ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিষ্টি ঘ্রাণের দোলনচাঁপা

বৃষ্টির জলে ধোয়া শুভ্র সতেজ বুনোফুল

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ৫ আগস্ট ২০১৮

বৃষ্টির জলে ধোয়া শুভ্র সতেজ বুনোফুল

মোরসালিন মিজান ॥ দোলনচাঁপার দিন এসেছে। শ্রাবণধারায় ধোয়া ফুলটি শুভ্র। সতেজ। দেখে মন ভরে যায়। স্নিগ্ধ একটা অনুভূতি হয়। আর যে ঘ্রাণ, সে তো অবাক করা। অনেক দূর থেকে ভেসে আসে। আশ্চর্য মিষ্টি ঘ্রাণে মুগ্ধ সবাই। গত বেশ কয়েকদিন ধরেই ফুটছে দোলনচাঁপা। বিকেলে বা সন্ধ্যায় ফোটে। তার পরপরই দোকানে চলে আসতে থাকে। এখন প্রায় সব ফুলের দোকানেই আছে। ঢাকার রাস্তায় নামলেও খুব চোখে পড়ে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা দোলনচাঁপা হাতে ঘুরে বেড়ায়। হাসতে হাসতে খেলতে খেলতে বিক্রি করে। রাজধানী শহরের প্রতি প্রান্তে ওরা ছড়িয়ে দেয় দোলনচাঁপার ঘ্রাণ। ফুলটি যে ফুটেছে, স্মরণ করিয়ে দেয়। এভাবে শহর ঢাকা দোলনচাঁপার হয়ে উঠেছে। বাড়ি ফেরার সময় অনেকেই দু’এক গুচ্ছ কিনে কোলের ওপর রেখে দেন। পরে গৃহকোণে সাজিয়ে রাখেন। একগুচ্ছ দোলনচাঁপা জল দিয়ে রেখে দেয়া গেলে ঘরের পরিবেশটাই বদলে যায়। আরও বেশি আপন আপন লাগে। মায়ার মনে হয়। দোলনচাঁপায় মুগ্ধ রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন: দোলে দোলে দোলে প্রেমের দোলনচাঁপা হৃদয়-আকাশে...। নজরুল নিজের মতো করে ফুলটির বর্ণনাও দিয়েছেন। কবির ভাষায়Ñ যেন দেবকুমারীর শুভ্র হাসি, ফুল হয়ে দোলে ধরায় আসি/ আরতির মৃদুজ্যোতি প্রদীপ কলি দোলে, যেন দেউল আঙিনাতে...। নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা মতে, দোলনচাঁপা মূলত বুনো ফুল। আদিনিবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। ভারতীয় প্রজাতির ফুল বহুকাল ধরে বাংলাদেশে আছে। এর প্রায় ৪০টির মতো প্রজাতি। কোনটির রং হলদেটে। কোনটি আবার লাল। তবে প্রধানত সাদা রঙের হয়। পুরোপুরি ফুটলে পাপড়িগুলোকে প্রজাপতির ডানার মতো মনে হয়। ফুলের গায়ে হাওয়া লাগলে সাদা প্রজাপতিরা নড়ে চড়ে ওঠে। এ কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফুলটিকে বাটারফ্লাই জিঞ্জার লিলি বলা হয়। তিনি জানান, দোলনচাঁপা গাছ ৬০ থেকে ৭০ সেমি উঁচু হয়। কা-ের পাশে কয়েকটি লম্বা পাতা থাকে। দোলনচাঁপার পাতা লেন্স আকৃতির। লম্বায় আট থেকে চব্বিশ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে। চওড়ায় হয় দুই থেকে পাঁচ ইঞ্চি। বর্তমানে ফুলটির ভাল চাষ হয়। ফুলচাষীরা মৌসুমি ফুল হিসেবে দোলনচাঁপার চাষ করে থাকেন। গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু করে বসন্ত পর্যন্ত গাছের ওপরের অংশে ৬ থেকে ১২ ইঞ্চি পুষ্পমঞ্জরি দেখা দেয়। দোলনচাঁপা গাছ দেখতে অনেকটা আদা বা হলুদ গাছের মতো। ফুল ফোটা শেষ হলে কা- শুকিয়ে যায়। তবে গোড়া থেকে আবার নতুন কা- জন্ম নেয়। সূর্যের আলো সরাসরি পড়ে না এমন জায়গায় ভাল জন্মে। তবে এত সুন্দর, এত সুঘ্রাণ যে ফুলের সেটি বেশি সময় থাকে না। ঝরে যায়। সূর্যের সঙ্গে আড়ি। তাই সতেজ অবস্থায় পেতে হলে বিকেলে বা সন্ধ্যায় সংগ্রহ করতে হয়।
×