ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকায় ছাত্রীরা

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৫ আগস্ট ২০১৮

নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকায় ছাত্রীরা

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ ‘শীঘ্রই আমাদের নয় দফা দাবির বাস্তবায়ন দেখতে চাই। আর তা না হলে আমাদের এই আন্দোলন চলতেই থাকবে। মৌখিক আশ্বাসে আমরা আন্দোলন থেকে দূরে থাকব না।’ ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ড্যাফোডিল কলেজের এক ছাত্রী একথাগুলো বলছিলেন। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করাসহ নয় দফা দাবি আদায়ে রাজপথে নেমেছে শিক্ষার্থীরা। আর এ আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীরাও ভূমিকা পালন করছে। রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় দায়ীদের বিচার ও নয় দফা দাবিতে শনিবার অষ্টম দিনের মতো আন্দোলন করছে রাজধানীর প্রায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে শনিবার। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ছাত্রদের পাশাপাশি ছিল ছাত্রীদের সরব উপস্থিতি। সরকার, নিহত দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক, তাদের স্কুল কর্তৃপক্ষ এমনকি সাধারণ মানুষের অনুরোধ ও আহ্বান উপেক্ষা করে সড়কে অবস্থান বজায় রেখেছে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় ছাত্রীরা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আর কিছু নয় নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘মরতে নয় পড়তে চাই’, ‘আমার ভাই কবরে দোষী কেন বাহিরে’, ‘কারও রক্তচোখে রাজপথ ছাড়ব ভেব না’, ফিটনেসবিহীন গাড়ি মন্ত্রীর দশ তলা বাড়ি’সহ নানা স্লোগান লিখে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় প্রায় পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েকশ ছাত্রী। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এ্যান্ড কলেজ, শহীদ আনোয়ারা গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজ, আজিমপুর গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজ, ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ কলেজসহ আরও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কেউ কেউ প্ল্যাকার্ড লেখায় ব্যস্ত। কেউবা আবার গোল হয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছে এবং স্লোগান দিচ্ছে। কেউ যানবাহন তদারকি করছে। এমনই চিত্র চোখে পড়ল মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর ঘিরে। সকাল ১০টার পর তারা গোল চত্বরে হারুন মোল্লা ট্রাফিক কন্ট্রোল বক্সের সামনে অবস্থান নেয়। সড়কের চারপাশে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়ে গাড়ির কাগজপত্র ও গাড়ির লাইসেন্স যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু করে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যার আধিক্যও বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে হাজার হাজার শিক্ষার্থী সেখানে জড়ো হলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। প্ল্যাকার্ডে লেখায় ব্যস্ত এক ছাত্রী জনকণ্ঠকে জানায়, ‘আমরা আশ্বাস নিয়ে ঘরে ফিরব না।’ আরেক ছাত্রী জানান, ‘আমরা সব রাস্তা বন্ধ করিনি। রাস্তা খোলা আছে। সরকার চাইলে তাদের কাজ করতে পারে। আমরা তাদের সাহায্য করব।’ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নয় দফা দাবির আশ্বাস নয়, দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চায়। তাদের দাবি, বাস্তবায়নের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিতে হবে। অন্য কারও কথায় তারা আস্থা রাখতে পারছে না। প্ল্যাকার্ড হাতে আন্দোলনরত শহীদ আনোয়ারা গার্লস স্কুলের এক শিক্ষার্থী ফারিয়া জনকণ্ঠকে জানান, ‘আমরা শোনা কথায় কান দিব না। প্রধানমন্ত্রী নিজে যখন আমাদের উদ্দেশে দাবি বাস্তবায়নের বিষয়টি ঘোষণা দেবেন তখনই ঘরে ফিরব।’ এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই দাবি আদায়ের জন্য দাঁড়িয়েছি। আমাদের দাবির দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চাই।’ অন্যদিকে ভিকারুন নিসা নূন কলেজের এক শিক্ষার্থী জানায়, ‘১৭ কোটি মানুষের চাওয়া এটি। শুধু আমাদের নয়, সব সাধারণ মানুষের দাবি এক, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’। রাস্তায় বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো বন্ধ করতে হবে। আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আর কোন মায়ের বুক খালি আমরা দেখতে চাই না।’ আক্ষেপ করে আরেক ছাত্রী বলেন, ‘লাইসেন্স নেয়ার ব্যাপারে একটা দুর্নীতি আছে। বিআরটিতে স্বচ্ছতা নিয়ে আসতে হবে। সরকারের এসব দিকে তাকানো উচিত। গাড়ির চাঁদা কারা নিচ্ছে সেদিকে তাকানো উচিত। এগুলো বন্ধ হলে অনেক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।’ এদিকে মিরপুর ১৩ নম্বরে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ের কাছাকাছি শত শত শিক্ষার্থী কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করার দৃশ্য চোখে পড়ে। চালকের লাইসেন্স পরীক্ষাসহ যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করতে দেখা যায় তাদের। তবে আন্দোলনের মাঝেও ইমারজেন্সি গাড়ি ও এ্যাম্বুলেন্স গাড়িগুলোকে সুশৃঙ্খলভাবে যেতে দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন মোড় থেকে বিভিন্ন রোডে যাওয়ার মুখগুলোয় শিক্ষার্থীদেরকে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায়। মিরপুরের রাস্তা অবরোধ করার ফলে এদিন কোন দিক থেকে কোন ধরনের যানবহন চলাচল করতে পারেনি। ফলে প্রতিটি মোড়ে মোড়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মিরপুর গোলচক্কর দিয়ে যাতায়াত করা সব রোড ব্লক হয়ে গেছে। ফলে জ্যাম পড়ে মিরপুর ১২ নম্বর হয়ে কালশী পর্যন্ত ওদিকে কচুক্ষেত, এদিকে মিরপুর ২ ও ১ নম্বর পর্যন্ত। এছাড়া কাজীপাড়া শেওড়াপাড়া হয়ে মিরপুরগামী যাত্রীরাও পড়েছেন জ্যামে।
×