ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মুদ্রানীতি

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৫ আগস্ট ২০১৮

মুদ্রানীতি

ঘোষিত নয়া মুদ্রানীতি নিয়ে আশাবাদ যেমন তৈরি হয়েছে, তেমনি লক্ষ্যপূরণ নিয়ে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাবও রয়েছে। নির্বাচনের বছরের এই সময় ঘোষিত মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ মনে করছে, এই নীতিতে পুঁজিবাজারের প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের সমর্থনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সম্প্রসারণ তথা সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। কর্পোরেট গ্রাহক ও প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে আরও গ্রহণযোগ্য এবং বিনিয়োগে আকৃষ্ট করবে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই বলছে, ব্যাংকের পরিচালন ব্যয় হ্রাস, আমানত ও ঋণ সুদহারের ব্যবধান, সরকারী সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ও ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার যৌক্তিকীকরণসহ যে সংস্কারমূলক প্রস্তাবের কথাগুলো মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, তা ইতিবাচক পদক্ষেপ। ঘোষিত মুদ্রানীতিতে দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর মতো সামষ্টিক লক্ষ্যমাত্রাসমূহ বিবেচনায় রাখা হয়েছে। বৈশ্বিক, অভ্যন্তরীণ ও সামষ্টিক অর্থনীতিকে বিবেচনায় রেখেই এই নীতি প্রণীত হয়েছে। এ সময় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটলে, তা সমন্বয় করা যাবে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে। এতেও মূল্যস্ফীতি চাপে পড়বে। এ জন্য মূল্যস্ফীতির উর্ধগতি নিয়ন্ত্রণ, তারল্য সঙ্কট নিরসন, ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নিতে হবে কঠোর পদক্ষেপ। মুদ্রাস্ফীতির মূল লক্ষ্যই হলো ব্যাপক মুদ্রা বা ব্যাংকের সব চলতি এবং সঞ্চয়ী আমানতের নিয়ন্ত্রণ। বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে বিপুলসংখ্যক দরিদ্র মানুষের বাস, সেখানে খাদ্যদ্রব্য ও প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবছর দুবার মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একবার বছরের শুরুতে। আরেকবার বছরের মাঝামাঝিতে। সাধারণত মুদ্রার গতিবিধি প্রকরণ করে এই নীতি। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বড় কোন পরিবর্তন আসেনি। জুলাই-ডিসেম্বরের জন্য ঘোষিত এ মুদ্রানীতিতে আগের ছয় মাসের মতোই বেসরকারী খাতের ঋণপ্রবাহ ঠিক রাখা হয়েছে। যেহেতু নির্বাচনী বছর, তাই উন্নয়নমূলক কর্মকা- বাস্তবায়নের জন্য সরকারের অর্থের যোগান বাড়ানো হচ্ছে। পূর্বের ধারাবাহিকতায় প্রবৃদ্ধিবান্ধব এবং সংযত ধরনের মুদ্রানীতি রাখা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ ঋণের যোগান বাড়ানোর যে কথা বলা হয়েছে, তা হবে সরকারী ঋণ বাড়িয়ে। অর্থাৎ আগামী ছয় মাস ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিতে পারবেন বেশি। আগের মুদ্রানীতিতে সরকারের ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল আট দশমিক ছয় শতাংশ। তা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ দশমিক চার শতাংশ। তবে বেসরকারী খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক আট শতাংশই পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। বিগত বছরে এক অঙ্কে নেমে আসা ব্যাপক মুদ্রার প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরে ১২ শতাংশে প্রাক্কলন করা হয়েছে। তবে এ প্রবৃদ্ধির অর্জন নির্ভর করবে প্রধানত বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের চলতি হিসাবে ঘাটতি সহনীয় মাত্রায় বজায় রাখার ওপর। বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্যের ঘাটতি কমিয়ে আনতে রফতানি ও প্রবাসী আয় বৈধ চ্যানেলে দেশে আসার কার্যক্রম জোরদারের সঙ্গে জড়িত বৈদেশিক বিনিয়োগ ও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আকর্ষণ কার্যক্রম সহায়তা প্রদানের ওপর। অবশ্য গত অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ব্যাংকগুলোতে সরকারী সংস্থার আমানতের ওপর সুদহার কমানোর সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এখন পর্যন্ত ব্যাংক বাজারে সুদহার আগের মতোই নেমে এসেছে। বিগত অর্থবছরের মুদ্রানীতির দুটি মূল লক্ষ্যের একটি মোট দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধির ৭ দশমিক চার শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। অপরটি মূল্যস্ফীতি সাড়ে পাঁচ শতাংশে পরিমিতি রাখা। ডিসেম্বরে দেশে সাধারণ নির্বাচন। সাধারণত নির্বাচনের আগে টাকার প্রবাহ বেড়ে যায়। আর তা বেড়ে গেলে মূল্যস্ফীতিও বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কঠোর হওয়ার কোন বিকল্প নেই।
×