ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু ছিলেন সাহিত্য সচেতন একজন মানুষ

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৫ আগস্ট ২০১৮

বঙ্গবন্ধু ছিলেন সাহিত্য সচেতন একজন মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাঙালীর অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি চেতনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মর্মে স্থান পেয়েছিল তাঁর জীবনাভিজ্ঞতা থেকে। তিনি যে গ্রামীণ সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছিলেন সেখানে অসাম্প্রদায়িকতা ছিল সমাজধর্মের অংশী। হিন্দু-মুসলমানের মিলিত সংস্কৃতির সঙ্গে গোপালগঞ্জের আরেক বিশিষ্ট উপাদান ছিল স্থানীয় খ্রীস্টান জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা। অনুমান করা যায় অসাম্প্রদায়িকতা ও স্বাদেশিকতার দীক্ষা দুই বঙ্গবন্ধু লাভ করেছিলেন বাল্য ও কৈশোরে বাংলার জল-মাটি-মানুষের সম্পৃক্ততায়। তাঁর পরবর্তী জীবনধারায় আমরা এর অনন্য প্রকাশ দেখি। হাজার বছরের ধারাবাহিকতার মিলনে-মিশ্রণে যে বাঙালী সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তাঁর বাস্তব রূপ শেখ মুজিব নানাভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন, আত্মস্থ করেছেন এর শক্তিময়তা। বাঙালী সংস্কৃতির যে স্বকীয়তা ও বৈশিষ্ট্য নিয়ে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা, যার রূপকার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেই ইতিহাসের শিক্ষা নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম ও মহৎ আত্মদান আমাদের অনিঃশেষ প্রেরণার উৎস। ‘বঙ্গবন্ধু ও বাঙালীর শিক্ষা-সংস্কৃতির স্বকীয়তা এবং বিকাশ’ শীর্ষক সেমিনারের মূল প্রবন্ধে এসব কথা বলেন প্রাবন্ধিক মফিদুল হক। প্রাবন্ধিকের আলোচনায় উঠে আসে জাতীয় সঙ্গীতের প্রতি বঙ্গবন্ধুর তীব্র অনুরাগের কথা। বলেন, ১৯৫৪ সালের এপ্রিলে কার্জন হলের সাহিত্য সম্মেলনে সঙ্গীতানুষ্ঠানের সময় শেখ মুজিব ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি গাইবার জন্য অনুরোধ করেছিলেন সন্্জীদা খাতুনকে। এ সবই বহন করে প্রতীকী ব্যঞ্জনা, বাস্তবের সঙ্গে যা নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। এরই ধারাবাহিকতায় অগ্রসর হয় শেখ মুজিবের আন্দোলন, তিনি বাঙালী জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন পাকিস্তানী সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে’ ধর্মান্ধতা ও সাম্প্রদায়িকতার নানা ষড়যন্ত্রজাল রুখে দাঁড়ান। শনিবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। জাদুঘরের মাসব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন জাদুঘরের মহাপরিচালক আব্দুল মান্নান ইলিয়াস। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বাঙালীর সংস্কৃতি অন্য সকলের থেকে আলাদা। হাজার বছর ধরে এই ভূখ-ে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করছে। এ ভূখ-ের মানুষ ছিল অসাম্প্রদায়িক কিন্তু কিছু কুচক্রী মানুষ তাদের নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। তাদের সাফল্য আসেনি শুধু এদেশের মানুষের অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার কারণে। স্বাধীনতার পর দেশের দুরবস্থার সময় বঙ্গবন্ধু যে চিন্তা করেছিলেন তা ছিল অকল্পনীয়। তিনি ভেবেছিলেন চারুশিল্পী-কারুশিল্পীদের বিষয়ে। রবীন্দ্র ও নজরুলের প্রতি ছিল তার বিশেষ অনুরাগ। তিনি ছিলেন সাহিত্য সচেতন একজন মানুষ। সাহিত্যের বই পাওয়া যায় তার সঙ্গে। মোঃ ওয়াদিুজ্জামান বলেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই আক্রমণ আসে বাংলার শিক্ষা-সংস্কৃতির ওপর। এ সময় বাঙালীরা সর্বদা প্রতিবাদ করেছে এবং এতে সর্বদা নেতৃত্বে দেখা গিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনী ভাষণে তিনি শিক্ষা খাতে পুঁজি বিনিয়োগ করতে বলেন। সে সময় এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি পাকিস্তান সরকারের অবহেলা তিনি দেখিয়ে দেন। তিনি শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর কথাও বলেন এ ভাষণে। তিনি আইনের দ্বারা সব বালক-বালিকার প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেন। আমাদের সংস্কৃতি আত্মত্যাগের সংস্কৃতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনে আমরা তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ দেখতে পাই। তিনি সর্বদা আত্মত্যাগ করেছেন এবং এ সময় সর্বদা তাকে সমর্থন করেছেন বঙ্গমাতা। গোলাম কুদ্দুছ বলেন, বাঙালী জাতির গোড়া হচ্ছে এর সংস্কৃতি, আর বাংলা সংস্কৃতির মূলে রয়েছে ভাষা। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য বঙ্গবন্ধু প্রথম স্বাধীন দেশে কারাবরণ করেন। যুক্তফ্রন্টের সরকারের মন্ত্রী থাকাকালীন তিনি ভাষা আন্দোলনের ২১ দফার কাজ এগিয়ে নেন। এ সময় ‘বঙ্গ সংস্কৃতির অগ্রদূত’ উপাধি পান বঙ্গবন্ধু। স্বাধীন বাংলাদেশের শিল্প সংস্কৃতির প্রায় সবকিছুই বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে শুরু হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর চারুশিল্পের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা ছিল। জলরঙে বাংলার প্রকৃতি ॥ তিন শতাধিক পথশিশুর সাহায্যার্থে আঁকা হলো ছবি। চিত্রিত হলো নিসর্গের নানা রূপ। জল রং আর্ট ক্যাম্পের আয়োজনে শনিবার দিনভর অনুষ্ঠিত হলো ‘জলরঙে বাংলার প্রকৃতি’ শীর্ষক আর্ট ক্যাম্প। সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত নিমতলীর এশিয়াটিক সোসাইটি আর্ট গ্যালারিতে ছবি এঁকেছেন একঝাঁক চিত্রকর। নবীন-প্রবীণ ৩২ শিল্পীর আঁকা চিত্রকর্মগুলোর বিক্রিত অর্থ ব্যয় করা হবে পথশিশুদের কল্যাণে। প্রবীণ শিল্পীদের মধ্যে আর্ট ক্যাম্পে অংশ নেন সমরজিৎ রায় চৌধুরী, রঞ্জিত দাশ, আশরাফুল আলম পপলু, আনিসুজ্জামান আনিস, আজমির হোসেন, আনিসুর রহমান, কামালউদ্দিন, শাহানুর মামুন ও সোহাগ পারভেজ। নবীন শিল্পীদের মধ্যে অংশ নেন আলাউদ্দিন ফারিসা মাহমুদ, ফৌজিয়া শবনম, লোকমান রিয়াদ, আহসান আহমেদ, তৌফিক হোসেন, তামান্না লিজা, সালমা শিরিন চৌধুরী, হামিম সজল, আওয়াল-এ-আজম দীব্য আলো প্রমুখ।
×