ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নারীর অপুষ্টি

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৫ আগস্ট ২০১৮

নারীর অপুষ্টি

দেশের মোট জনসংখ্যার আড়াই কোটির বেশি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। নারীর পুষ্টিহীনতার চিত্র আরও ভয়াবহ। পুষ্টিহীন মানুষের মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী। শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণও অপুষ্টি। আমাদের দেশে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে, শাকসব্জি ও মাছ উৎপাদনে দেশের অবস্থান বিশ্বে ওপরের দিকে। তারপরও পুষ্টি পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। মাস তিনেক আগে জাতিসংঘের ‘খাদ্য ও কৃষি সংস্থা’ (এফএও), খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতি বিষয়ে ‘ফুড সিকিউরিটি নিউট্রিশনাল সার্ভিল্যান্স প্রোগ্রাম (এফএসএনএসপি) এর গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছিল। ২০১৭ সালে প্রকাশিত ‘এ্যান এ্যাসেসমেন্ট অন কাভারেজ অব বেসিক সোশ্যাল সার্ভিস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে দেখা গেছে- বাংলাদেশের দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং খাদ্যনিরাপত্তায় বেশ অগ্রগতি হয়েছে। তবে দেশের সার্বিক পুষ্টিচিত্র সন্তোষজনক নয়। দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু, কিশোরী ও নারী এখনও অপুষ্টিতে ভুগছে। ফলে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে খর্বতা ২৭ শতাংশ কমিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জন নিয়ে কিছুটা সংশয় তো রয়েছেই। পুষ্টি কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে, দেশে ৫ বছরের কমবয়সী শিশুরা এখনও উচ্চমাত্রার অপুষ্টিতে ভুগছে। এসব শিশুর মধ্যে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ খর্বতা, ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ কৃশতা এবং ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ কম ওজনসম্পন্ন। প্রাক-বিদ্যালয়ের শিশুরা ভিটামিন-এ ও জিংকের অভাব, নারীরা আয়োডিন স্বল্পতায় ভুগছে। শহরের বস্তি অঞ্চলে পুষ্টি পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক এবং গ্রামের পুষ্টি পরিস্থিতি খারাপ। বস্তির অর্ধেক শিশু খর্বকায়। খর্বতা যে হারে হ্রাস পাচ্ছে, তার গতি অত্যন্ত ধীর। দেশের পুষ্টি পরিস্থিতি উন্নয়নে এবং সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছরই আয়োজিত হয় জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ। গত এপ্রিলে এ বছর পুষ্টি সপ্তাহের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছিল ‘খাদ্যের কথা ভাবলে পুষ্টির কথাও ভাবুন’। শুক্রবার দেশের বিপুল সংখ্যক কিশোরীর অপুষ্টি ও রক্তস্বল্পতায় ভোগা সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে অবশ্য কিছুটা আশার বাণী শোনা গেছে। তিনি বলেছেন, দেশের মোট জনসংখ্যার বিশাল অংশ কিশোর-কিশোরী। তাদের স্বাস্থ্যসেবার সার্বিক উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন। তবে শুধু তাদের স্বাস্থ্য সমস্যার দিকটি বিবেচনা করলেই হবে না, অন্যান্য সমস্যার বিষয়টিও সমাধানের বিবেচনায় আনতে হবে। সঠিক পুষ্টি পেতে হলে কী ধরনের খাদ্য গ্রহণ করতে হবে, এ সম্পর্কে সচেতন হলেই পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। এ জন্য খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না। গ্রামের একটি দরিদ্র পরিবারও কিন্তু ঘরের আশপাশে বা উঠোনে শাক-সবজির গাছ লাগাতে পারে এবং হাঁস-মুরগি পালন করতে পারে। শহরের বস্তি এলাকাতেও বস্তায় বা মাটির পাত্রে শাক-সবজির গাছ লাগানো এবং খাঁচায় মুরগি পালন সম্ভব। এ থেকে পরিবারের সদস্যদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ হতে পারে, সে সঙ্গে কিছুটা বাড়তি রোজগারও সম্ভব। দামী ফলের পরিবর্তে আমাদের দেশী ফল এবং শাক-সবজি রয়েছে। যেমন- কলা, আমড়া, আমলকী, পেয়ারা, কুল, জাম্বুরা, জলপাই, কামরাঙ্গা, কচুশাক, লালশাক, কাঁচকলা ইত্যাদি ফল ও শাক-সবজি খেলে ভিটামিনের চাহিদা পূরণ করা যায়। এগুলো দামেও সস্তা। পরিবারের বাবা-মা, ভাই-বোন সবাই একসঙ্গে খেতে বসা এবং সবার মধ্যে খাদ্যের সুষম বণ্টন খুবই জরুরী। এতে মেয়েশিশু ও নারী বৈষম্যের শিকার হবে না। গর্ভবতী মাকে একটু বেশি পুষ্টিকর খাদ্য দিতে হবে। দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকে মায়ের দুধ দিতে হবে। আর স্তন্যদানকারী মাকেও পুষ্টিকর খাদ্য দিতে হবে। অপুষ্টির হাত থেকে আমাদের মুক্তি পেতেই হবে। না হলে স্বাস্থ্যবান ভবিষ্যত প্রজন্ম সম্ভব হবে না। এজন্য সচেতনতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই।
×