসীম সাহসী ছাত্র-যুব-আওয়ামী লীগ নেতা) এবং চট্টগ্রাম কলেজের প্রাক্তন জিএস ও ভিপি বোরহান ভাইয়ের। ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ গঠন প্রক্রিয়া শুরুর পর বঙ্গবন্ধু একটি আত্মনির্ভরশীল জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী ঘোষণা করেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল দুর্নীতি দমন, ক্ষেতে-খামারে ও কলকারখানায় উৎপাদন বৃদ্ধি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা। ৬ জুন বঙ্গবন্ধু দেশের সকল রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী মহলকে ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ নামে এক ঐক্যবদ্ধ মঞ্চ তথা দল তৈরি করে তার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দিন তারিখ স্মরণে না থাকলেও উল্লিখিত দলের অধীনে সংগঠিতব্য সম্পূর্ণ নতুন কাঠামোয় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য প্রাণপ্রিয় নেতা প্রয়াত দানু ভাই আমাকে পরামর্শ দেন এবং এই ব্যাপারে শহীদ শেখ কামাল কর্তৃক আমাকে মনোনীত করার বিষয়টি অবহিত করেন। শ্রদ্ধেয় দানু ভাই তার সঙ্গে দেখা করার জন্য ঢাকায় যাওয়ার আদেশ দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় আমার সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত হয়ে আমাকে ছাত্রলীগের দায়িত্ব গ্রহণে মানসিক প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেন। সে সময় আরেক ছাত্রের নাম প্রচারিত হলেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে ভেবে আমাকে নিয়ে তাঁর ভাবনার কথা বলেন। এমন সাবলীল, দৃঢ়চেতা, আদর্শিক চেতনায় শাণিত নেতৃত্ব এবং মানুষকে কাছে টানার মোহনীয় শক্তির প্রকাশ আমার জীবনে দ্বিতীয়টি দেখিনি। এসব বাস্তবভিত্তিক সেই সময়কার জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ রাজনীতির কাঠামোর ইতিবাচক পরিবর্তন পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের পূর্বেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নিঃশেষ করে দিয়ে পরাজিত শত্রু, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র, লুম্পেন পুঁজিবাদী বিশ্বের আগ্রাসন বাংলাদেশ ও এর উন্নয়নকে এবং সঙ্গে সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে দেশকে পাল্টে দেয়ার এক গভীর চক্রান্তে লিপ্ত হয়। বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা ও কোমলমতি শিশু শেখ রাসেলসহ শহীদ শেখ কামালের প্রাণ বিসর্জন শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্ব ইতিহাসের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। ৫ আগস্ট জন্মগ্রহণ করে একই মাসের ১৫ তারিখ মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে বাংলার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন- এটিই প্রত্যাশিত। বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের শহীদানদের বেহেস্তের সমধিক মর্যাদায় তাঁদের আসীন করবেন, বিনম্র চিত্তে মহান স্রষ্টার কাছে এতটুকুই শেষ প্রার্থনা। লেখক : শিক্ষাবিদ, উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
×